বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
হামাস-ইসরায়েল চুক্তি

যে আশা করছেন বিশ্বনেতারা

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী হামাসের হাতে জিম্মি ব্যক্তিদের অন্তত ৫০ জনকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ইসরায়েল গাজায় চার দিন হামলা চালাবে না। তবে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতারের আশা, সাময়িক এই চুক্তি দীর্ঘমেয়াদে যুদ্ধ বন্ধের চুক্তিতে রূপ নেবে।

ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা গাজায় যুদ্ধবিরতির বহুল প্রত্যাশিত প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়ার খবরে উচ্ছ্বসিত যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে মার্কিন প্রেসিডেন্টের একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। বিবৃতিতে জো বাইডেন হামাসের হাতে বন্দিদের মুক্তির চুক্তিকে বিশেষ করে স্বাগত জানিয়েছেন। বাইডেন কাতারের শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল-ফাত্তাহ আল-সিসিকে ‘এই চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য তাদের নেতৃত্ব এবং অংশীদারির জন্য’ ধন্যবাদ দিয়েছেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ভূমিকার প্রশংসা করেছেন তিনি।

চুক্তির বিষয়ে ইসরায়েল যা বলছে : ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে- দেশটির সরকার সব জিম্মিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর। ‘সরকার লক্ষ্য অর্জনের একটি রূপরেখা অনুমোদন করেছে এবং সে অনুযায়ী নারী ও শিশুদের সমন্বয়ে কমপক্ষে ৫০ জিম্মি আগামী চার দিনে মুক্তি পাবে। এ সময়ে যুদ্ধে বিরতি দেওয়া হবে।’ ‘এর বাইরে অতিরিক্ত প্রতি ১০ জন জিম্মির মুক্তির জন্য একদিন করে যুদ্ধবিরতি থাকবে’। এতে আরও বলা হয়- ‘ইসরায়েল সরকার, আইডিএফ (ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী) এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলো সব জিম্মিকে মুক্ত করতে, হামাসকে নির্মূল করতে এবং গাজা থেকে ইসরায়েলের প্রতি নতুন কোনো হুমকি আসবে না নিশ্চিত করতে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে’। চুক্তির বিষয়ে হামাস যা বলছে : ইসরায়েলের পর ওই চুক্তির বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে হামাস। সেখানে তারা বলেছে, ৫০ জিম্মিকে ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে আটক ১৫০ জন ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু মুক্তি পাবে। সেই সঙ্গে ওই চুক্তির অংশ হিসেবে মানবিক সহায়তা, ওষুধ ও জ্বালানি নিয়ে শতাধিক ট্রাককে গাজায় প্রবেশ করার সুযোগ দেওয়া হবে বলে হামাস তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকার সময় গাজা ভূখন্ডে কোনো হামলা বা গ্রেফতার করবে না ইসরায়েলি বাহিনী। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি গতকাল বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্যাপক আলোচনা ও দর-কষাকষির পর অবশেষে এই চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। এখন আমাদের নজর থাকবে বিবদমান দুই পক্ষের চুক্তির শর্ত মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করা।’ আল-আনসারি আরও বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলা বন্ধ ও এই চুক্তি ব্যবহার করে দীর্ঘমেয়াদে কীভাবে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে সমঝোতায় পৌঁছানো যায়, সেটি এখন প্রত্যাশিত। এরপর কয়েক দশকের এই সংঘাত বন্ধে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। এদিকে এই চুক্তির পর বিশ্বের প্রভাবশালী নেতারা সাধুবাদ জানিয়েছেন। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চুক্তির বিষয়টিকে সুসংবাদ হিসেবে বর্ণনা করেছে রাশিয়া। চুক্তি হয়েছে জানার পর প্রতিক্রিয়ায় ক্রেমলিন বলেছে, রাশিয়াসহ বেশির ভাগ দেশ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আসছিল।

 কারণ, যুদ্ধবিরতি হলেই কেবল সংঘাতের সমাধান নিয়ে অগ্রগতি হবে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেছেন, ‘সামরিক যুদ্ধবিরতির এ চুক্তিকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। এ চুক্তির মাধ্যমে মানবিক সংকট কিছুটা হলেও কমবে বলে আমরা আশা করছি।’

সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল-সৌদ এই চুক্তিকে সঠিক পথে যাওয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি যুদ্ধবিরতির এ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে তিনি ও তার দেশ কাজ করছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন- গাজায় এখন থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণসহায়তা পাঠানো সম্ভব হবে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এ চুক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। একই সঙ্গে উভয় পক্ষকে চুক্তির শর্ত পুরোপুরি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর