সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

ছয় মাসে হামাসকে কতটা বিপাকে ফেলতে পারল ইসরায়েল

প্রায় ১৩ হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে, যদিও তারা এই সংখ্যাটি কীভাবে গণনা করেছে তা জানায়নি। ছয় মাসে ৩৩ হাজারের বেশি বেসামরিক ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের একটি বড় অংশ নারী ও শিশু।

 

গাজায় ইসরায়েলের ধ্বংসযজ্ঞের ছয় মাস পার হয়েছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা গাজা থেকে ইসরায়েলে প্রবেশ করে। এর প্রতিশোধ নিতে ছয় মাস ধরে এ ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েল। শুরুতেই ইসরায়েল ‘হামাসকে চূর্ণ-বিচূর্ণ ও ধ্বংস করার’ ঘোষণা দিয়ে হামলা শুরু করে। তারা বলেছিল যাতে হামাস আর কোনো হুমকি সৃষ্টি করতে না পারে এবং ইসরায়েল যেন তাদের সব জিম্মিকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে পারে।

এ ছয় মাসে ৩৩ হাজারের বেশি বেসামরিক ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের একটি বড় অংশ নারী ও শিশু। গাজার বেশির ভাগ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গাজার প্রায় ২৩ লাখ মানুষের সবাই বাস্তুচ্যুত, অনাহারে দিন কাটাচ্ছে এবং ছোট্ট এ ভূখন্ডটিতে দুর্ভিক্ষ আসন্ন।

কতজন হামাস নেতা নিহত হয়েছেন : ৭ অক্টোবরের আগে, গাজায় হামাসের প্রায় ৩০ হাজার যোদ্ধা ছিলেন বলে ধারণা করা হয়েছিল, আইডিএফ কমান্ডারদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। হামাসের অনেক ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যেমন ইসমাইল হানিয়াহ, যাকে ওই সশস্ত্র গোষ্ঠীটির নেতা বলে ধরা হয়, তিনি বিদেশে থাকেন। তবে এর অনেক সামরিক নেতৃত্ব কাঠামো গাজার অভ্যন্তরে রয়েছেন বলে মনে করা হয়। এক সাম্প্রতিক বিবৃতিতে, আইডিএফ বলেছে যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তারা প্রায় ১৩ হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে, যদিও তারা এ সংখ্যাটি কীভাবে গণনা করেছে তা জানায়নি। ইসরায়েলও হামাস নেতাদের নাম প্রকাশ করে বলেছে যে তাদের হত্যা করা হয়েছে।

অক্টোবর থেকে এভাবে মোট ১১৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের অধিকাংশই যুদ্ধের প্রথম তিন মাসে নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এ বছরের মার্চ পর্যন্ত গাজায় হামাসের কোনো সিনিয়র নেতা নিহত হওয়ার খবর জানায়নি। ২৬ মার্চ, আইডিএফ বলেছে যে তারা হামাসের সামরিক শাখার ডেপুটি কমান্ডার মারওয়ান ইসাকে হত্যা করেছে। তাকে ইসরায়েলের মোস্ট ওয়ান্টেডদের একজন বলে ধরা হয়।

হামাসের সিনিয়র নেতা হিসেবে আইডিএফ এমন সব ব্যক্তির নাম প্রকাশ করে হামলায় নিহত হওয়ার দাবি করেছে, তারা আদৌ এ গোষ্ঠীর সদস্য কি না তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

গাজায় কতজন জিম্মি আছে : ইসরায়েলের সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ৭ অক্টোবর ২৫৩ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। এদের মধ্যে : ১০৯ জনকে বন্দি বিনিময়ের অংশ হিসেবে বা পৃথক চুক্তিতে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সামরিক অভিযানে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সরাসরি উদ্ধার করেছে তিনজনকে। ১২ জন জিম্মির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্যে তিনজন আইডিএফ তাদের একটি অভিযানে নিহত হয়েছে বলে স্বীকার করেছে। এখনো যেসব জিম্মি জীবিত আছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে তাদের মধ্যে কনিষ্ঠ জিম্মির বয়স ১৮ এবং সবচেয়ে বয়স্ক জন ৮৫ বছর বয়সী।

বাকি ১২৯ জন জিম্মির মধ্যে অন্তত ৩৪ জন মারা গিয়েছেন বলে ইসরায়েল জানিয়েছে। হামাস জানিয়েছে, আইডিএফের বিমান হামলার কারণে মৃত জিম্মির সংখ্যা আরও বেশি। কিন্তু এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে না।

হামাসের টানেল নেটওয়ার্ক কতটা ধ্বংস হয়েছে : হামাসকে নির্মূল করার অংশ হিসেবে, ইসরায়েল গাজার নিচে সশস্ত্র গোষ্ঠীটির বিস্তৃত টানেলের নেটওয়ার্ক ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যা তারা পণ্য আনানেওয়া এবং মানুষ সরানোর কাজে ব্যবহার করত। আইডিএফের মুখপাত্র জোনাথন কনরিকাস অক্টোবরে বলেছিলেন, ‘গাজা উপত্যকাকে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য একটি স্তর এবং তারপর হামাসের জন্য  আরেকটি স্তর হিসেবে ভাবুন। হামাস যে দ্বিতীয় স্তরটি তৈরি করেছে আমরা সেই দ্বিতীয় স্তরে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’

গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধ মানবতার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধকে মানবতার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা বলে অভিহিত করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার ও ইমার্জেন্সি রিলিফ বিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন গ্রিফিথস। এ যুদ্ধের ছয় মাস পূর্তির প্রাক্কালে দেওয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, প্রতিদিনই এ যুদ্ধে অধিক থেকে অধিক পরিমাণে নিরীহ মানুষ মারা যাচ্ছেন।  তাদের এ নিষ্ঠুর হামলায় এ পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ৩৩,১৩৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজায় কোথাও নিরাপদ জায়গা নেই। এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে গিয়ে মানুষ জীবন রক্ষা করবে। তার মন্তব্য গাজায় অবিবেচকের মতো আরও উত্তেজনা বৃদ্ধি করলে তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।

সর্বশেষ খবর