রবিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভূমিকম্পে কাঁপল আফগানিস্তান

নিহত ১৫, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা বহু মানুষ

ভূমিকম্পে কাঁপল আফগানিস্তান

প্রচ- ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চল। দেশটির হেরাত প্রদেশে আঘাত হানা শক্তিশালী ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পে অন্তত ১৫ জন নিহত এবং ৭৮ জন আহত হয়েছেন। ভূমিকম্পে বহু ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা। গতকাল স্থানীয় সময় বেলা ১১টার দিকে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত প্রদেশে ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পের পর পাঁচটি বড় ধরনের আফটারশক হয়েছে; যার কেন্দ্রস্থল ছিল ওই অঞ্চলের বৃহত্তম শহরের কাছে।

দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম প্রদেশ হেরাতের জনস্বাস্থ্য পরিচালক মোহাম্মদ তালেব শহিদ ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ১৫ জনের লাশ আনা হয়েছে। তবে এটি চূড়ান্ত সংখ্যা নয়। অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে।’ মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বলছে, আঘাত হানা ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল হেরাত শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে। এ ভূমিকম্পের পর দেশটিতে ৫ দশমিক ৫, ৪ দশমিক ৭, ৬ দশমিক ৩, ৫ দশমিক ৯ ও ৪ দশমিক ৬ মাত্রার পাঁচটি শক্তিশালী আফটারশক অনুভূত হয়েছে। তালেবান সরকারের এক মুখপাত্র বলেছেন, বেলা ১১টার দিকে ভূমিকম্প শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হেরাতের বাসিন্দা ও দোকানদাররা ভবন থেকে রাস্তায় নেমে আসেন। এ সময় হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে অনেকে আহত হয়েছেন। ৪৫ বছর   বয়সী হেরাতের বাসিন্দা বশির আহমদ এএফপিকে বলেন, ‘আমরা অফিসে ছিলাম। সে সময় ভবন কেঁপে ওঠে। দেয়ালের প্লাস্টার খুলে নিচে পড়ে যায় এবং দেয়ালে ফাটল ধরে। ভবনের কিছু অংশ ধসে পড়ে।’ তিনি বলেন, ‘মোবাইলের নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় আমি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।   আমি খুব চিন্তিত এবং ভীত। এটা অত্যন্ত ভয়াবহ ব্যাপার।’ দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র মোল্লাহ জান সায়েক এএফপিকে বলেছেন, হতাহতের ওই সংখ্যা ‘প্রাথমিক’। গ্রামীণ ও পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ঘটনা ঘটায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন তিনি। তালেবানের  এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের বিস্তারিত তথ্য  পাইনি। এক ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে ঘটা প্রথম ভূমিকম্প এবং অনেক আফটারশকের পর হেরাতের রাস্তায় রাস্তায় অনেক নারী, শিশু ও পুরুষের ভিড় দেখা গেছে।’ এএফপি ও এনডিটিভি

ইউএসজিএসের প্রাথমিক তথ্য বলছে, আফগানিস্তানে এ ভূমিকম্পে শত শত মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক হতাহত ও ব্যাপক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে এ বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য আঞ্চলিক বা জাতীয় পর্যায়ে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এর আগে ইউএসজিএস জানায়, আফগানিস্তানে আঘাত হানা প্রথম ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ২। এ ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে হেরাত শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার গভীরে।

হেরাতের পূর্বাঞ্চলে ১২০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে ইরানের সঙ্গে। এ শহরটিকে আফগানিস্তানের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে মনে করা হয়। বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, হেরাত প্রদেশের রাজধানী হেরাত শহরে ১৯ লাখ মানুষের বসবাস রয়েছে। গত বছরের জুনে আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে ৫ দশমিক ৯ মাত্রার এক ভূমিকম্পে ১ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। গত কয়েক দশকের মধ্যে আফগানিস্তানে সেটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্প ছিল বলে সে সময় জানায় দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের মার্চে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকায় সাড়ে ৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এ ভূমিকম্পে দুই দেশে অন্তত ১৩ জন নিহত হন। হিন্দুকুশ পর্বতমালা ও ইউরেশীয়-ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলের কাছে অবস্থান হওয়ায় প্রায়ই ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে আফগানিস্তান।

সর্বশেষ খবর