মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

গাজায় ৪ হাজার শিশু হত্যা

ধ্বংসস্তূপে চাপা আরও ১ হাজার

গাজায় ৪ হাজার শিশু হত্যা

গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। তাতেও মানসিকভাবে শক্ত উপত্যকার বাসিন্দারা। গাজার নুসিরাত শরণার্থী শিবিরের একটি বাড়ির জানালায় দাঁড়িয়ে একটি ফিলিস্তিনি মেয়ে বিজয়ের প্রতীক ভি-চিহ্ন দেখাচ্ছে -এএফপি

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অব্যাহত ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৩ হাজার ১৯৫ শিশু নিহত হয়েছে। শিশুবিষয়ক আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন রবিবার এ তথ্য জানিয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছর সারা বিশ্বে সংঘাতের কারণে যত শিশু নিহত হয়েছে, এ সংখ্যা তার চেয়ে বেশি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (টুইটার) দেওয়া পোস্টে সেভ দ্য চিলড্রেন বলেছে, গাজায় নিহত শিশুর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারণ এখনো ১ হাজার শিশু নিখোঁজ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, তাদের বেশির ভাগই ইসরায়েলি বোমা হামলায় বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাটি জানায়, গাজায় নিহত ৭ হাজার ৭০৩ জনের মধ্যে ৪০ শতাংশেরও বেশি শিশু যা অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখন্ড এবং ইসরায়েল মিলিয়ে মোট হতাহতের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি। গাজায় আরও অন্তত ১ হাজার শিশু ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে নিখোঁজ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে যে, মৃতের সংখ্যা আদতে আরও বেশি। সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর জেসন লি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একমাত্র উপায় যুদ্ধবিরতি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই রাজনীতির ওপরে জনগণকে রাখতে হবে- প্রতিদিনের বাগবিতণ্ডায় শুধুই শিশুদের নিহত ও আহতের সংখ্যা বাড়ছে। শিশুদের সব সময় সুরক্ষা দিতে হবে, বিশেষ করে যখন তারা স্কুল এবং হাসপাতালে নিরাপত্তা খুঁজছে।’

৩৩টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে গাজায় : খাদ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে রবিবার ৩৩টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ওসিএইচএ। ‘২১ অক্টোবরের পর থেকে এবারই গাজায় এত  ত্রাণবাহী ট্রাক পাঠানো সম্ভব হলো,’ গতকাল এ কথা জানায় ওসিএইচএ। ইসরায়েল গাজা উপত্যকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার পর থেকে জেনারেটর দিয়ে চলছিল হাসপাতালগুলো। তাদের পক্ষ থেকে জ্বালানি সরবরাহের অনুরোধ করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো জ্বালানি সহায়তা সম্ভব হয়নি। এএফপি নিউজ এজেন্সি অনুসারে, ২৩ লাখের বেশি লোকের আবাস গাজায় সীমিত পরিসরে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ১১৭টি ট্রাক প্রবেশ করেছে। ইসরায়েল গাজাকে অবরুদ্ধ করে দেওয়ার আগে এ অঞ্চলে প্রতিদিন বিভিন্ন পণ্য বহনকারী প্রায় ৫০০ ট্রাক প্রবেশ করত। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় গাজাকে সম্পূর্ণভাবে অবরুদ্ধ করে দেয় ইসরায়েল। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, ‘গাজায় কোনো বিদ্যুৎ থাকবে না, খাদ্য থাকবে না, জ্বালানি থাকবে না।’

গাজা অভিযান এখনই থামবে না- নেতানিয়াহু : প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল স্থলসেনা অভিযান চালাচ্ছে। সহজে এই সংঘাত বন্ধ হবে না। রবিবার দুপুরেও একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, গাজায় বেসামরিক মানুষ কী অবস্থায় আছে, তার কোনো খোঁজ মিলছে না। ইন্টারনেট পরিষেবাও সম্পূর্ণ ব্যাহত হয়েছে। এদিকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, পরিস্থিতি ভয়াবহ। গাজা স্ট্রিপে ফিলিস্তিনি নাগরিকরা কার্যত হামলে পড়েছেন। তারা সবাই আশ্রয়প্রার্থী। লুটতরাজও শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছেন গাজায় অবস্থিত জাতিসংঘের কর্মকর্তারা।

নরওয়ের মন্তব্য : নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গার জানিয়েছেন, গাজায় ইসরায়েলের সংঘাত সমানুপাতিক নয়। তিনি দাবি করেছেন, ৭ অক্টোবর যে ঘটনা ঘটেছিল, তা ভয়াবহ। কিন্তু সেখানে ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়েছিলেন, ২০০ জন পণবন্দি হয়েছিলেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ইসরায়েলের আক্রমণে অন্তত ৮ হাজার বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। শহর ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলের এই আচরণ সমানুপাতিক নয়। এর আগেও ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল নরওয়ে। তাদের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছিল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর