রবিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মুক্তির আনন্দে ফিলিস্তিনের কারাবন্দিরা

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় চার দিনের যুদ্ধবিরতির চুক্তির আওতায় শুক্রবার ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ৩৯ ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু নিজ ভূমিতে ফিরেছেন। এই খুশি উদযাপন করতে ওইদিন আতশবাজি ফুটিয়ে তাদের বরণ করেন ফিলিস্তিনিরা। প্রায় দুই মাস ধরে চলমান সহিংসতায় এই প্রথমবার গোলাবারুদের পরিবর্তে আতশবাজির আলোতে আলোকিত হলো ফিলিস্তিনের রাতের আকাশ। বার্তা সংস্থা এএফপি গতকাল এ খবর প্রকাশ করেছে। দীর্ঘ কারাবাসে থাকা স্বজনদের বরণ করতে শুক্রবার বাঁধভাঙা আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠেন পশ্চিম তীরের বাসিন্দারা। এ সময় ফিলিস্তিনি এবং হামাসের পতাকা হাতে বন্দি স্বজনদের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন তারা।

 সাঁজোয়া যানের বহরের সঙ্গে কাফিয়েহ স্কার্ফসহ দুটি সাদা কোচ বন্দিদের নিয়ে ওফার সামরিক ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে এলে উল্লাসে মেতে ওঠে উৎসুক জনতা। তবে এই আনন্দের মাঝেও তাদের হৃদয়ে যে ক্ষতের দাগ তা এক মুহূর্তের জন্যও ভুলে যাননি তারা। স্বজনদের দেখতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ অশ্রু আনন্দের, এ অশ্রু স্বজনদের হারানোর বেদনার।

মুক্তি পাওয়া বন্দিদের একজন ২৪ বছর বয়সী মারাহ বাকির। গাজা উপত্যকাজুড়ে প্রায় ১৫ হাজার নিহত বেসামরিকদের কথা উল্লেখ করে এএফপিকে তিনি বলেন, ‘মুক্তি পেয়ে আমি খুশি। তবে আমার এ মুক্তি শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে।’

গত আট বছরের বেশি সময় ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি থাকা বাকির বলেন, ‘কারাগারের চার দেয়াল’ থেকে মুক্তি পাওয়াটা সত্যিই চমৎকার।’ পূর্ব জেরুজালেমের বেইত হানিনায় তার পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার পর এএফপিকে বাকির জানিয়েছেন, ‘কারাগারে আমি আমার শৈশব ও কৈশোর কাটিয়েছি, আমার বাবা-মা এবং তাদের স্নেহ থেকে অনেক দূরে ছিলাম। একটি নিপীড়ক রাষ্ট্রের কাছে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করা যায় না।’ গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তির আওতায় ইসরায়েলের ১৩ জিম্মিকে হস্তান্তর করা হলে এর বিনিময়ে মোট ৩৯ জন ফিলিস্তিনি কারাবন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।  ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের মতে, গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়, যা ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় মৃত্যুর সংখ্যা।  ফিলিস্তিনি পক্ষের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় যে পরিমাণ বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছে, তা ফিলিস্তিনের ইতিহাসে বিগত দুটি ইন্তিফাদার সময় হওয়া হতহতের একত্রিত সংখ্যার চেয়েও অনেক বেশি। ইসরায়েলি হেফাজতে দুই মাস থাকার পর মুক্তি পেয়েছেন ৫৮ বছর বয়সী হানান আল-বারঘৌতি। তিনি হামাসের সশস্ত্র শাখা, এর নেতা এবং গাজার জনগণের প্রশংসা করে বলেন, ‘আল্লাহ তাদের উত্তম প্রতিদান দিন। গাজার জনগণ না থাকলে আমরা স্বাধীনতার মুখ দেখতে পেতাম না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কারাগারের ভিতরে ছিলাম, নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলাম। তারা আমাদের কষ্ট দিয়ে আনন্দ পেত। তারা আমাদের তিরস্কার ও অপমান করেছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলায় আমাদের গর্ব এবং মর্যাদা আরও সমুন্নত হয়েছে।’ ধূসর রঙের জাম্পার পরা ফিলিস্তিনি কারাবন্দিদের অধিকৃত পশ্চিম তীরের বেইতুনিয়ায় জড়ো করা হয়েছিল। সেখানে তাদের দেখে আবেগে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন অপেক্ষারত অনেকে। জড়ো করা বন্দিদের মুক্তির আগে ফিলিস্তিনি জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। এর সঙ্গে সঙ্গে সাদা মেঘের মতো ধোঁয়ার ভরে যায় কারাগারের আশপাশ। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, তখন ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। জেরুজালেমে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাত করার চেষ্টার দায়ে ২০১৬ সালে স্কুলে যাওয়ার পথে গ্রেফতার হন ২৩ বছর বয়সী মালাক। তার মা ফাতিনা সালমান বলেন, ‘ইসরায়েলি পুলিশ আমাদের বাড়িতে রয়েছে এবং আমাদের কাছে মানুষদের আসতে বাধা দিচ্ছে।’ ২০২৫ সাল পর্যন্ত মালাকের মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল না। তবে চুক্তির আওতায় অন্যান্য বন্দিদের সঙ্গে শুক্রবার তিনিও নিজ স্বজনদের কাছে ফিরে আসেন। সালমান বলেন, ‘আমার মেয়ের শরীর দুর্বল। গতকাল থেকে কিছুই খায়নি সে।’

সর্বশেষ খবর