বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
বিবিসির প্রতিবেদন

এশিয়া-ইউরোপের নতুন করিডরের অর্থায়ন করবে কারা?

বিশ্বের কানেক্টিভিটি ও ‘টেঁকসই উন্নয়নে’র ক্ষেত্রে একটি নতুন দিশা দেখাবে

দিল্লিতে সদ্যসমাপ্ত জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের মধ্যেই ভারত থেকে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত একটি মেগা অর্থনৈতিক করিডরের কথা ঘোষণা করা হয়েছে, যা বিশ্বের ভূরাজনীতি ও অর্থনীতির দুনিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে অর্থায়ন নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। পরে প্রকল্পটির বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়েছে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকেও। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, এই করিডর পুরো বিশ্বের কানেক্টিভিটি ও ‘টেকসই উন্নয়নে’র ক্ষেত্রে একটি নতুন দিশা দেখাবে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরিভাবে এ করিডরের অংশ নয়। তার পরও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ প্রকল্পটি ঘোষণার সময় এটিকে ‘আ বিগ ডিল’ (একটা বিশাল ব্যাপার) বলে বর্ণনা করেছেন। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, এই করিডর পুরো বিশ্বের কানেক্টিভিটি ও ‘টেকসই উন্নয়নে’র ক্ষেত্রে একটি নতুন দিশা দেখাবে। দিল্লিতে এ প্রকল্পটির রূপরেখা ঘোষণার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনিসহ আরও বহু বিশ্ব নেতা উপস্থিত ছিলেন। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এক বাক্যে বলেছেন, চীনের উচ্চাকাক্সক্ষী ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ ইনিশিয়েটিভের একটি পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবেই এ করিডরটির পরিকল্পনা করা হয়েছে, আর সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্র এটি নিয়ে এতটা উৎসাহ দেখাচ্ছে।

‘ইন্ডিয়া-মিডল ইস্ট-ইউরোপ ইকোনমিক করিডর’ বা আইএমইসি নামে পরিচিত এ করিডরটি ভারতের পশ্চিম উপকূল (আরব সাগর) থেকে শুরু হয়ে প্রথমে সমুদ্রপথে আমিরাতের উপকূলে গিয়ে ভিড়বে। দুবাইয়ের জেবেল আলি বন্দর থেকে করিডরটি রেলপথে আমিরাত, সৌদি আরব, জর্ডান হয়ে ইসরায়েলের হাইফা বন্দর পর্যন্ত যাবে। তৃতীয় বা শেষ ধাপে এ করিডরটি হাইফা থেকে ভূমধ্যসাগরের বুক চিরে গ্রিস, ইতালি বা ফ্রান্সের বন্দরগুলোতে গিয়ে ভিড়বে। অর্থাৎ পুরো করিডরটি দক্ষিণ এশিয়া থেকে সরাসরি পশ্চিম ইউরোপ পর্যন্ত একটি নতুন বাণিজ্যিক রুট খুলে দেবে। আইএমইসিকে মূলত একটি ‘রেল ও শিপিং করিডর’ হিসেবে দেখা হলেও এই রুট বরাবর ইলেকট্রিসিটি কেবল, একটি হাইড্রোজেন পাইপলাইন ও হাইস্পিড ডেটা কেবলও বসানো হবে। অন্তত এ করিডর নিয়ে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনের প্রস্তুত করা একটি ডকুমেন্ট সে রকমই জানাচ্ছে। পুরো করিডরটিজুড়ে ব্যাপক অবকাঠামো নির্মাণের কথা জানানো হলেও কোনো দেশ, জোট কিংবা ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পে অর্থলগ্নি করবে কি না, সেটা এখনো কিছু স্পষ্ট করা হয়নি।

দিল্লিতে অর্থনীতিবিদ ও কানেক্টিভিটি বিশেষজ্ঞ প্রবীর দে অবশ্য মনে করেন, যেহেতু এই করিডরে অনেকটা অংশে ‘এক্সিসটিং অ্যাসেট’ বা বিদ্যমান স্থাপনাকেই ব্যবহার করা হবে, তাই একেবারে নতুন আকারে তৈরি করা বাণিজ্যিক করিডরের চেয়ে এটাতে তুলনামূলকভাবে কম খরচ হবে।

ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজের ফেলো তারা কার্থা আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গত বছর ‘আইটুইউটু’ (ভারত, ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও আমিরাতের বক) জোটের যৌথ বিবৃতিতেও এ ধরনের করিডরের একটি আভাস ছিল- আর সেখানে বেসরকারি লগ্নি টানার কথাও বলা হয়েছিল।

এ ছাড়া এই রেল-শিপিং করিডর বিশ্বের সবচেয়ে ধনী সাতটি দেশের জোট জি-সেভেনের ‘পার্টনারশিপ ফর গ্লোবাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্টের’ও অংশ। ফলে সামগ্রিকভাবে এর পেছনে জি-সেভেনের সমর্থন থাকবে বলেও ধরে নেওয়া হচ্ছে।

 

সর্বশেষ খবর