সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

যুদ্ধবিরতিতে ফের ভেটো যুক্তরাষ্ট্রের গাজায় শুধুই ত্রাণের প্রস্তাব পাস

যুদ্ধবিরতিতে ফের ভেটো যুক্তরাষ্ট্রের গাজায় শুধুই ত্রাণের প্রস্তাব পাস

গাজায় ক্রমশ ভয়ংকর হয়ে উঠছে ইসরায়েল হামলা। বাড়ছে মৃত্যু মিছিল। অভুক্ত লাখো মানুষ। এমতাবস্থায় ১৫ ডিসেম্বর গাজায় যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা পাঠানোর দাবি জানিয়ে জাতিসংঘে আবেদন করে সংযুক্ত আরব আমিরাত। কিন্তু জাতিসংঘ যুদ্ধবিরতির সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে। তার বদলে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে সংস্থাটি।

অথচ দুই মাস ধরে বিভিন্ন মহল থেকে এই যুদ্ধবিরতির চেষ্টা করে যাচ্ছে। মাঝে এক সপ্তাহের জন্য সফল হয় কাতার। এর মধ্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে কয়েকবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তোলা হলেও তাতে ভেটো দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ফলে গাজায় প্রতিদিন শত শত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। গত পরশু ওই প্রস্তাব ভেস্তে যাওয়ার পর ফিলিস্তিন এটিকে ‘অর্থহীন’ তকমা দিয়েছে। তারা এই প্রস্তাব পাস করিয়ে আদতে ইসরায়েলকে আরও ভয়াবহ হামলার ছাড়পত্র দেওয়া হলো বলে মন্তব্য করে সরব রাশিয়াও। প্রস্তাবটিকে ‘নখদন্তহীন’ ও ‘অক্ষম’ বলে উল্লেখ করে ভোটদানেও বিরত থাকে ভ্লাদিমির  পুতিনের দেশ।

গাজায় যা পরিস্থিতি তাতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা ছাড়া উপায় নেই- এই মর্মেই গত ১৫ ডিসেম্বর জাতিসংঘে প্রস্তাব পেশ করে আমিরাত। প্রস্তাবের খসড়ায় গাজায় যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি আরও বেশি মানবিক সহায়তা পাঠানোর কথাও বলা হয়। কিন্তু এখনই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হলে হামাস বাড়তি সুবিধা পেয়ে যাবে, এ যুক্তিতেই বিরোধিতা করতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। তাই আমেরিকার ভেটো দেওয়া আটকাতে খসড়া প্রস্তাব নিয়ে দফায় দফায় কূটনৈতিক আলোচনা চলতে থাকে। যার জেরে ভোটাভুটি পিছিয়েও যায় কয়েকবার। শেষ পর্যন্ত আমেরিকাকে রাজি করাতে প্রস্তাবটি থেকে ‘যুদ্ধবিরতি’ বিষয়টি পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়। বদলে শুধুই মানবিক সহায়তার কথা উল্লেখ করা হয়।

শুক্রবার প্রস্তাবটি ১৩-০ ভোটে পাস হয়। নিরাপত্তা পরিষদের মোট ১৫টি দেশের মধ্যে ১৩টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও, আমেরিকা ও রাশিয়া কিন্তু ভোট দেয়নি।

এদিকে গাজায় হামলার ঝাঁজ বাড়িয়েই চলেছে ইসরায়েল। পশ্চিম তীরেও হামলা চলছে। ফিলিস্তিনের দাবি, সাধারণ নাগরিকের পাশাপাশি গাজায় এখনো পর্যন্ত ৯৯ সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে। হামলা চলছে হাসপাতাল, শরণার্থী শিবিরেও। ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্সের দাবি, গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা না করলে ত্রাণ কিংবা যথাযথ চিকিৎসা কিছুই পৌঁছে দেওয়া যাবে না।

যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়নি- বাইডেন : গত ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলের ওপর ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের হামলার পর থেকে ছোট্ট এই ভূখে র ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। বাস্তুচ্যুত হয়েছে গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় সবাই। তারা প্রাণ বাঁচাতে গাজার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটছে। ইসরায়েলের হামলায় গাজায় যে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে তা বন্ধে জাতিসংঘসহ নানা মানবাধিকার সংগঠন থেকে আহ্বান জানানো হচ্ছে। কিন্তু বারবার এই উদ্যোগে বাধা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সর্বশেষ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে ভেটো দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন শনিবার টেলিফোনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে গাজার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করে। এরপর ওই আলোচনার বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বাইডেন। তিনি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এটি ব্যক্তিগত আলোচনা ছিল। বরং তিনি দাবি করে ‘তবে আমি তাকে (নেতানিয়াহু) গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়নি।’

সর্বশেষ খবর