রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেশন বন্ধ করে দিল বিক্ষোভকারীরা

গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবি

নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেশন বন্ধ করে দিল বিক্ষোভকারীরা

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি দাবিতে কয়েক শ বিক্ষোভকারী বিক্ষোভ করায় নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল টার্মিনাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার এ ঘটনা ঘটেছে বলে নগরীর মেট্রোপলিটন পরিবহন কর্তৃপক্ষ (এমটিএ) জানিয়েছে। নিজেদের ওয়েবসাইটে এমটিএ বলেছে, ‘একটি প্রতিবাদের কারণে গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল টার্মিনাল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি না দেওয়া পর্যন্ত এটি বন্ধ থাকবে।’ যাত্রীদের বিকল্প স্টেশনগুলো ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে তারা। আর অতিরিক্ত সময় ভ্রমণ করার পরিকল্পনা করতে বলেছে। স্টেশন ভবনের ভিতরে টাঙানো একটি ব্যানারে লেখা ছিল, ‘মৃতদের জন্য শোক এবং জীবিতদের জন্য নরকের মতো লড়াই করুন।’ রয়টার্স জানিয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে আসা ছবিগুলোতে বিক্ষোভকারীদের ট্রেন স্টেশনটিতে ও মিডটাউন ম্যানহাটনের ৪২তম সড়কে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। আইন প্রয়োগকারীরা এখান থেকে বহু বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করে। ‘জুইশ ভয়েস ফর পিস’ নামের একটি ইহুদি সংগঠন এ বিক্ষোভের আয়োজন করেছে। ইনস্টাগ্রামে তাদের পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লম্বা একটি লাইনকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে যাদের পরনে ‘এখনই গোলাগুলি বন্ধ কর’ এবং ‘আমাদের নামে নয়’ লেখা টি-শার্ট আর তাদের হাত পেছনে রাখা। পোস্টে গোষ্ঠীটি লিখেছে, ‘দুই দশকের মধ্যে এটিই সম্ভবত নিউইয়র্কে হওয়া সবচেয়ে বড় গণবিক্ষোভ সমাবেশ। শত শত ইহুদি ও তাদের মিত্ররা গ্রেফতার হচ্ছে।’ শুক্রবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ফিলিস্তিনি ভূখন্ড গাজায় তাদের আকাশ ও স্থল হামলার পরিধি বাড়িয়েছে। আর গাজা শাসনকারী ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস বলেছে তারা ‘পূর্ণ শক্তিতে’ ইসরায়েলি আক্রমণ মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।

এদিকে বহির্বিশ্বের সঙ্গে গাজা উপত্যকার টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে ইসরায়েল। এর ফলে সেখানে কী ঘটছে, সেই তথ্য জানার পথ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। অর্থাৎ ফিলিস্তিনি এলাকাটিতে ইসরায়েল ব্যাপক নৃশংসতা চালালেও বাইরের মানুষ তা আর জানতে পারবে না। শুক্রবার এমনই আশঙ্কার কথা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, শুক্রবার গাজায় ইন্টারনেট সংযোগ ও ফোন নেটওয়ার্ক পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে ফিলিস্তিনি উপত্যকাটিতে বোমা বর্ষণ শুরুর প্রায় তিন সপ্তাহ পর এ ব্যবস্থা নিয়েছে ইসরায়েল। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আচমকা হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। এতে অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হন। এ ছাড়া প্রায় ২২০ জনকে জিম্মি করেছে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা। তারই জেরে পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছে ইসরায়েল। নির্বিচার বিমান হামলায় গাজা উপত্যকাকে ধ্বংসাবশেষে পরিণত করেছে তারা। এতে এ পর্যন্ত ৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশই শিশু। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজায় ইসরায়েলের সমন্বিত বোমা বর্ষণের মধ্যে ব্যাপক ফোন ও ইন্টারনেট বিভ্রাট ঘটেছে। এতে উপত্যকার ২২ লাখ মানুষ বহির্বিশ্ব থেকে প্রায় সম্পূর্ণরূপে সংযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সংস্থাটির প্রযুক্তি ও মানবাধিকার বিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক ডেবোরা ব্রাউন বলেছেন, এই তথ্য বিচ্ছিন্নতাকে ব্যাপক নৃশংসতা আড়াল করার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়মুক্তিতে ব্যবহার করা হতে পারে। এরই মধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন জানিয়েছে, গাজায় তাদের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিবার সংস্থা ওসিএইচএ। সংস্থাটির মানবিক সমন্বয়কারী লিন হেস্টিংস এক বিবৃতিতে বলেছেন, বিদ্যুৎ, খাদ্য, পানি ও ওষুধের পাশাপাশি যোগাযোগ না থাকলে জাতিসংঘের হাসপাতাল ও মানবিক কার্যক্রমগুলো চলতে পারবে না। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও জানিয়েছে, গাজায় তাদের কর্মীদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।

বিবিসি ও সিএনএন

সংগঠনটি বলেছে, এই যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার অর্থ হলো- গাজায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কে সমালোচনামূলক তথ্য ও প্রমাণ পাওয়া আরও কঠিন হবে। এনডিটিভি

সর্বশেষ খবর