বুধবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বেঁচে থাকার চেষ্টায় লাখ লাখ মানুষ

বেঁচে থাকার চেষ্টায় লাখ লাখ মানুষ

ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মমতার শিকার গাজাবাসীর আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠছে গাজার আকাশ -এএফপি

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ এই অঞ্চলের পরিস্থিতিকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। এমন আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। কাতারের জর্জ টাউন ইউনিভার্সিটির মধ্যপ্রাচ্য ইতিহাসের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল আরিয়ান বলেন, এর আগে কোনো সংঘর্ষে আমরা এ ধরনের একাধিক ফ্রন্ট দেখিনি। সবকিছুই নজিরবিহীন।’

তিনি বলেন, আমরা জানি, ২০০৬ সালে লেবাননের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় সংঘাত সেখানেই সীমাবদ্ধ ছিল। গাজায় এর আগে ইসরায়েলে অনেক হামলা মূলত সেখানেই সীমাবদ্ধ ছিল। ২০০৬ সালে, হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েল ৩৪ দিনের যুদ্ধে লেবাননে ১,২০০ এরও বেশি নিহত হয়েছিল, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক এবং ১৬০ জন ইসরায়েলি যাদের বেশির ভাগই সৈন্য ছিল।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের ১১ দিন হয়ে গেল। ৮ অক্টোবর হামাসের হামলার মধ্য দিয়ে এ যুদ্ধের শুরু। হামাসের এই হামলার পরপরই পাল্টা হামলা চালায় ইসরায়েল। এখনো এ যুদ্ধ চলছে, প্রতিদিন ঝরছে প্রাণ।

মার্কিন নেতৃত্বাধীন কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকার পরও গাজায় বোমাবর্ষণে আটকে পড়া ২০ লাখ ফিলিস্তিনির দুর্দশা কমেনি। এ এলাকায় পানি, খাদ্য ও ওষুধের সরবরাহ সব শেষ হয়ে গেছে। মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) সতর্ক করে বলেছে, গাজা জনস্বাস্থ্য সংকটের মুখোমুখি। কারণ,   ফিলিস্তিনি ছিটমহলে ‘পানি ফুরিয়ে যাচ্ছে। সংস্থাটি বলেছে, গাজার ৩৫টি হাসপাতালে সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

এই অসহনীয় অবস্থার মধ্যে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আশ্রয়হীন আর ক্ষুধার্ত লাখ লাখ মানুষ বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। উত্তরাঞ্চল থেকে পালিয়ে আসা এক ব্যক্তি বিবিসিকে বলেন, বেঁচে থাকার জন্য যা দরকার তার কিছুই আমাদের কাছে নেই। আমরা আঁস্তাকুড়ে বসবাস করছি। এখান থেকে সরে গেলে আমরা মারা যাব। কর্মীরা বিপুল পরিমাণ ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নিতে কাজ করছে। বাথরুমের ব্যবস্থা খুবই কম। সেখানে রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। খাবার থাকলেও সেটি পর্যাপ্ত নয়।  খান ইউনিস শহরে রাস্তার পাশে বড় একটি পাত্রে স্যুপ আর ভাত রান্না করছেন আমির।  যে শহরটিতে এক সময় ৪ লাখ বাসিন্দা    ছিল, সেখানে এখন প্রায় ১০ লাখ মানুষের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।

জাতিসংঘ বলেছে, প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনি যারা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে এসেছে তাদের জরুরি ভিত্তিতে খাবার, পানি এবং জ্বালানি দরকার।

গাজায় জরুরি প্রবেশাধিকার চায় ডব্লিউএইচও : গাজায় ত্রাণ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রবেশাধিকার চেয়েছে হু। গাজায় দীর্ঘমেয়াদে মানবিক সংকট দেখা দেওয়ার সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘের এই সংস্থাটি। ডবিউএইচওর পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের জরুরি সেবা পরিচালক রিচার্ড ব্রেনান বলেছেন, সংস্থাটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গাজায় অবাধে প্রবেশের ব্যবস্থা করতে গতকাল সিদ্ধান্তগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছে। মিসরের সঙ্গে রাফাহ সীমান্ত ক্রসিংয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা রাফাহর দক্ষিণে ত্রাণ নিয়ে গেছি। গাজায় প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছি।’ গাজায় জরুরি ত্রাণ সরবরাহের জন্য রাফাহ ক্রসিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ রুট।

ডব্লিউএইচও বলছে, গাজায় তিন দিনের জন্য পণ্য সরবরাহের প্রস্তুতি আছে। কিন্তু ত্রাণকর্মীরা তা সরবরাহ করতে পারছে না। ব্রেনান বলেন, ‘ডব্লিউএইচও যে কোনো সংঘাতেই সব পক্ষকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আবেদন অনবরতই জানিয়ে আসছে।’

সর্বশেষ খবর