শনিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

গাজায় মানবিক করিডর ও যুদ্ধবিরতি চাইল ইইউ

গাজায় মানবিক করিডর ও যুদ্ধবিরতি চাইল ইইউ

ব্রাসেলসে এক বৈঠকের পর গাজায় জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য ‘মানবিক করিডর এবং যুদ্ধ বিরতির’ আহ্বান জানাতে সম্মত হয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান সতর্ক করে বলেছেন, গাজায় ত্রাণ খুবই স্বল্প পরিমাণে পৌঁছাচ্ছে। সর্বশেষ গাজায় ত্রাণ সহায়তা নিয়ে আরও ১২টি ট্রাক ঢুকেছে। কিন্তু সেখানে এখনো কোনো জ্বালানি পৌঁছায়নি। হামাস বলেছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বোমা নিক্ষেপের কারণে হামাসের হাতে আটক অন্তত ৫০ জন জিম্মি নিহত হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর হামলার জের ধরে তাদের জিম্মি করা হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে বৈঠকে বসেছিলেন ইইউ নেতারা। তারা দাবি করেছেন গাজায় সাহায্য পাঠাবার জন্য একটি মানবিক করিডর তৈরি করতে হবে। আর এর জন্য সাময়িক সংঘর্ষ বিরতি দরকার। তাহলেই নিরাপদে ও উপযুক্ত পরিমাণে ত্রাণসামগ্রী গাজায় পাঠানো সম্ভব হবে। পরে ইউরোপীয় কাউন্সিল একটি বিবৃতিতে জানায়, ‘গাজায় মানবিক পরিস্থিতি সমানে খারাপ হচ্ছে। এই অবস্থায় সেখানে ত্রাণ পাঠাবার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তার জন্য একটা করিডর তৈরি করা দরকার।’

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই অঞ্চলে তাদের সহযোগী ও বন্ধু দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বেসামরিক মানুষকে রক্ষা করা, তাদের সাহায্য করা এবং তারা যাতে খাবার, জল, ওষুধ, বাসস্থান ও জ্বালানি পায় তা নিশ্চিত করতে চায়। ইইউ-র বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। স্পেন, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়ামের মতো দেশগুলো যুদ্ধবিরতির ওপর জোর দেয়। জার্মানি ও হাঙ্গেরি বলে, ইসরায়েলের নিজেকে রক্ষা করার অধিকার আছে।

হামাসের পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখনো পর্যন্ত গাজায় সাত হাজার মানুষ মারা গেছে। ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গ্যানটজ বলেন, গাজায় যুদ্ধের পরিকল্পনা নিয়ে ইসরায়েল নিজেদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে এবং সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কয়েক বছর সময় লাগবে। তেল আবিবে গাজায় হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের স্বজনরা বিক্ষোভ করেছেন। সে সময় তারা জিম্মিদের উদ্ধারে সরকারকে আরও বেশি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর ‘বোমা হামলা’ রুখতে এগিয়ে আসতে সব বিশ্ব নেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে জাতিসংঘের নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান বলেছেন, ইসরায়েল ‘শুধু হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত।’ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান গাজায় ইসরায়েলি হামলা রুখতে না পারার জন্য পশ্চিমাদের অভিযুক্ত করে বলেছেন, এর কারণ হচ্ছে, যাদের রক্ত ঝরছে তারা মুসলিম।

যুদ্ধ বিরতির আহ্বান : ব্রাসেলসে এক বৈঠকের পর এক ঘোষণাপত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশের নেতারা ‘গাজায় ক্রমে খারাপ হতে থাকা মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।’ তারা ‘গাজায় বিরতিহীন, দ্রুত, নিরাপদ এবং বাধাহীন মানবিক প্রবেশাধিকার চায় এবং অভাবীদের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ যেমন মানবিক করিডর এবং মানবিক প্রয়োজনীয়তা মেটাতে সাময়িক বিরতি চান।’ এই ঘোষণাপত্রে ইউরোপীয় কাউন্সিল, ‘ইসরায়েল জুড়ে হামাসের নৃশংস এবং নির্বিচার সন্ত্রাসী হামলার শক্ত ভাষায় আবারও নিন্দা জানায়।’ এতে আরও বলা হয় : ‘সাধারণ মানুষকে হামাসের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করাটা শোচনীয় ও নৃশংস বিষয়।’

সীমান্তে আটকে আছে ত্রাণ : জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচির প্রধান বলেন, মিসর থেকে গাজায় ঢোকার মুখে রাফা সীমান্ত পারাপারে অতিরিক্ত কঠোর তল্লাশির কারণে ত্রাণ সরবরাহ ধীর হয়ে পড়েছে। ‘মাথা খারাপ করা আমলাতন্ত্র’ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, সিনডি ম্যাককেইন। তিনি আরও বলেন, তিনি বোঝেন যে, অস্ত্র যাতে ঢুকতে না পারে তার জন্য তল্লাশিটা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু খাদ্য-পণ্য প্রবেশ করাটা আরও সহজ হওয়া উচিত। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আমরা মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা ট্রাক প্রবেশ করাতে পেরেছি।’ ‘আমাদের আরও বেশি পরিমাণে ট্রাক প্রবেশ করানো দরকার। গাজায় আমাদের নিরাপদ, অবাধ প্রবেশাধিকার দরকার যাতে আমরা মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে পারি এবং ক্ষুধায় যাতে কেউ মারা না যায় তা নিশ্চিত করতে পারি। কারণ   এটাই হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর