বুধবার, ২৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের পরিকল্পনা বিরোধীদের

মণিপুর নিয়ে উত্তপ্ত ভারত

মণিপুর ইস্যুতে সংসদ অচল করে রাখে বিরোধী দল। কিন্তু তাতে খুব সুবিধা হয়নি। তাই এবার মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার পরিকল্পনা করছে ভারতের বিরোধী জোট। বিরোধীদের দাবি ছিল, মণিপুর নিয়ে সংসদে বিতর্ক করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিবৃতি দিতে হবে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মণিপুর নিয়ে তারা বিতর্কে রাজি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি দেবেন না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিতর্কের জবাব দেবেন।

এ অবস্থায় গতকাল বিরোধী জোটের নেতারা বৈঠকে বসেন। সেখানে ঠিক হয়, সরকার একান্তই আলোচনায় রাজি না হলে শেষ পর্যন্ত অনাস্থা প্রস্তাব আনা হবে। অনাস্থা প্রস্তাব আনতে হলে প্রস্তাবের পক্ষে অন্তত ৫০ সংসদ সদস্যকে সমর্থন জানাতে হয়। মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল তেলেগু দেশম পার্টি। আলোচনার পর সেই প্রস্তাব ৩২৫-১২৬ ভোটে পরাস্ত হয়েছিল।

জানা গেছে, মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে বিরোধীদের দাবিমতো মুলতবি প্রস্তাব গ্রহণ করতে চাইছে না সরকার। মুলতবি প্রস্তাব গ্রহণ করা হলে বিরোধীরা সরকারকে তিরস্কার করতে পারে। সরকারের জবাবদিহি চাইতে পারে। সরকারকে নির্দিষ্ট প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে বাধ্য করতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পিঠে পাল্টা প্রশ্ন করতে পারে।

ভারতে কয়েকদিন আগেই নতুন বিরোধী জোট হয়েছে। এই জোটের আপাতত সদস্য ২৬টি দল। জোটের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’ জোট। যেখানে কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম, ডিএমকে, জেডিইউ, জেএমএম, এনসিপি, আরজেডি, ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিডিপির মতো দল রয়েছে। অবশ্য গতকাল এই জোট নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

একটি সূত্র জানিয়েছে, এত তড়িঘড়ি করে অনাস্থা প্রস্তাব আনার পরিকল্পনা হলো তাদের রাজনৈতিক কৌশলের অংশ। পাশাপাশি মোদি-শাহের কৌশল ভেস্তে দেওয়ার উদ্দেশ্য। আসলে বিরোধীরা সংসদ অচল করে রাখার পর মোদি-শাহ ঠিক করেছেন, এবার সরকার তাদের বিলগুলো হইচইয়ের মধ্যে পাস করিয়ে নেবে।

এবার সংসদে ৩১টি বিল পাস করাতে চায় সরকার। তার মধ্যে দিল্লি নিয়ে বিতর্কিত অর্ডিন্যান্সকে আইনে পরিণত করা সংক্রান্ত বিল আছে। যে অর্ডিন্যান্সে উচ্চপদস্থ আমলা নিয়োগের ক্ষমতা রাজ্য সরকারের হাত থেকে নিয়ে লেফটেন্যান্ট গভর্নর বা এলজিকে দেওয়া হবে।

আম আদমি পার্টির অনুরোধ মেনে ইন্ডিয়া জোটের সব বিরোধী দল ঠিক করেছে, এই অর্ডিন্যান্স সংক্রান্ত বিলের বিরুদ্ধে তারা একজোট হয়ে ভোট দেবে। এই বিল তারা সর্বশক্তি দিয়ে রোখার চেষ্টা করবে। লোকসভায় তারা সংখ্যালঘু। কিন্তু রাজ্যসভায় তারা এর বিরুদ্ধে একাট্টা হয়ে সরকারকে চাপে রাখতে চাইছে। এ অবস্থায় অনাস্থা প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে বিরোধী নেতারা এটাও জানেন, ভোটাভুটিতে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হবে না। তারপরও তারা সরকারের সমালোচনা করতে পারবেন। তারা প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করবেন এবং প্রধানমন্ত্রী তার উত্তর দিতে বাধ্য। 

বিরোধী দলের পরিকল্পনা সম্পর্কে সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী গতকাল জানান, এর আগে একবার বিরোধীরা মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল ২০১৮ সালে। পরের বছর লোকসভায় বিজেপির ২৮২ থেকে বেড়ে ৩০৩ হয়। এবার আনলে বিজেপির আসন ৩০৩ থেকে বেড়ে ৩৩৫ হবে।

সংসদেরে বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরুর দিনে সভাকক্ষের বাইরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে ৩৬ সেকেন্ড কথা বলেছিলেন। কিন্তু লোকসভা বা রাজ্যসভা কোথাও একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। গতকাল বিজেপি সংসদীয় দলের বৈঠকে তিনি ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেন।

রাজ্যসভায় বিরোধী নেতা ও কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে মন্তব্য করেন- ‘আমরা সবাই মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করছি। অথচ উনি সভা এড়িয়ে বাইরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিয়ে কথা বলছেন।’

সর্বশেষ খবর