বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিশ্ব নেতাদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত দিল্লি

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে শনিবার গ্রুপ অব ২০ (জি২০) শীর্ষ সম্মেলন শুরু হবে। ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে ভূ-রাজনীতির বিভিন্ন সংকট সমাধানের চেষ্টা করবেন এই জোটের নেতারা। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও শক্তিধর দেশের নেতারা অংশ নেবেন এ সম্মেলনে। ভারতে প্রথমবারের মতো জি২০ সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে। সম্মেলন উপলক্ষে নতুন রূপে সাজানো হয়েছে নয়াদিল্লিকে। নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ সম্মেলন উপলক্ষে দুুই দিন দিল্লিকে মূলত অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। জনসাধরণের চলাফেরা অনেকটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুক্রবারই সম্মেলনে অংশ নিতে ভারতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন। তবে ইতোমধ্যে চীন ও রাশিয়া জানিয়েছে তাদের প্রেসিডেন্ট যথাক্রমে শি জিন পিং ও ভøাদিমির পুতিন সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন না। তবে তাদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। তিন দিন ভারত ভরে উঠবে বিশ্ব নেতাদের পদভারে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এক প্রতিবেদনে শীর্ষ সম্মেলনে কোন কোন নেতা উপস্থিত থাকবেন তা তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনে কোন কোন বিষয়ে আলোচনা হবে তা-ও জানানো হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্মেলনে ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রভাব, জলবায়ু পরিবর্তন ও দারিদ্র্য বিমোচনে উন্নয়ন ব্যাংকের ভূমিকা নিয়ে তিনি আলোচনা করতে পারেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে একটি ফোনালাপে সম্মেলন অংশগ্রহণের কথা নিশ্চিত করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ না করায় তিনি হতাশ বলে উল্লেখ করেছেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঋষি সুনাকের ভারতে এটি প্রথম সরকারি সফর। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা উপস্থিত থাকবেন। জি৭-এর বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সমালোচনায় তিনি নেতৃত্ব দিতে পারেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিজ নয়াদিল্লি সফর করবেন। তার ভারত সফরটি ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনসহ তিন দেশ সফরের অংশ। উপস্থিত থাকবেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। তিনি মার্কিন বার্তা সংস্থা এপিকে বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান ক্ষেপণাস্ত্র উসকানি এবং পারমাণবিক হুমকির প্রতিক্রিয়া ও পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে তিনি আহ্বান জানাবেন।

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়া ও চীনের প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতির পরও ভারতে আসন্ন জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের গুরুত্ব রয়েছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ নয়াদিল্লিতে সম্মেলনে হাজির হবেন। মোদির সঙ্গে তিনি দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করবেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে আনুষ্ঠানিক কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। সম্মেলনে আরও উপস্থিত থাকবেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ ও নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু অংশগ্রহণ করতে পারবেন। যেসব রাষ্ট্রনেতার উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া যায়নি তাদের মধ্যে রয়েছেন, মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডোর, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

এবারের সম্মেলনে মূল বিষয়গুলো : জি২০ সম্মেলনের শুরুতে কোনো নির্দিষ্ট এজেন্ডার উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু চলতি বছরের থিমের ওপর ভিত্তি করে, এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’, ভারত একটি মূল সমস্যা হিসেবে এ বিষয়টির ওপর ফোকাস করেছে। হোয়াইট হাউসের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জি২০ অংশীদাররা বৈশ্বিক সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন যৌথ প্রচেষ্টার বিষয়ে আলোচনা করবে। যার মধ্যে রয়েছে বিশুদ্ধ শক্তিকে কাজে লাগানো, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই, ইউক্রেনে বিরুদ্ধে পুতিনের যুদ্ধের কারণে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক এবং সামাজিক প্রভাবগুলো হ্রাস করা, বিশ্বব্যাংকসহ বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর ক্ষমতা বৃদ্ধি, বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যসহ বিভিন্ন বিষয়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা।’

 

জি২০ কী

গ্রুপ অব টোয়েনটি ফিন্যানস মিনিস্টারস অ্যান্ড সেন্ট্রাল ব্যাংক গভর্নরস হলো বিশ্বের ২০টি দেশের অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সমন্বয়ে গঠিত একটি জোট বা গ্রুপ। ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক আর্থিক স্থিতিশীলতা উন্নয়ন সম্পর্কিত নীতি আলোচনার লক্ষ্য নিয়ে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি গঠনের উদ্দেশ্য হলো বৈশ্বিক অর্থনীতির মূল বিষয়গুলোর ওপর আলোচনার জন্য বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে একত্রিত করা। গত শতকের নব্বইয়ের দশকে গভীর অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছিল বিশ্বের অনেক দেশ।  জি২০ জোটের বর্তমান সদস্য আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৮০ শতাংশই এ জোটের দখলে। আর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশের সঙ্গে জড়িত জি২০ দেশগুলো।

জি২০ গঠনের শুরুর বছরগুলোতে শুধু সদস্য দেশগুলোর অর্থ বিভাগের প্রধানরাই সম্মেলনে যোগ দিতেন। তবে ২০০৮ সালে অর্থনৈতিক সংকটের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, প্রতি বছর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে জোটের সদস্যদেশগুলোর নেতারা অংশ নেবেন।

সর্বশেষ খবর