সোমবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
নীতীশ কুমারের ভেলকি

সকালে ইন্ডিয়া জোট ছেড়ে বিকালে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী

কলকাতা প্রতিনিধি

সকালে ইন্ডিয়া জোট ছেড়ে বিকালে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী

ভারতীয় রাজনীতিতে লোকসভা ভোটের হাতে গোনা কয়েক মাস আগে কার্যত নতুন চমক দেখালেন বিহারের নীতীশ কুমার। এতদিন কংগ্রেসের সঙ্গে ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়েছিলেন। কিন্তু গতকাল সকালে তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে দিয়েছেন ইস্তফা। তার হাত ধরে আরজেডির সঙ্গে নীতিশের জেডিইউর সরকারের পতন হয়। আবার বিকালেই বিজেপির এনডিএর সঙ্গে জোট গড়ে ফের মুখ্যমন্ত্রী হলেন। আর ভেলকি দেখালেন ইন্ডিয়া জোটকে।

বিহারের রাজনৈতিক এই নতুন পাশার চালে নীতীশ কার্যত জাতীয় রাজনীতিতেও বড় বার্তা দিয়ে দিয়েছেন। ২০০৫ সাল থেকে দেখলে, রাজনৈতিক পালাবদলের রাজনীতিতে নীতীশ এনিয়ে পাঁচবার শিবির বদল করলেন। এদিকে, ইন্ডি জোট ছেড়ে নীতিশের প্রস্থান ঘিরে পর পর কটাক্ষ আসছে বিজেপিবিরোধী শিবির থেকে। ইতোমধ্যেই মল্লিকার্জুন খাড়গে তাকে ‘আয়ারাম গয়ারাম’ বলে কটাক্ষ করেন। কটাক্ষ করতে ছাড়েননি কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ।

এনিয়ে নয়বারের জন্য রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী পদে বসলেন তিনি। রবিবার আরও আটজন বিধায়ক মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। এর মধ্যে বিজেপির তিনজন, জেডিইউর তিনজন, হিন্দুস্তানি আওয়ামী মোর্চার একজন এবং স্বতন্ত্র দলের একজন। উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন বিজেপির সম্রাট চৌধুরী এবং বিজয় সিনহা। রাজভবনে তাদের সবাইকে শপথবাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল রাজেন্দ্র বিশ্বনাথ আরলেখর। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা, বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জিতেন মাঝি প্রমুখ। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের পরই তাদের শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

পূর্ব ভারতের এই রাজ্যটিতে মহাজোট সরকারে ছিল জেডিইউ। কিন্তু এই জোটের অন্যতম শরিক দল লালু প্রসাদ যাদবের ‘রাষ্ট্রীয় জনতা দল’ (আরজেডি) ও কংগ্রেসের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে মতানৈক্যের কারণে দীর্ঘ ১৮ মাসের সম্পর্ক ছিন্ন করে বিজেপির হাত ধরলেন নীতীশ কুমার।

এর আগে এদিন সকালে দলের বিধায়কদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেন নীতীশ কুমার। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্তটি ঘোষণা করেন। পাশাপাশি রাজ্যটিতে এনডিএ সরকার গঠনের বিষয়ে সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাব পাস হয়।

সাংবাদিকদের নীতীশ জানান, ‘মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আমি ইস্তফা দিয়েছি। আরজেডি, কংগ্রেস এবং তিন বাম দলের সমন্বয়ে বিহারের মহাজোট ঠিকঠাক ছিল না। কয়েকদিন ধরেই আমার দলের নেতা-কর্মীসহ সবার কাছ থেকে মতামত ও পরামর্শ পাচ্ছিলাম। আমি তাদের সবার কথা মন দিয়ে শুনে আজ পদত্যাগ করলাম। এবং সেই সঙ্গেই বর্তমান সরকারের অবসান ঘটল।’

বিহার বিধানসভায় মোট আসন ২৪৩টি, ম্যাজিক ফিগার ১২২। এনডিএ জোটে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ৭৮, জেডিইউর ৪৫ জন, হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা-৪ এবং স্বতন্ত্র দলের একজন বিধায়ক রয়েছেন। রবিবার বিজেপির সমর্থনে নীতীশ কুমার সরকার গঠন করলেও আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি রাজ্য বিধানসভায় আস্থা ভোটে নিজেদের শক্তির প্রমাণ দিতে হবে জেডিইউ-বিজেপি জোট সরকারকে। তবে এবারই প্রথম নয়, ১৯৯৪ সালে লালু প্রসাদ যাদবের ‘রাষ্ট্রীয় জনতা দল’-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন নীতীশ। এরপর সাবেক কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্দেজের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গঠন করেছিলেন সমতা পার্টি। ১৯৯৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন নীতীশ কুমার এবং অটল বিহারি বাজপেয়ির মন্ত্রিসভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হন তিনি। কিন্তু হঠাৎ করেই ১৭ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে ২০১৩ সালে এনডিএ জোট থেকে বেরিয়ে আসেন নীতীশ কুমার এবং বিহারে আরজেডি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে মহাজোট তৈরি করে জেডিইউ। ২০১৭ সালে ফের একবার সেই মহাজোট ছেড়ে বেরিয়ে আসেন নীতীশ।

সর্বশেষ খবর