শিরোনাম
বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

জম্মু-কাশ্মীরকে কবে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে

জানতে চাইলেন শীর্ষ আদালত

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

২০১৯ সালের ৫ আগস্ট সংসদে ঘোষণা দিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছিলেন, জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রের এ সিদ্ধান্তের ফলে বিশেষ মর্যাদা হারায় জম্মু-কাশ্মীর। এ ধারার অধীন ৩৫এ ধারায় ভারতীয় ভূখণ্ডে থেকেও জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দারা যে বিশেষ সুযোগসুবিধা ভোগ করতেন তা খারিজ হয়ে যায়। পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে ভেঙে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ নামে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা হয়। এ সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালতে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। ২ আগস্ট এমন একটি মামলার শুনানি শুরু হয়েছে শীর্ষ আদালতে। গতকাল ছিল তার শুনানি। এদিন শীর্ষ আদালত কেন্দ্রের কাছে নির্দিষ্ট করে জানতে চাইলেন জম্মু-কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কোনো সময়সীমা বা গতিপথ তৈরি করা হয়েছে কি না।

জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে কেন্দ্র এবং মামলাকারীদের বক্তব্য শুনছেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচুড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ। বিচারপতি চন্দ্রচুড় ছাড়াও সাংবিধানিক বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি সঞ্জয় কিসান কউল, বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি বি আর গাভাই ও বিচারপতি সূর্যকান্ত। কেন্দ্র এবং জম্মু-কাশ্মীর সরকারের হয়ে এ মামলায় সওয়াল করছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। এদিন তাকে উদ্দেশ করেই শীর্ষ আদালত জানতে চেয়েছেন, ‘আমরা বুঝতে পারি যে এগুলো জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়। তার পরও কোনো বাধ্যবাধকতা না রেখেই বলা হচ্ছে যে আপনি এবং অ্যাটর্নি জেনারেল জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা ফেরানো নিয়ে শীর্ষ স্তরের কাছে জানতে চাইতেই পারেন কোনো সময়সীমা আছে কি না বা কোনো রোডম্যাপ আছে কি না।’ একটি উদাহরণ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা যেমন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরির ইতিহাস দেখি- যেমন পাঞ্জাব থেকে ভেঙে চণ্ডীগড় আলাদা হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত সেটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলই রয়ে গেছে। এর পরও আরও কিছু কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি হয়। কিন্তু আপনি দ্রুততার সঙ্গে সেগুলোকে রাজ্যে পরিণত করতে পারেন না।’ প্রধান বিচারপতি জানতে চান, ‘জাতীয় সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে কেন্দ্র কেন একবারও বলল না যে জম্মু ও কাশ্মীরকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে রূপান্তরিত করা হয়েছে, চিরদিনের জন্য নয়। আগামী দিনে এটি ফের রাজ্যের মর্যাদা ফিরে পাবে। সেখানে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কেন্দ্র কি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এটিকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে গণ্য করতে পারে না? কারণ আমাদের এটা মনে রাখতে হবে যে, দেশ বেঁচে থাকলে তবেই আমরা বেঁচে থাকব, তা সেটা রাজ্যই হোক বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলই হোক।’ এর উত্তরে এদিন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আদালতকে জানান, ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার প্রক্রিয়াটি একটি ‘অস্থায়ী ব্যবস্থা’। জম্মু ও কাশ্মীরে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে কি না, এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর ৩১ আগস্ট কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নিয়ে ইতিবাচক বিবৃতি দিতে সক্ষম হবেন। যদিও ‘লাদাখ’ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলই থাকবে বলেও স্পষ্ট করে দেন তুষার মেহতা। ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের আগে উপত্যকার পরিস্থিতি তুলে ধরে মেহতা জানান, লাগাতার হরতাল, হামলার কারণে ব্যাংক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব পরিষেবাই বারবার বিঘ্নিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সেখানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে। যখন একে ফের রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে, তখন সরকার কীভাবে কাজ করবে, তরুণদের কীভাবে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনবে, কীভাবে কর্মসংস্থান হবে সে ব্যাপারে ইতোমধ্যে নীলনকশা করে রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর