রবিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইসরায়েলের টার্গেট তিন হামাস নেতা

ইসরায়েলের টার্গেট তিন হামাস নেতা

তেল আবিবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের অফিসের দেয়ালে ঝুলছে একটি পোস্টার; সেখানে পিরামিড আকারে সাজানো রয়েছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠীর কমান্ডারদের শত শত ছবি। একেবারে নিচে আছে হামাসের জুনিয়র ফিল্ড কমান্ডারদের ছবি। সবার ওপরে আছে হামাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কমান্ডারদের ছবি, এদের মধ্যে আছে গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার মূল পরিকল্পনাকারীখ্যাত

মোহাম্মদ দেইফের ছবিও। রয়টার্স জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় হামাসের যেসব নেতা নিহত হয়েছেন, তাদের ছবিতে বসেছে ক্রস চিহ্ন। কিন্তু ইসরায়েলের টার্গেটে থাকা প্রধান তিনজন এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারা হলেন- হামাসের সামরিক শাখা ইজ এল-দ্বীন আল-কাসাম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দেইফ, তার ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ মারওয়ান ঈসা এবং গাজায়   হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার। কাতারের মধ্যস্থতায় সাত দিন ধরে চলা যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর শুক্রবার গাজায় আবার আক্রমণ শুরু করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েল নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চার কর্মকর্তার বরাতে রয়টার্স লিখেছে, হামাসের এই তিন শীর্ষ নেতাকে বন্দি বা হত্যা না করা পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণ থামার ‘সম্ভাবনা নেই’। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ইসরায়েলের সাত সপ্তাহের অভিযান-হামলায় গাজায় ১৫ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। তবে ইসরায়েলের অভিযান শুরু হয়েছিল ৭ অক্টোবর হামাসের হামলাকে কেন্দ্র করে।

হঠাৎ ওই আক্রমণে ইসরায়েলের ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়, জিম্মি করা হয় ২৪০ জনকে। দেশটির ৭৫ বছরের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দিন। মনে করা হয়, ইসরায়েলে হামাসের ওই সুসংগঠিত হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে ছিলেন সিনওয়ার (৬১), দেইফ (৫৮) ও ঈসা (৫৮)। হামাসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিন কর্মকর্তার বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, এই তিনজন হামাসের সামরিক অভিযান পরিচালনা ও জিম্মি বিনিময় আলোচনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সম্ভবত তারা গাজায় বাঙ্কারের নিচেই অবস্থান করছেন। তাদের হত্যা বা বন্দি করা দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার ও কঠিন কাজ হবে ধারণা করা হচ্ছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের লক্ষ্য হলো হামাসের আস্তানা ও সক্ষমতা ধ্বংস করা, জিম্মিদের মুক্ত করা এবং ইসরায়েলে গত ৭ অক্টোবরের মতো ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেটি নিশ্চিত করা। আর এই লক্ষ্য অর্জনে হামাসের শীর্ষ নেতাদের নির্মূল করা ‘ইসরায়েলের জন্য অপরিহার্য’।

গাজার যে তিন হামাস নেতাকে ‘হত্যার লক্ষ্য’ ইসরায়েলের : গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্ত বলেন, ‘হামাসের এই নেতারা অনিশ্চিত সময় পার করছে।’ গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ হামাসের এই নেতাদের বিশ্বের যে কোনো জায়গায় থেকেই খুঁজে বের করবে, এমনটিই ইঙ্গিত দিয়েছেন গ্যালান্ত। দুজন সামরিক বিশেষজ্ঞ জানান, সিনওয়ার, দেইফ ও ঈসাকে হত্যা করতে পারলে একে গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকী বিজয় হিসেবে দাবি করতে পারবে ইসরায়েল। কিন্তু সেই লক্ষ্য অর্জন করাও দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল ব্যাপার হবে; আর সেটি সফল হওয়ারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ড্রোন ও বিমান হামলার সঙ্গে ইসরায়েলি সৈন্যরা গাজার কম জনবসতিপূর্ণ উত্তর এবং পশ্চিম অংশে প্রবেশ করেছে। তবে যুদ্ধের সবচেয়ে কঠিন ও সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক পর্যায়টি সামনে থাকতে পারে। সৈন্যরা গাজা শহরের গভীরে ঢোকেনি। টানেলের গোলকধাঁধায় আক্রমণ করেনি, যেখানে হামাসের কমান্ডরা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তারা ঘনবসতিপূর্ণ ‘দক্ষিণেও আক্রমণ করেনি। কিছু কিছু টানেল ৮০ মিটার গভীর বলেও মনে করা হয়, ফলে বিমান হামলা চালিয়ে তাদের ধ্বংস করা কঠিন। ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নেয়ার ইস্ট পলিসির সামরিক ও নিরাপত্তা প্রোগ্রামের ডিরেক্টর মাইকেল আইজেনস্ট্যাড বলেন, ‘হামলায় ঠিক কতজন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন, তা হামাসসহ সব পক্ষের কাছেই সম্ভবত স্পষ্ট নয়। যদি (ইসরায়েল) বলতে পারে, আমরা সিনওয়ারকে হত্যা করেছি, মারওয়ান ঈসা ও মোহাম্মদ দেইফকে হত্যা করেছি, সেটি খুব স্পষ্ট আর প্রতীকী গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হবে।’ ইসরায়েল একটি ধন্দের মধ্যে আছে জানিয়ে আইজেনস্ট্যিাড প্রশ্ন রাখেন, ‘কী হবে, যদি তাদের (দেইফ, সিনওয়ার ও ঈসা) ধরা না যায়। তাদের খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত কী ইসরায়েলি বাহিনী যুদ্ধ চালিয়ে যাবে? আর যদি তারা অধরাই প্রমাণিত হয়, তাহলেই বা কী হবে।’

 

 

সর্বশেষ খবর