শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

যে কারণে পাকিস্তান ও ইরানের সম্পর্কে পতন

সংঘাতটি অভ্যন্তরীণ পাশাপাশি সীমান্ত উত্তেজনাও বৃদ্ধি করেছে

যদিও ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে, তবে বর্তমান সংঘাতটি অভ্যন্তরীণ। পাশাপাশি সীমান্ত উত্তেজনাও বৃদ্ধি করেছে।

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী গতকাল ইরানে হামলা চালিয়েছে। তেহরান আগের দিন একই ধরনের হামলা চালানোর পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। দুই দেশই বলেছে, জঙ্গি আস্তানার বিরুদ্ধে এই হামলা চালানো হয়েছে।

পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ, অন্যদিকে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় বলে অধিকাংশ পর্যবেক্ষক মনে করেন, এই সংঘাত এমন দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনাকে উসকে দিচ্ছে। তবে বর্তমান অবস্থার জন্য সীমান্তে নানা জঙ্গি গোষ্ঠীর কার্যক্রমকে দায়ী করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, জাইশ আল-আদল হচ্ছে সিস্তান-বেলুচিস্তান এলাকায় পরিচালিত সবচেয়ে ‘সক্রিয় ও প্রভাবশালী’ সুন্নি জঙ্গিগোষ্ঠী।

জাইশ আল-আদল বা ন্যায়বিচারের যোদ্ধা : জাইশ আল-আদল বা ‘ন্যায়বিচার ও সমতার পক্ষে যোদ্ধা’ হচ্ছে একটি জঙ্গিগোষ্ঠী, যারা ইরানের সরকারের বিরোধিতা করে। এই গোষ্ঠীটি নিজেদের ইরানের সিস্তান- বেলুচিস্তান প্রদেশে ‘সুন্নি অধিকার রক্ষক’ হিসেবে বর্ণনা করে থাকে। ২০০৯ সালে ইরান আবদুল মালেক রিগি নামে একজনকে গ্রেফতার করে। তিনি এই জঙ্গিগোষ্ঠীটির প্রধান। এর আগে এই গোষ্ঠীটি জানদাল্লাহ বা আল্লাহর যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত ছিল। আবদুল মালেক রিগির বিরুদ্ধে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বোমা হামলা চালানো এবং যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্ট হিসেবে কাজ করার অভিযোগ আনা হয়। ২০১০ সালে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা বলছেন, ইরানে কয়েকটি বিস্ফোরণ এবং হামলার পেছনে জাইশ আল-আদলের হাত রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হচ্ছে ২০০৫ সালে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের ওপর হামলা। জাইশ আল-আদল যেসব হামলার দায় স্বীকার করেছে তাদের মধ্যে বেশির ভাগই সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে চালানো হয়েছে।

ইরান কেন পাকিস্তানে হামলা চালাল : ইরানের সামরিক বাহিনী বা রিভলিউশনারি গার্ড কোর ইরাক এবং সিরিয়ায় বিভিন্ন লক্ষ্যে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা চালানোর পরের দিনই এই বিমান হামলা চালানো হয়। পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র নীতি বিশেষজ্ঞ মুশাহিদ হুসাইন সাইদ বলেন, ‘এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের জন্য বিস্ময়কর ছিল।’

পাকিস্তান-ইরান উত্তেজনা : ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যকার সম্পর্কে সুসময় ও দুঃসময়-দুটোই ছিল। ইরানই প্রথম দেশ হিসেবে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং বিদেশে পাকিস্তানের প্রথম দূতাবাসও ইরানে স্থাপন করা হয়েছিল। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় তেহরান ইসলামাবাদকে সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামী বিপ্লব পাহলভি রাজবংশকে উৎখাত করে, এরপর পাকিস্তান ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানকে স্বীকৃতি দিলেও শাহের আমলের মতোন সুসম্পর্ক আর থাকেনি। বরং, ইরানের নতুন সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানের চির বৈরী ভারতের ঘনিষ্ঠ কৌশলগত সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটেনি। একই সঙ্গে, পাকিস্তান ও ইরান একে অন্যের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকে অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে।

১৯৯০-এর দশকে পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িকতা এবং শিয়া ছায়াযুদ্ধে উসকানি দেওয়ার জন্য ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। আর অন্যদিকে এ সময়ে কাবুলভিত্তিক তালেবান সরকারকে ইসলামাবাদের সমর্থন দেওয়া নিয়ে অস্বস্তি ছিল তেহরানের।

ভবিষ্যতে কী ঘটতে যাচ্ছে : যদিও একটি সর্বাত্মক যুদ্ধকে আপাতত অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে, আরও সংঘর্ষ বৃদ্ধির সম্ভাবনা এ অঞ্চলে অন্ধকার ছায়া ফেলেছে। সামনে সুন্দরভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সূক্ষ্ম কূটনীতি, আস্থা-নির্মাণের ব্যবস্থা এবং সংঘাতের মূল কারণগুলোকে মোকাবিলা করার সদিচ্ছা।

সর্বশেষ খবর