রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ফিলিস্তিনে বিমান হামলায় এক পরিবারের ৭৬ জন নিহত

বাড়ি-ঘর, কল-কারখানা খামার, মিল এবং বেকারিতে ক্রমাগত বোমা হামলা চালিয়ে সবকিছু ধ্বংস করা হচ্ছে

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলের নির্বিচার বিমান হামলায় একটি যৌথ পরিবারের ৭৬ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। বার্তাসংস্থা এপি গতকাল এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। শুক্রবার গাজা সিটিতে ভয়াবহ বিমান হামলায় মুগারাবি পরিবারের সদস্যরা নিহত হন। এই পরিবারের ১৬ জন প্রধান কর্তা প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছেন। গাজার সিভিল ডিফেন্স বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, শুক্রবারের এ হামলাটি যুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী ছিল।

নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ইসাম আল-মুগারাবি নামের এক ব্যক্তি। তিনি জাতিসংঘের উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থার সাবেক কর্মী ছিলেন। ইসরায়েলিদের হামলায় তার স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানও প্রাণ হারিয়েছেন। ইসাম আল-মুগারাবির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থার প্রধান আচিম স্টেইনার। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘ইসাম ও তার পরিবারের মৃত্যু আমাদের গভীর শোকাহত করেছে। গাজায় জাতিসংঘ ও বেসামরিক মানুষ কোনো লক্ষ্য নয়। এই যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হতে হবে।’ গত ৭ অক্টোবর হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। ওইদিন থেকেই গাজায় বর্বরতা শুরু করে দখলদার ইসরায়েলি সেনারা। তাদের হামলায় ছোট্ট এ উপত্যকায় এখন পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। নিহতদের প্রায় ৭০ শতাংশই হলেন নারী ও শিশু।

এদিকে, গাজায় শুধু সহায়তা দিলেই সেখানকার সব সমস্যার সমাধান হবে না বলে মন্তব্য করেছেন অক্সফাম আমেরিকার প্রধান স্কট পল। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, যখন সেখানকার বাড়ি-ঘর, কল-কারখানা, খামার, মিল এবং বেকারিতে ক্রমাগত বোমা হামলা চালিয়ে সবকিছু ধ্বংস করা হচ্ছে তখন সহায়তা আসলেই কোনো কাজে আসবে না। দারিদ্র্য ও অবিচারের অবসান ঘটাতে বিশ্বব্যাপী বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছে অক্সফাম নামের এই অলাভজনক প্রতিষ্ঠানটি। পল বলেন, গাজায় আটা বা ময়দা সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু আপনি যদি সেগুলো দিয়ে খাবার তৈরি করতে না পারেন বা খাবার তৈরির পরিস্থিতি যদি না থাকে তবে সেখানে এগুলি কোনো কাজে আসবে না। তাই এখন যে বিষয়গুলোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে তা পুরোপুরি ভুল বলা যায়। তিনি বলেন, গাজায় আসলে কী প্রয়োজন তা নিয়ে বাইডেন প্রশাসন এবং বাকি বিশ্বের মধ্যে একটি বড় পার্থক্য রয়েছে। বেশিরভাগ দেশ তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন করছে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের পদক্ষেপের বিরোধিতা করে আসছে। পল বলেন, ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধান করা জরুরি। তিনি বলেন, সেখানে কতগুলো ত্রাণবাহী ট্রাক পৌঁছেছে তা নিয়ে কথা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের উচিত কতজন জীবন হারিয়েছে এবং আমাদের আশেপাশে যেসব অমানবিক ঘটনা ঘটছে সেসব নিয়ে কথা বলা। দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। কিন্তু তারপরও বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। সবশেষ নুসিরাত শরণার্থী শিবির ও খান ইউনুসে হামলার খবর পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান সতর্ক করে জানিয়েছেন, গাজায় দুর্ভিক্ষ আসন্ন হয়ে পড়ছে। কারণ তীব্র লড়াইয়ের কারণে মানবিক সহায়তাসহ কোনো কিছুই সেখানে পাঠানো যাচ্ছে না। যদিও গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। তবে মানবিক সংগঠনগুলো বলছে, যুদ্ধবিরতির দাবি ছাড়া কোনো কিছুই যথেষ্ট হতে পারে না। শুক্রবার রাতে প্রস্তাবটি পাস হয়। প্রস্তাবের পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদের মোট ১৫ দেশের মধ্যে ১৩টি ভোট দিলেও যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া ভোটদানে বিরত ছিল। -আল জাজিরা এপি ও আলজাজিরা

সর্বশেষ খবর