শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দুই বছর

ফল ভোগ করবে কয়েক প্রজন্ম : জাতিসংঘ

যুদ্ধে ২১১ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে রাশিয়া। যুদ্ধ শেষে তা ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে

ফল ভোগ করবে কয়েক প্রজন্ম : জাতিসংঘ

দুই বছর পার করল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এ সময়ে ইউক্রেনের হাজারো সাধারণ মানুষ রুশ গোলায় নিহত হয়েছেন। গতকাল তাদের স্মৃতির উদ্দেশে ক্রেমাতর্স্কে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান স্বজনরা -এএফপি

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া। তার দুই বছর পূর্তির ঠিক আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার ট্যুর্ক গতকাল মন্তব্য করেছেন, এই যুদ্ধের ফল কয়েক দশক ধরে মানুষ ভোগ করবে। অবিলম্বে রাশিয়াকে যুদ্ধ বন্ধ করতে আহ্বান জানিয়ে ট্যুর্ক বলেছেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার পুরোদস্তুর আগ্রাসনের একটা ভয়ংকর মানবিক মূল্য রয়েছে। লাখ লাখ বেসামরিক মানুষকে অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়েছে। তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীন তদন্ত করার দাবিও তুলেছেন। তিনি বলেছেন, যারা অত্যাচারের শিকার হয়েছেন, তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

ট্যুর্ক বলেছেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ তৃতীয় বছরে প্রবেশ করতে চলেছে। এই যুদ্ধ থামার কোনো ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না। এর ফলে প্রচুর মানুষ ও পশুর মৃত্যু হয়েছে। ভয়ংকর ধ্বংসলীলা চলেছে। ইউক্রেনের লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। কয়েকশ হাসপাতাল ও স্কুল ধ্বংস হয়ে গেছে। ইউক্রেনের মানুষ কয়েক প্রজন্ম ধরে এর ফল ভোগ করবেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার মনিটরিং মিশন জানিয়েছে, ইউক্রেনে যুদ্ধের ফলে ১০ হাজার ৫৮২ জনের মারা যাওয়ার বিষয়টি তারা যাচাই করে দেখেছেন। এ ছাড়াও আরও অনেকে মারা যেতে পারেন। মৃতের সংখ্যা আরও অনেকটাই বাড়বে। এদিকে গতকাল ইউক্রেনের বন্দর ওডেসাতে রাশিয়ার ড্রোন হামলা হয়েছে। এর ফলে পরিকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে। কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের সংখ্যা জানা যায়নি।

ইউক্রেন যুদ্ধে দুই বছরে রাশিয়ার ব্যয় কত : ইউক্রেন যুদ্ধের দুই বছরে সম্ভবত ২১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে রাশিয়া। অভিযান চালানোর জন্য সেনাদের অস্ত্রে সজ্জিত, মোতায়েন ও রক্ষণাবেক্ষণে এই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে তারা। শুধু তাই নয়, অস্ত্র বিক্রি না করতে পারায় ১০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে মস্কো। এক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। আরেকটি বিশাল খরচ উল্লেখ করে ওই কর্মকতা বলেন, কৃষ্ণ সাগরে রুশ নৌবাহিনীর কমপক্ষে ২০টি মাঝারি থেকে বড় আকারের জাহাজ এবং একটি রুশ পতাকাবাহী ট্যাংকার ধ্বংস করেছে ইউক্রেন। তাছাড়া কিয়েভের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা এবং সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, দখলকৃত ক্রিমিয়ার উপকূলে একটি রুশ যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করেছে ইউক্রেন।

মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ধারণা করা হচ্ছে, সব মিলিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার ১.৩ ট্রিলিয়ন (১ হাজার বিলিয়নে এক ট্রিলিয়ন) মার্কিন ডলার খরচ হতে পারে। তাছাড়া এ পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ১৫ হাজার রুশ সেনা হয় নিহত বা আহত হয়েছেন।

পুতিন কি আগের চেয়ে শক্তিশালী : দুই বছর আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যখন ইউক্রেনে আক্রমণের নির্দেশ দেন, তখনো তাকে দেখে মনে হতো, তিনি বিপদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন। আর এখন মনে হচ্ছে পরিস্থিতি তার অনুকূলে। এ ছাড়া ক্ষমতার ওপর তার নিয়ন্ত্রণ কমে যাওয়ারও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। যুদ্ধের শুরুতে ইউক্রেনের ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে কিয়েভ থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয় রাশিয়ার সেনাবাহিনী। তবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই দেখা যাচ্ছে, রাশিয়াকে বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে মার্কিন নেতৃত্বাধীন নিষেধাজ্ঞাগুলো হয়তো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত মাসে ২০২৪ সালের জিডিপি বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে ২.৬ শতাংশ, যা আগের পূর্বাভাসের দ্বিগুণেরও বেশি। এ ছাড়া ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়ায় আগামী ১৫ মার্চের নির্বাচনে আবারও ক্ষমতায় আসছেন পুতিন।

প্যারিসে ইউক্রেন নিয়ে শীর্ষ বৈঠক : এই বৈঠকের উদ্যোক্তা হলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। প্রেসিডেন্টের অফিস জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধের দুই বছর শেষ হচ্ছে। এই সময় আবার সাহায্যকারী দেশগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর জন্য এবং ইউক্রেনকে সমর্থন করার জন্য আলোচনা করা দরকার। এই শীর্ষ বৈঠকে ইউরোপের অনেক দেশ অংশ নেবে। ফ্রান্সের কর্মকর্তারা জানিয়ছেন, ম্যাক্রোঁ রাশিয়াকে একটা বার্তা পাঠাতে চান। সেটা হলো, আমেরিকার সমর্থন নিয়ে সংশয় দেখা দিলেও ইউরোপ এখনো ইউক্রেনের সঙ্গে আছে।

টাউরুস দেওয়ার বিষয়ে এখনো নীরব জার্মানি : জার্মানির সবচেয়ে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র টাউরুস। কিন্তু ইউক্রেনকে টাউরুস ক্রুজ মিসাইল দেওয়া নিয়ে বিরোধীদের আনা প্রস্তাব পার্লামেন্টে খারিজ হয়ে গেছে। জার্মানির চ্যান্সেলর শলৎস এই ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভকে দেওয়া নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। তিনি মনে করেছেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র দিলে যুদ্ধের তীব্রতা আরো বাড়বে।

রাশিয়ার হামলার দুই বছর পূর্তির ঠিক আগে অস্ত্র ও গোলাবারুদের অভাবে ইউক্রেনের প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে সংশয় যখন বাড়ছে, ঠিক তখনই ইউরোপে সেই ঘাটতি মেটাতে বাড়তি তৎপরতা চলছে। মার্কিন কংগ্রেসে রাজনৈতিক জটিলতার কারণে ইউক্রেনের জন্য সহায়তা থমকে গেছে। ফলে ইউক্রেন রাশিয়ার কাছে আরও জমি হারাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর