বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
চীন-ভারত সীমান্ত সমস্যা

ম্যারাথন সেনা বৈঠকেও সমাধান মিলল না

ম্যারাথন সেনা বৈঠকেও সমাধান মিলল না

পূর্ব লাদাখে গালওয়ানে ২০২০ সালে সংঘর্ষের পর অচলাবস্থায় চীন ও ভারতের সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক ঠিক করতে দফায় দফায় দুই দেশের সেনা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে দেশের নীতি নির্ধারকরা বৈঠকে বসেন। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। সর্বশেষ ভারত-চীন কর্পস কমান্ডার-পর্যায়ের ১৯তম রাউন্ডের বৈঠক বসে ১৩-১৪ আগস্ট। এবার সবাই আশা করেছিল ভারত-চীন সীমান্ত সমস্যা মিটে যাচ্ছে? কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হলো না।

ডেপসাং ও ডেমচকে এতদিন ধরে ভারতীয় বাহিনী যেসব এলাকায় টহলদারির কাজ চালিয়ে এসেছে, তা বহাল করার দাবি চীন মেনে নেয়নি। ফলে আলোচনায় কোনো সমাধান হয়নি। মঙ্গলবার রাতে দিল্লি ও বেইজিং থেকে একযোগে প্রচারিত যৌথ বিবৃতিতে আলোচনা সফল বলা হয়েছে। তবে সমাধানের কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। বরং দুই দেশই সামরিক ও কূটনৈতিক পরিসরে আলোচনার মধ্য দিয়ে সমস্যার দ্রুত সমাধানে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অর্থাৎ সামনে আরও আলোচনা হবে। সে পর্যন্ত দুই দেশই সীমান্তে শান্তি ও সংহতি রক্ষা করে চলবে।’

ভারত ও চীনের সেনারা পূর্ব লাদাখের সংঘর্ষ এলাকায় তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে মুখোমুখি অবস্থান করেছে। কিছু কিছু জায়গায় উত্তেজনা করেছে। সূত্রের খবর এখনো প্যাংগন লেক এলাকায় উত্তেজনা বজায় রয়েছে। আরও বেশ কিছু পোস্টে ভারত আর চীনা সেনাদের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।

উল্লেখ্য, পূর্ব লাদাখ সীমান্ত এতটাই উত্তেজনা প্রবণ ছিল যে গালওয়ান সংঘর্ষের পরে সেনাদের এয়ারলিফট করা হয়েছিল। সম্প্রতি সেনার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে গালওয়ানে ২০২০ সালে সংঘর্ষের পর চীনের মোকাবিলা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৬৮ হাজার সেনাকে এয়ারলিফট করে পাঠান হয়েছিল। দ্রুততার সঙ্গে লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণে রেখায় পাঠান হয়েছিল ৯০টি ট্যাঙ্ক। মোতায়েন করা হয়েছিল সু-৩০ এমকেআই এবং জাগুয়ার যুদ্ধবিমান। ভারতের প্রতিরক্ষা সূত্রে জানা গেছে, চীন চায় বর্তমান স্থিতাবস্থা ভারত মেনে নিক। ভারতের দাবি, চীন তিন বছর আগের অবস্থানে ফিরে যাক। সেই সময় দুই দেশ যেসব এলাকায় টহলদারি করত, সেই অধিকার ফিরে আসুক। একমাত্র তা হলেই উত্তেজনা প্রশমিত হবে। চীন এখন চাইছে, শান্তি চিরস্থায়ী করতে প্রধানত ভারতের জমিতে ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ সৃষ্টি করতে। ভারত তাতে সম্মত নয়। কারণ, সে ক্ষেত্রে সামরিক দিক থেকে ডেপসাং- ডেমচক এলাকায় চীনের আধিপত্য মেনে নিতে হয়।

চীনকে ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব বারবার বলেছে, ২০২০ সালে এপ্রিল-মে মাসে লাল ফৌজ একতরফাভাবে এলএসি লঙ্ঘন করেছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নত করার প্রধান শর্ত ২০২০ সালের পূর্ববর্তী অবস্থানে চীনকে ফিরে যেতে হবে। ভারতের অভিযোগ, ডেপসাংয়ে এলএসির ১৮ কিলোমিটার পর্যন্ত ভারতীয় বাহিনী টহলদারি করতে পারছে না চীনা ফৌজের প্রতিরোধের কারণে। গলওয়ান সংঘর্ষের পর প্যাংগং লেক, গোগরা-হট স্প্রিং, চুমুর ও গলওয়ান উপত্যকায় সেনা সরানোর পর ৩ থেকে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ‘বাফার জোন’ বা ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ তৈরি করা হয়েছে। ঠিক হয়েছে কোনো দেশই ওই এলাকায় টহলদারি করবে না।

উত্তরে কারাকারোম গিরিপথ থেকে শুরু করে পূর্ব লাদাখের চুমুর অঞ্চল পর্যন্ত মোট ৬৫টি এলাকার মধ্যে ২৬টিতে ভারতীয় জওয়ানেরা এখন টহলদারি করতে পারেন না। ভারতের কূটনৈতিক নেতৃত্ব এ পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক মানতে রাজি নয়। সে কথাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল বারবার চীনা নেতৃত্বকে বলে আসছেন। যদিও চীন নিরুত্তর। চুসুল-মলডো সীমান্তে দুই দেশের সেনা পর্যায়ের ১৯তম বৈঠক তার আরও একটা প্রমাণ।

সর্বশেষ খবর