শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

লিবিয়ায় দুর্যোগ দুর্বিষহ করে তুলেছে গৃহযুদ্ধ

যতদূর চোখ যায় শুধুই ধ্বংসস্তূপ, ২০ হাজার মানুষ নিখোঁজ

লিবিয়ায় দুর্যোগ দুর্বিষহ করে তুলেছে গৃহযুদ্ধ

রাজনীতি, সন্ত্রাসসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত লিবিয়া দেশটায় যে গুটিকতক ধনী শহর আছে, তার মধ্যে অন্যতম ডারনা। অন্তত রবিবারের আগে পর্যন্ত তা-ই ছিল। এখন চিত্রই অনেকটা পাল্টে গেছে। ওই দিনের পর সেই রাস্তা, উঁচু ইমারতগুলোর অনেকটা অংশই আর নেই। ভূমধ্যসাগরীয় ঝড় ড্যানিয়েল সাজানো শহরটাকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছে। সুনামির মতো তীব্র আর বিশাল জলস্রোত বদলে দিয়েছে গোটা শহরের মানচিত্রকেই। অন্তত বন্যার আগে এবং পরের উপগ্রহচিত্র তা-ই বলছে। বিবিসি যে উপগ্রহচিত্র প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, বন্যার আগের ভূমধ্যসাগরের গাঢ় নীল জল রবিবারের পর রং বদলে হয়েছে ঘোলাটে সবুজ। শহরের মাঝ বরাবর বয়ে যাওয়া ওয়াদি ডারনা নদী দিয়েই সুনামির মতো জলস্রোত বয়ে গিয়ে মিশে ছিল সাগরে। সেই নদীর দু’পাশে ছিল ঘন জনবসতি। সে সব স্রেফ ধুয়েমুছে গিয়েছে। রুক্ষ দেশ হলেও বন্দর শহর ডারনায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল সবুজালি। সে সবের চিহ্ন নেই বন্যা পরবর্তী ডারনায়। বদলে চারপাশে শুধুই ঘোলাটে কাদা, জমা জল। ভেঙে গিয়েছে উপকূলকে বেড় দেওয়া রাস্তা।

ওই দুর্যোগে কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে এখনো কেউ জানেন না। তবে সরকারিভাবে বলা হচ্ছে অন্তত পাঁচ হাজার ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আসল সংখ্যা যার থেকে অনেক অনেক বেশি। লিবিয়ায় বন্যা এবং এর ফলে ভয়াবহতা অবশ্যই ঘটেছে। কিন্তু সেই বন্যার ভয়াবহতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা গৃহযুদ্ধ। গাদ্দাফি মারা যাওয়ার পর থেকে লিবিয়ায় যা শুরু হয়েছে। উপকূলবর্তী শহর ডেরনাতেই ৯০ থেকে এক লাখ মানুষ বসবাস করেন। মৃত্যুর সংখ্যা নিতে সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থা রেডক্রসের বিস্তর ফারাক রয়েছে। লিবিয়ায় রেডক্রসের প্রধান জানিয়েছেন, ‘এখনো পর্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছানোই সম্ভব হয়নি।’ তাদের বক্তব্য, কেবল ডেরনাতেই অন্তত ৩০ হাজার মানুষ নিখোঁজ। ডেরনা লিবিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বেনঘাজি থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে। এত ভয়াবহ বৃষ্টিপাত গত ৪০ বছরের মধ্যে দেখেনি লিবিয়া। ডেরনাতে একটি নদী আছে। গরমকালে তা মূলত শুকনোই থাকে। এই নদীর ঘিরে রেখেছে ২৩০ ফুট উঁচু দুটি বাঁধ। দীর্ঘদিন ধরেই রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভুগছিল বাঁধগুলো। তাঁর ফলস্বরূপই এইবারের লাগাতার বৃষ্টি সহ্য না করতে পেরে ভেঙে যায় বাঁধগুলি। যার ফলে প্রবল জলোচ্ছ্বাস গ্রাস করে গোটা শহরকে। জলবায়ু পরিবর্তন অবশ্যই এই ঘটনার অন্যতম কারণ। কিন্তু লিবিয়ায় তার প্রভাবে ঘটে যাওয়া বন্যা মোকাবিলা করার মতো কোনো প্রশাসন নেই। দুর্যোগ মোকাবিলা দলের মতো কোনো বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দল সেখানে নেই। এর মূল কারণ গৃহযুদ্ধ। আরব বসন্তের পর লিবিয়ায় যা শুরু হয়েছে। বস্তুত, লিবিয়ায় গদ্দাফির শাসন চলতো। সেই শাসন ফেলে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়াস হয়েছিল লিবিয়ায়। কিন্তু ২০১১ থেকে তা এখনো পর্যন্ত সম্ভব হয়ে ওঠেনি। উপরন্তু, এই সংকট লিবিয়ার সামরিক বাহিনীর ওপর প্রভাব ফেলেছে। উদ্ধারকাজে নিযুক্ত প্রায় ১২৩ জন সৈন্যর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর