রমজানের সময় পুরনো জেরুজালেম শহরের অলি-গলিতে অন্য সময়ের চেয়ে ভিড় বেশি থাকে। সব জায়গায় লাইটিং করা হয়। কিন্তু এবার তার কোনো কিছুই নেই। সবার কেবল একটিই চিন্তা, শেষপর্যন্ত কেমন যাবে এই রোজার মাস।
পুরনো জেরুজালেম শহরের সরু গলিগুলোতেও হাজার হাজার পুলিশ মোতায়েন করেছে ইসরায়েল। এসব অলিগলিতে লাখখানেক মুসলিমের বাস। তারা প্রতিদিন ইসলাম ধর্মের অন্যতম পবিত্র স্থান আল আকসা মসজিদে নামাজ পড়বেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। উম আম্মার জেরুজালেমের বাসিন্দা। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, এবারের রমজানে কোনো উচ্ছ্বাস নেই। পুরনো জেরুজালেমে আল ওয়াদের রাস্তায় দেখা হয়েছিল তার সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, সবার মনে একটি বিষয়ই কেবল ঘুরছে, গাজার সংঘাত। প্রতিদিন সেখানে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। তার মধ্যে প্রচুর নারী ও শিশু আছে। পাশাপাশি মানবাধিকার সংগঠনগুলো আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, সেখানে কার্যত দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই বাসিন্দা জানান, ‘আমরা তো ইফতার করব, কিন্তু গাজায় হয়তো হাজার হাজার মানুষ কিছু খেতেই পাবেন না। সেখানে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি।’ তার কাছে এবারের রমজান শোকের। প্রতিদিন কিছু অসহায় মানুষের জন্য প্রার্থনা করার মাস। শুধু উম আম্মা নন, গোটা অঞ্চলে একই রকম ভাবনা ভেসে বেড়াচ্ছে। হাসিম তাহা মসলার দোকান চালান। ডিডাবিউকে তিনি বলেছেন, ‘গাজায় যারা বসবাস করেন, তারা আমাদের লোক। তারা কষ্ট পাচ্ছেন। তা-ই আমরাও রমজানে কোনো আনন্দ করব না।’ রমজানের সময় পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত থাকবে বলে আশা করছেন অনেকে। কিন্তু একথা বলতে বলতেই তাহা সামনেই ইসরায়েলের পুলিশের দিকে আঙুল তোলেন। তার দোকান থেকে সামান্য দূরেই ইসরায়েল বর্ডার পুলিশের চেক পোস্ট। ফিলিস্তিনি যুবকদের আটকে তল্লাশি চালাচ্ছে তারা। তাহার বক্তব্য, ‘জীবন দুর্বিষহ করে তুলছে ওই পুলিশেরা।’ গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল হামাস। সেই তখন থেকে গাজায় অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলে। সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে রমজানের সময় পবিত্র আল আকসা মসজিদের সামনে বহু মানুষ জড়ো হন। ওই মসজিদের সামনে তারা নামাজ পড়েন। ফেব্রুয়ারি মাসে ইসরায়েলের অতি দক্ষিণপন্থি দলের সদস্য তথা দেশের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির ওই মসজিদের সামনে জমায়েতে কড়াকড়ি জারি করেছেন। বস্তুত, এর আগে সেখানে সমাবেত মানুষের সঙ্গে পুলিশের লড়াই হয়েছে। অশান্তি এড়াতেই ওই কড়াকড়ি জারি করা হয়েছে বলে ইসরায়েলের দাবি। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেন না।
তবে সম্প্রতি, গত ৫ মার্চ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর অফিস একটি নোটিস জারি করে। তাতে বলা হয়েছে, প্রথম সপ্তাহের জন্য মসজিদের সামনে জড়ো হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো কড়াকড়ি থাকবে না।তবে ফিলিস্তিনিদের অভিযোগ, পূর্ব জেরুজালেমে বিশেষ করে দামাস্ক গেটের কাছে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে। সেখানে ফিলিস্তিনি যুবকদের আটকে দেওয়া হচ্ছে। পশ্চিম তীর থেকে মানুষ এখানে এসে প্রার্থনা করতে পারবেন কি না, তা-ও এখনো বোঝা যাচ্ছে না।
যুদ্ধের মধ্যেই রোজার প্রস্তুতি : পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে গাজায় হাজার হাজার মৃত্যু ও আসন্ন দুর্ভিক্ষের মুখে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে মাসব্যাপী রোজার প্রস্তুতি নিচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। এমনিতে ফিলিস্তিনে উৎসবমুখর পরিবেশে রমজান শুরু হলেও এবার যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা স্থবির হয়ে পড়া ও ইসরায়েলি পুলিশের কড়া পাহারার মধ্যে মাসটি শুরু হচ্ছে।