শিরোনাম
সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের আর ভবিষ্যৎ নেই

আলজাজিরার বিশ্লেষণ

গাজায় ইসরায়েল যা করছে তা দেশটির জন্য আত্মঘাতী হতে যাচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে দেশটিকে তার অপরাধমূলক নীতিগুলোর দাম চুকাতে হবে। এমনকি এ কারণে শক্তিশালী ‘ইহুদি রাষ্ট্র’ গঠনের যে স্বপ্ন ইসরায়েল দেখেছিল, তারও পতন ঘটতে পারে। আলজাজিরার সিনিয়র রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা তার সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে এ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।

গণমাধ্যমটির অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হয় তার ওই বিশ্লেষণ। এতে তিনি বলেন, আসলে আত্মরক্ষার নামে গাজায় ইসরায়েলের সুপরিকল্পিত গণহত্যা দেশটিকে নিরাপদ করবে না; বরং এ অঞ্চলে আরও বড় পরিসরে অনিরাপত্তা ও অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে। এতে ইসরায়েল আরও কোণঠাসা হয়ে পড়বে। যে ভৌগোলিক অঞ্চলে দেশটির অবস্থান, সে অঞ্চলটি মোটাদাগে তাদের জন্য বরাবরই প্রতিকূল ছিল। এই যুদ্ধ তাদের দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকার পথে এবার প্রতিবন্ধকতা তৈরি করল।

তার মন্তব্য, ঔপনিবেশিকতা ছেড়ে আর দশটা স্বাভাবিক রাষ্ট্রের মতো আচরণ না করলে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের কোনো ভবিষ্যৎ আছে এটা কখনো মনে হয়নি আমার। ১৯৯০-এর শুরুর দিকে অল্প কিছু সময়ের জন্য এমনও মনে হয়েছিল যে ইসরায়েল হয়তো স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তনের একটা ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছিল তখন। তারা এ অঞ্চলের ফিলিস্তিনি ও আরব রাষ্ট্রগুলোকে শান্তি প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার একটা উদ্যোগ নিয়েছিল। ইসরায়েল এমনকি দেশগুলোর অস্তিত্ব রক্ষার ব্যাপারেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

তিনি বলেন, আত্মরক্ষার নামে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের এই সুচিন্তিত এবং বিস্তৃত গণহত্যা কোনো দিক থেকেই তাদের নিরাপত্তা দেবে না এবং তাদের জন্য নিরাপদ ভবিষ্যৎও নিশ্চিত করবে না। বরং ইসরায়েলের এই বর্বরতার কারণে এ অঞ্চলে আরও বড় অস্থিরতার জন্ম হবে। এর ফলে ইসরায়েল রাষ্ট্র আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং ঐতিহাসিকভাবে প্রতিকূল এই অঞ্চলে দেশটির টিকে থাকার স্বপ্নও হুমকিতে পড়বে। মারওয়ান বিশারা বলেন, দীর্ঘদিন শান্তি অনুপস্থিত থাকায় পরবর্তী দুই দশকে ইসরায়েল আরও ফ্যাসিবাদের দিকে পিছলে যায়। ইহুদিদের আধিপত্য নিশ্চিতে আইন পরিবর্তন করা হয়। জর্ডান নদী থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত সব ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনি ভূমি দখলে নানা পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে তেলআবিব। এই শতাব্দীতে এসে কট্টর ধার্মিক এবং অতি-ডানপন্থি দলগুলো জনপ্রিয় হতে শুরু করে। এতে ইসরায়েলের ক্ষমতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর হাতে এসে পড়ে। যার ফলে ইসরায়েল রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে আরব ও ইহুদি দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে সহাবস্থানের ভিত্তিতে শান্তির সব সম্ভাবনাও নষ্ট হয়ে যায়। গত দেড় মাস ধরে ইসরায়েল গাজায় আন্তর্জাতিক আইনকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ধ্বংস ও সম্প্রসারণ চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলের আক্রমণে গাজার হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদ এবং আবাসিক ভবনগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। এর মধ্যে ফিলিস্তিনের পক্ষে না দাঁড়িয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই বিদেশ থেকে আসা জাতির মধ্যপ্রাচ্যে টিকে থাকার আর কোনো সুযোগ নেই। ফিলিস্তিনিরা এখন এই অনুপ্রবেশকারীর বিরুদ্ধে আগের চেয়ে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ।

সর্বশেষ খবর