বুধবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

হামাসের পতন হলে কার নিয়ন্ত্রণে যাবে গাজা

দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

হামাসের পতন হলে কার নিয়ন্ত্রণে যাবে গাজা

নির্বিচারে রকেট হামলা চালিয়ে গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে ইসরায়েল। নির্দয়ভাবে হত্যা করা হচ্ছে শিশুদের। গতকাল খান ইউনিসে ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি শিশুকে জীবিত উদ্ধার করা হয় -এএফপি

ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। সংগঠনটি ২০০৭ সাল থেকে ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের গাজার শাসন ক্ষমতায় আছে। ইসরায়েলকে ধ্বংস করার মতবাদে বিশ্বাসী হামাসকে অস্ত্র, অর্থ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করে ইরান।

গাজার শাসন ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে বেশ কয়েকবার সংঘাতে জড়িয়েছে হামাস। প্রত্যেকবারই ইসরায়েল লক্ষ্য করে হাজারো রকেট হামলা চালানো হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলার মাধ্যমে হামাসের জবাব দিয়েছে ইসরায়েল। এরপর ১৭ দিন ধরে লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এ পর্যন্ত অন্তত ৬ হাজার ফিলিস্তিনি মুসলমানকে হত্যা করেছে। যার অর্ধেক শিশু। এর মধ্যে গাজায় স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ইসরায়েল। যা আপাতত প্রতিহত করার ক্ষমতা নেই হামাসের। এমন পরিস্থিতিতে গাজার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অর্থাৎ হামাসের পতন হলে সেখানের শাসন ব্যবস্থার কী হবে? এক্ষেত্রে ইসরায়েলের মিত্ররা প্যালিস্টিনিয়ান অথরিটিকে (পিএ) বিবেচনা করছে। ২০০৫ সালে ইসরায়েল তাদের সৈন্য প্রত্যাহারের দুই বছর    পর পিএকে সরিয়ে গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয় হামাস। কিন্তু হামাসের পতন হলে ফের অবরুদ্ধ গাজার দায়িত্ব তারা নেবে কি না তা স্পষ্ট নয়। তাছাড়া এই যুদ্ধ শেষ হলে পশ্চিম তীরের ডি ফ্যাক্টো রাজধানী রামাল্লার নিয়ন্ত্রণও তাদের কাছে থাকবে কি না তাও বলা যাচ্ছে না।

১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তি অনুযায়ী, ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের মূলভিত্তি হওয়ার কথা ছিল পিএকে কেন্দ্র করে। কিন্তু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা কমতে থাকায় দুর্নীতিসহ অযোগ্যতা ভর করে প্যালিস্টিনিয়ান অথরিটির ওপর। এটির নেতৃত্বে রয়েছেন ৮৭ বছর বয়সী মাহমুদ আব্বাস। ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুর পর ২০০৫ সালে চার বছরের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আব্বাস। কিন্তু সেই থেকে ফিলিস্তিনের নেতৃত্ব তার হাতে। পিএ-এর সাবেক প্রধানমন্ত্রী সালাম ফায়াদ বলেন, প্যালিস্টিনিয়ান অথরিটির কাছে অনেক কিছুরই নিয়ন্ত্রণ নেই। যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে পুরো ব্যবস্থাই ভেঙে পড়তে পারে।

প্যালিস্টিনিয়ান অথরিটি শুরু থেকেই ফিলিস্তিনি নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। তারা ইসরায়েলের অবৈধ বসতি স্থাপনও বন্ধ করতে পারেনি। তাছাড়া পশ্চিম তীরের বেশ কিছু স্থানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এর জবাবে পাল্টা বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এতে পিএ-এর অবস্থান আরও নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশের বেশি ফিলিস্তিনি     মনে করে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সশস্ত্র লড়াই কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে। অন্যদিকে ২০ শতাংশ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে  জোর দিয়েছে।

আব্বাসের রাজনৈতিক দলের নাম ফাতাহ। পিএ-এর নিয়ন্ত্রণ তাদের কাছেই। আব্বাসের উত্তরসূরি কে হবে তা নিয়েও রয়েছে দ্বন্দ্ব। আব্বাসের ঘনিষ্ঠরা মনে করছেন ফাতাহ ফের গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে। তবে দলের একটা অংশ মনে করে গাজার পতন হলে ফাতাহও সংকটে পড়বে।

তবে চলমান ইসরায়েলি হামলায় হাজার হাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনি প্রাণ হারাচ্ছে। এতে দেখা যাচ্ছে, হামাসের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। কিন্তু পিএ-এর গ্রহণযোগ্যতা কমছে। চলমান নিষ্ঠুরতার জন্য শুধু যে ইসরায়েলের প্রতি ফিলিস্তিনিদের ক্ষোভ বাড়ছে তা নয়, তারা মাহমুদ আব্বাসের প্রতিও ক্ষুব্ধ। এরই মধ্যে রামাল্লায় আব্বাসের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছে ফিলিস্তিনিরা। পুরো আরবজুড়েই মূলত ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভ হয়েছে। প্রেসিডেন্ট আব্বাসের পতন চায় মানুষ।

হামাসের প্রতি যাদের কম ভালোবাসা আছে তারাও ইসরায়েলের পদক্ষেপ নিয়ে আতঙ্কিত রয়েছে। ফলে তারা বিবাদ ভুলে মাহমুদ আব্বাসের প্রতি সর্বদলীয় সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছে।

সর্বশেষ খবর