রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
কেজরিওয়াল গ্রেফতারে তোলপাড়

ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎ কী?

কলকাতা প্রতিনিধি

ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎ কী?

কেজরিওয়াল

আবগারি দুর্নীতি মামলায় গত বৃহস্পতিবার ভারতের দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির (আপ) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ইতোমধ্যেই এ গ্রেফতারের প্রতিবাদে একযোগে সরব হয়েছেন বিজেপিবিরোধী দলগুলোর নেতারা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে অপব্যবহার করে প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি করার অভিযোগ এনেছে বিরোধীরা। সামনেই ভারতে ১৮তম লোকসভা নির্বাচন। ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত মোট ৭ দফায় চলবে ভোট গ্রহণ। ইতোমধ্যেই প্রথম দফার নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। এ নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের অন্যতম শরিক কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টি। আর সেই কেজিওয়ালকে গ্রেফতারের পর যেভাবে কংগ্রেস সংসদ সদস্য রাহুল গান্ধীসহ বিরোধী নেতারা একজোট হয়েছেন তাতে চিন্তার ভাঁজ বিজেপির কপালে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি, এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার, ডিএমকে প্রধান এম কে স্টালিন, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব, জম্মু-কাশ্মীরে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্সের সহসভাপতি ওমর আবদুল্লাহর মতো নেতারা কেজিওয়ালকে গ্রেফতারের নিন্দায় সরব হয়েছেন। অতি সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন কেজরিওয়ালের মন্ত্রিসভার দুই সদস্য দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনিশ শিসোদিয়া এবং ক্যাবিনেট মন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন এবং রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিং। তারা সবাই কারাগারে বন্দি। দুর্নীতির অভিযোগে এনিয়ে গত দুই মাসে গ্রেফতার হয়েছেন বিজেপিবিরোধী রাজ্যের দুই মুখ্যমন্ত্রী। তার একজন কেজিওয়াল, অন্যজন ঝাড়খণ্ডের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। গত ৩১ জানুয়ারি সোরেনকে গ্রেফতার করে ইডি। এর আগে গত ১৫ মার্চ তেলেঙ্গানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস) নেতা কে চন্দ্রশেখর রাও-এর মেয়ে কে কবিতাকে অর্থ পাচার সংক্রান্ত আইনে গ্রেফতার করেছিল ইডি। প্রতিটি ঘটনাতেই বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে প্রবল বিরোধিতা করা হয়েছিল। কিন্তু কেজরিওয়ালের গ্রেফতারের পর বিরোধিতার মাত্রা সবকিছুকেই ছাপিয়ে গেছে।

গত বছরের জুলাইয়ে ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠনের পরই আসন ভাগাভাগিসহ কয়েকটি ইস্যুতে শরিকদলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য তৈরি হয় ঠিকই। কংগ্রেসের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি দিয়ে মতবিরোধের কারণে পশ্চিমবঙ্গে একা লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। তাছাড়া জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার, আরএলডি নেতা জয়ন্ত চৌধুরীসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতা জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর এক প্রকার ফাটল তৈরি হয়। কেরালার বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস একে অপরের প্রতিপক্ষ হিসেবে লড়াই করছে।

এ পরিস্থিতিতে যখন আগামী ১৯ এপ্রিল দেশটিতে প্রথম দফার নির্বাচন শুরু হতে চলেছে, ঠিক তার আগেই কেজরিওয়ালের গ্রেফতার বিরোধীদের জন্য মনোমালিন্য দূরে সরিয়ে রেখে ফের কাছাকাছি আসার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।

প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগসহ একাধিক ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করার ক্ষেত্রে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র কাছে বড় হাতিয়ার হতে পারে।

আর কেজরিওয়াল ইস্যুতে বিরোধীদলগুলো যদি তাদের নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য দূরে সরিয়ে রেখে একে অপরের কাছাকাছি আসতে পারে তাতে আখেরে তাদেরই লাভ। বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা, ইন্ডিয়া জোটের দলগুলো যেভাবে কেজরিওয়ালকে খোলা সমর্থন জানিয়েছে, তা বিজেপিবিরোধী ভোটকে শক্তিশালী করতে পারে।

সর্বশেষ খবর