মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
অপারেশন ১০২৭

তিন মাসে পর্যুদস্ত মিয়ানমারের জান্তা সরকার

চলতি মাসে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের কাছে ছয়জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আত্মসমর্পণ করেছেন

একের পর এক শহর ও ঘাঁটি হারাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এর মধ্যে দুটি সদর দফতরও হারিয়েছে জান্তা বাহিনী। আর চলতি সপ্তাহেই হারিয়েছে ১০০ সেনা সদস্য। পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) ও জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র গ্রুপগুলোর তীব্র হামলার মুখে জান্তা বাহিনী পর্যুদস্ত হচ্ছে মিয়ানমারজুড়েই।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। এরপর থেকেই জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো। এতদিন বিদ্রোহী গ্রুপগুলো বিচ্ছিন্নভাবে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু গত বছরের ২৭ অক্টোবর থেকে বিদ্রোহীদের তিনটি সংগঠন মিলে ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স; নামে জোট গড়ে মিয়ানমারের বিভিন্ন জায়গায় জান্তাদের ওপর হামলা চালিয়ে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে।

জোটে যোগ দেওয়া তিন বিদ্রোহী দল হলো- তাঙ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), আরাকান আর্মি (এএ) এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এমএনডিএ)। আর জান্তাবিরোধী এই সম্মিলিত অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন ১০২৭’। তবে আরও অনেক স্বেচ্ছাসেবী জাতিগত বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে।

‘অপারেশন ১০২৭’ শুরু হওয়ার পরই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তাতমাদো। গত তিন মাসে অপারেশন ১০২৭ কতটা প্রভাব ফেলেছে, জান্তা বাহিনী কতটা ক্ষতির শিকার হয়েছে, তার একটি চিত্র তুলে ধরেছে সংবাদমাধ্যম ইরাবতী।

ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স অপারেশন ১০২৭ শুরু করে উত্তরের শান স্টেট থেকে। এ অভিযান চলাকালে অপমানজনক পরাজয়ের শিকার হওয়ার পাশাপাশি বিপুল লোকসানের সম্মুখীনও হয় জান্তা বাহিনী। জেট ফাইটার থেকে শুরু করে হেলিকপ্টার, ট্যাংক, সাঁজোয়া যান পর্যন্ত খোয়ায় তাতমাদো। দেশজুড়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ, গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর চলে যায় ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স এবং তাদের মিত্রদের হাতে। ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স উত্তর শান ও রাখাইন রাজ্যে অপারেশন ১০২৭-এর প্রথম তিন মাসে অন্তত ৮টি ট্যাংক, ১৬টি সাঁজোয়া যান এবং দুবার মাল্টিপল রকেট লঞ্চার জব্দ বা ধ্বংস করেছে। এমএনডিএ সবচেয়ে ১৬টি সাঁজোয়া যান ও ট্যাংক এবং দুবার মাল্টিপল রকেট লঞ্চার জব্দ করেছে। উত্তরাঞ্চলীয় শান স্টেটের চিনশোয়েহাও, মোনেকো, থেইন্নি, কুনলং ও লাউকাই শহর থেকে এগুলো দখল করা হয়েছে। ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর টিএনএলএ এবং মান্দালয় পিডিএফ সেনাদের একটি সম্মিলিত বাহিনী উত্তরাঞ্চলীয় শান স্টেটের নাউনঘকিও টাউনশিপে জান্তা বাহিনীর দুটি সাঁজোয়া যান ধ্বংস করে। এ ছাড়া টিএনএলএ উত্তর শানে আরও চারটি এবং রাখাইন রাজ্যে এএ আরও দুটি সাঁজোয়া যান দখল করে। এ ছাড়াও ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স গত তিন মাসে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ দখল করেছে। অস্ত্রের মধ্যে পিস্তল থেকে শুরু করে ভারী রকেট লঞ্চারও রয়েছে। শুধু তাই নয়, গত তিন মাসে ভারী অস্ত্রও খুইয়েছে জান্তা বাহিনী।

এদিকে চলতি মাসে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের কাছে ছয়জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আত্মসমর্পণ করেছেন। অভ্যুত্থানের পর আর কোনো মাসে এত বেশিসংখ্যক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আত্মসমর্পণ করেননি। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ইতিহাসে এই প্রথম ছয়জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একসঙ্গে আত্মসমর্পণ করলেন।

 

সর্বশেষ খবর