শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
বিবিসিকে প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা

অকল্পনীয় দৃশ্য ছিল মৃত্যুর চেয়ে ভয়ংকর

অকল্পনীয় দৃশ্য ছিল মৃত্যুর চেয়ে ভয়ংকর

ভূমিকম্প হলে সচরাচর বড় বড় ভবন ধ্বংস হয়। কিন্তু বন্যার পানিতে এমন অভিজ্ঞতা দেখল গৃহযুদ্ধে জর্জরিত লিবিয়া। ভূমধ্যসাগরীয় ঝড় ড্যানিয়েলের তাণ্ডবে বাঁধ ভেঙে সৃষ্টি হওয়া বন্যায় দেশটির দেরনা শহর মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে -এএফপি

রাত প্রায় আড়াইটা এবং বাইরে অন্ধকার। লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর ডেরনার ৩১ বছর বয়সী হিসাবরক্ষক হুসাম আব্দেলগাউই কুকুরের ডাকে জেগে ওঠেন ও ঘুম চোখেই নিচে নেমে দেখেন তার পায়ের নিচে পানি। একই ঘরের এক অংশে হুসাম এবং অন্য অংশে তার ছোট ভাই ইব্রাহিম থাকেন। তিনি সামনের ঘরের দরজা খোলা মাত্রই হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়ে বন্যার পানি। দুই ভাই দৌড়ে ঘরের পেছনের দিকে যান। সেখানে গিয়ে তারা অবিশ্বাস্য পরিস্থিতির সম্মুখীন হন, যা তাদের কাছে ছিল ‘মৃত্যুর চেয়েও ভয়াবহ’। আল কুব্বাহ শহর থেকে ফোনে এভাবেই বিবিসিকে পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।

হোসাম বিবিসিকে বলেন, শিশু ও নারীদের মৃতদেহ পানিতে ভাসছিল। গাড়ি ও বাড়ির আসবাবপত্র পানির স্রোতে ভেসে যাচ্ছিল। অনেক লাশ আমাদের ওপর দিয়ে ভেসে যায়। এটি ছিল বন্যার ভয়াবহ দৃশ্য।

বন্যার পানি হোসাম ও ইব্রাহিমকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তীব্র স্রোতে তাদের অনেক দূরে নিয়ে যায়। তারা ভাবতেও পারেননি এতদূর ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। এক সেকেন্ডের মধ্যে ১৫০ মিটার দূরে চলে যান। ২৮ বছর বয়সী ইব্রাহিম ভেসে যাওয়ার সময় অনেক কিছু ধরার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ধরে দাঁড়াতে পারেনি। কারণ সব কিছুই ভেসে যাচ্ছিল। তারা দুই ভাই সামনের ভবনের দিকে যাওয়ার জন্য একটি তার ব্যবহার করেছিলেন। তাদের ভবনের তিনতলার জানালা দিয়ে আরেক ভবনের পাঁচতলার ছাদের ওপরে যান। যাতে তারা সেখানে অপেক্ষা করতে পারেন।

হোসাম বলেন, আমরা যেখানে ছিলাম সেটি ছিল শহরের সবচেয়ে উঁচু জায়গা। নিচু এলাকায় কী হয়েছে আমি জানি না। তারা হয়তো বা ভবনের পাঁচ অথবা ছয়তলার ওপর আছে। আমার ধারণা, সেখানে সবাই মারা গেছে। আল্লাহ যেন সবাইকে ক্ষমা করে দেন। এখন পর্যন্ত ৬ থেকে ১১ হাজারের মতো মানুষ এই বন্যায় মারা গেছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের কারণেই লিবিয়ায় এই বন্যা আঘাত হেনেছে। ডেরনা শহরের মেয়র সতর্ক করে জানিয়েছেন, এই বন্যায় প্রাণহানি ২০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ডেরনা শহরের দুটি বাঁধ ভেঙে যায়। এই বাঁধ ভাঙার কারণেই শহরে পানি প্রবেশ করে। এর ফলে শহরে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। বন্যার পানিতে ডেরনা শহর দুই ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। মাঝখানের সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থী রাহমা বেন খায়াল কোনোমতে একটি ভবনের ছাদে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমি বেঁচে ফিরলেও সেখানকার সবাই মারা গেছেন। স্রোত রাস্তার সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এই বন্যার মধ্যেই হালকা বৃষ্টি শুরু হয়েছিল।

মৃত বেড়ে ১১ হাজার, নিখোঁজ আরও ১০ হাজার : লিবিয়ার উপকূলীয় শহর ডেরনাতে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১ হাজার ৩০০ জনে দাঁড়িয়েছে। ভারী বর্ষণের কারণে বাঁধ ভেঙে সৃষ্ট এই বন্যায় শহরটির বড় একটি অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। মৃতের এই সংখ্যা নিশ্চিত করেছে লিবিয়ার রেড ক্রিসেন্ট। তবে ডেরনার মেয়র দাবি করেছেন, সম্ভবত ২০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

আল-জাজিরার খবরে জানানো হয়, এখনো ওই শহরের ১০ হাজার ১০০ জন নিখোঁজ রয়েছে। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর আগে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ৫০০ জানিয়েছিলেন। লিবিয়ার অন্য অংশগুলোয় ১৭০ জন মারা গেছে এই বন্যায়।

সর্বশেষ খবর