শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভারতের হলদওয়ানি শহরে তীব্র উত্তেজনা : কারফিউ জারি

সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন নিহত ও আড়াই শতাধিক আহত হয়েছে

কলকাতা প্রতিনিধি

অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের হলদওয়ানি শহরে গত বৃহস্পতিবার গোষ্ঠী সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন নিহত ও আড়াই শতাধিক আহত হওয়ার পর সেখানে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

শুক্রবার পুলিশ জানায়, সংঘর্ষটি পরিকল্পিত ছিল। হাই কোর্টের নির্দেশে হলদওয়ানি শহরের বনভুলপুরা এলাকায় ‘অবৈধভাবে নির্মিত’ একটি মাদরাসা এবং সংলগ্ন মসজিদ ভেঙে ফেলার সময় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, পৌরসভার কর্মীদের। তাদের ওপরও চড়াও হওয়ার পাশাপাশি ভাঙচুর চালানো হয় পুলিশের গাড়িসহ একাধিক যানবাহনে, পরে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি পুলিশকে ছোড়া হয় পাথর, অগ্নিসংযোগ করা হয় থানায়। উত্তেজিত জনতাকে হটাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এ ঘটনায় প্রায় আড়াই শতাধিক মানুষ আহত হয়। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই পুলিশ এবং পৌর কর্মী বলে জানা গেছে। খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমের কর্মী আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় গোটা উত্তরাখণ্ডে একটি উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে সরকার। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাতেই স্থানীয় কর্তৃপক্ষ হলদওয়ানি শহরজুড়ে কারফিউ জারি করে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। নৈনিতালে সব স্কুল ও কলেজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় হলদওয়ানির সব দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। সহিংসতাকারীদের ঠেকাতে ‘দেখা মাত্রই গুলি’র নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পার্শ্ববর্তী রাজ্য উত্তরপ্রদেশেও উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়। বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহনের ওপর কঠোর চেকিংয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গুজব ঠেকাতে সোশ্যাল মিডিয়ার কার্যক্রমের ওপর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গতকাল সকাল থেকেই সংঘর্ষকবলিত এলাকাগুলোতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আলাদা করে পুলিশ পিকেটিং বসানো হয়েছে বিভিন্ন পয়েন্টে।

নৈনিতালের জেলাশাসক বন্দনা সিং সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘ঘটনার যে ভিডিওগুলো সামনে এসেছে তাতে পরিষ্কার যে পুলিশ বা প্রশাসনের তরফে কাউকে উসকানি বা ক্ষতির চেষ্টা করা হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, সিসিটিভির মাধ্যমে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হচ্ছে। হাই কোর্টের আদেশের পরই জবরদখল করে রাখা সরকারি জায়গা খালি করা হচ্ছে। কিন্তু তা করতে গিয়েই মানুষ, সরকারি কর্মকর্তাদের অগ্নিসংযোগ করে মারার চেষ্টা করা হয়েছে।

জেলার সিনিয়র পুলিশ সুপার প্রহ্লাদ মীনা জানান, ‘মাদরাসা এবং মসজিদ বেআইনিভাবে সরকারি জমিতে নির্মাণ করা হয়েছিল এবং আদালতের আদেশ মেনে স্থাপনা দুটি ভেঙে ফেলা হচ্ছিল। এই পদক্ষেপ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয় মহিলাসহ বাসিন্দারা তার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে। হঠাৎ করেই উত্তেজনা চরমে পৌঁছায় এবং পুলিশের একটি টহল গাড়িসহ বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। পরে সন্ধ্যা নাগাদ বনভুলপুরা থানায়ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপরই জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ‘দেখামাত্র গুলি’ করার নির্দেশ জারি করেন।

 

 

সর্বশেষ খবর