শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

মহাকাশে নভোচারীর মৃত্যু হলে কী করা হয় সেই লাশের

মহাকাশে নভোচারীর মৃত্যু হলে কী করা হয় সেই লাশের

দীর্ঘদিন মহাকাশে মানুষ পাঠানোর প্রচেষ্টা বন্ধ ছিল। ২০২৫ সালের মধ্যে ফের চাঁদে যাচ্ছে নাসা। পরের দশকে মঙ্গলে পা রাখার পরিকল্পনাও করেছে তারা। ফলে, আগামী কয়েক দশকে মহাকাশে ঘনঘন যাবে মানুষ। আর এই সময়ে একটা প্রশ্ন ফিরে ফিরে জাগছে অনেকের মনে। ভাবছে নাসাও। মহাকাশেই কোনো মহাকাশচারীর মৃত্যু হলে কী হবে? শেষকৃত্যই বা হবে কোন উপায়ে? এ বিষয়ে একটি সমাধান বের করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।

নাসার প্রোটোকল অনুযায়ী, যদি কোনো মহাকাশচারী পৃথিবীর নিম্নকক্ষে মারা যান, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের আশপাশে মারা যান, তা হলে তার সঙ্গীরা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই একটি ক্যাপসুলে সেই মৃতদেহ পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিতে পারবেন। নাসার নিয়মাবলী অনুযায়ী, মৃতদেহ সংরক্ষণ প্রধান উদ্বেগ নয়। বরং বাকি মহাকাশচারীরা নিরাপদে ফিরছেন কি না, সেই বিষয়টিই অগ্রাধিকার পায় তাদের কাছে।

অন্য দিকে, ৪৮০ কোটি কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে যদি কোনো মহাকাশচারী মঙ্গল গ্রহ অভিযানে গিয়ে মারা যান তা হলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না।

নাসার নিয়মাবলী অনুযায়ী, সেই দেহ ফিরবে তখনই যখন দলের বাকি সদস্যরা পৃথিবীতে ফিরবেন। অর্থাৎ, মৃতদেহটি ফিরতে সময় লাগতে পারে কয়েক বছর। ততদিন পর্যন্ত মহাকাশে বিশেষভাবে সেই দেহটিকে সংরক্ষিত করা যেতে পারে। মহাকাশযানের অভ্যন্তরে স্থির তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা দেহটিকে বহুদিন পর্যন্ত পচনের হাত থেকে রক্ষা করবে।

এসব নিয়ম তখনই প্রযোজ্য হবে যখন কোনো মহাকাশচারী মহাকাশের মধ্যে স্বাভাবিক কারণে মারা যাবেন। কিন্তু কেউ যদি মহাকাশের জন্য তৈরি উপযুক্ত পোশাক অর্থাৎ ‘স্পেসস্যুট’ না পরার কারণে মারা যান, তা হলে? আসলে স্পেসস্যুট না পরে মহাকাশে পা দিলে মহাকাশচারী প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মারা যাবেন। মহাশূন্যে চাপ কমে যাওয়ার জন্য এবং অক্সিজেনের অনুপস্থিতির জন্য মহাকাশচারীর পক্ষে শ্বাস নেওয়া অসম্ভব হয়ে যাবে। ফুটতে থাকবে রক্ত এবং শরীরের অন্যান্য তরল। কোনো মহাকাশচারী যদি ‘স্পেসস্যুট’ ছাড়াই চাঁদে বা মঙ্গলে পা দেন, সে ক্ষেত্রেও একই পরিণতি হবে তার। কারণ চাঁদে প্রায় কোনো বায়ু নেই। যা আছে, তা-ও খুব সামান্য পরিমাণ। অন্যদিকে, মঙ্গল গ্রহের বায়ুম ল খুবই পাতলা। প্রায় কোনো অক্সিজেন নেই। ফলে দুই ক্ষেত্রেই নিশ্বাস নিতে না পেরে এবং রক্ত ফুটে মৃত্যু হবে মহাকাশচারীর। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ওই মহাকাশচারীর শেষকৃত্য কীভাবে হবে? নাসার নিয়ম অনুযায়ী, চাঁদ বা মঙ্গলপৃষ্ঠে কোনো মহাকাশচারীর মৃত্যু হলে তাকে পোড়ানো বা কবর দেওয়া যাবে না।

চাঁদ বা মঙ্গলে দেহ পোড়ানোর জন্য প্রচুর পরিমাণ শক্তি এবং জ্বালানির প্রয়োজন। কিন্তু মহাকাশচারীদের কাছে সীমিত জ্বালানি থাকার কারণে তা সম্ভব নয়। আবার মৃতদেহে থাকা ব্যাকটেরিয়া বা অনুজীব চাঁদ বা মঙ্গলের মাটি নষ্ট করতে পারে ভেবে, কবরও দেওয়া যাবে না। এর ফলে মৃত মহাকাশচারীর দলের বাকি সদস্যরা পৃথিবীতে ফিরে না আসা পর্যন্ত একটি বিশেষ ব্যাগে দেহটিকে সংরক্ষণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর