বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
ইসরায়েলে হামলা

ইরানের পেছনে রাশিয়া ও চীন

♦ চীন ইরানের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাস্তবিক সহযোগিতা এগিয়ে নিতে এবং সম্পর্ক আরও গভীর করতে প্রস্তুত রয়েছে ♦ অর্থনৈতিক জোট ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চীন, সাউথ আফ্রিকা) এর সদস্য হিসেবে ইরানকে সমর্থন দিচ্ছে রাশিয়া

মধ্যপ্রাচ্যে মিত্র গোষ্ঠী ও প্রক্সি বাহিনীর একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে ইরান। তাদের দাবি, সেটি ওই অঞ্চলে মার্কিন ও ইসরায়েলি স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ করতে গঠিত একটি ‘প্রতিরোধ অক্ষের’ অংশ। বিভিন্নভাবে ইরানকে সমর্থন করে থাকে এ নেটওয়ার্ক। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের মিত্রদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো সিরিয়া। সেখানে এক দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধের মধ্যে বাশার আল আসাদ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে রাশিয়ার পাশাপাশি সহায়তা করেছে ইরান।

আর ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হলো লেবাননের হিজবুল্লাহ। বেশ কয়েকটি শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠীকে ইরান সমর্থন করে। সিরিয়া ও জর্ডানে থাকা মার্কিন ঘাঁটিতে রকেট হামলা চালিয়েছে এসব গোষ্ঠী। জর্ডানে একটি সামরিক চৌকিতে থাকা তিন মার্কিন সেনার মৃত্যু হয়। তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের গবেষণায় বলা হয়েছে, শনিবারের হামলার পেছনে ইরানের সবচেয়ে বেশি শক্তি হিসেবে কাজ করেছে চীন ও রাশিয়ার সমর্থন।

ইরানের পক্ষে এ সমর্থনের বড় প্রমাণ হলো, ইসরায়েলের ওপর হামলায় মিসাইল গাইডেন্স সিস্টেম হিসেবে চীনের বেইদু স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম ব্যবহার করেছে, এর পাশাপাশি ব্যবহার করেছে রাশিয়ার গ্লনাস সিস্টেম। এ ছাড়া আগে জানা গিয়েছিল রাশিয়ার সঙ্গে ইউএভি (মনুষ্যবিহীন বিমান) তৈরির গবেষণা চালাচ্ছে ইরান। এ ধরনের কিছু ইউএভি ব্যবহার হয়েছে ইসরায়েলে হামলার সময়ে। শনিবারের হামলার পর চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ইরানকে বলেছেন, ভবিষ্যতে দেশ দুটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করতে পারবে। এ বার্তার মাধ্যমে ইসরায়েলে তেহরানের হামলার পরও দুই দেশের সম্পর্ক অটুট থাকার ইঙ্গিত দিলেন তিনি। সোমবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরআবদুল্লাহিয়ানকে এক ফোনকলে বলেন, ‘চীন স্থিরভাবে ইরানের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাস্তবিক সহযোগিতা এগিয়ে নিতে এবং চীন-ইরান সম্পর্ক আরও গভীর করতে প্রস্তুত রয়েছে।’ বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, চীন লক্ষ্য করেছে যে ইরান সীমিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ‘আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করেছে’।

উল্লেখ্য, ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে যুদ্ধবিমান থেকে হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে নিহত হন দেশটির শীর্ষস্থানীয় দুই সামরিক কর্মকর্তাসহ সাতজন। ওই হামলার পর শনিবার পাল্টা আক্রমণ করে ইরান। এই হামলার দিনদুয়েক আগেই আবার রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিবাকভ এক বিবৃতিতে জানান, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান পরিস্থিতিতে ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে রাশিয়া। ইসরায়েলের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর আঁতাতের ফলেই অশান্তি তৈরি হয়েছে, এমন ইঙ্গিত দেন তিনি। রাশিয়ার এ কর্মকর্তার বক্তব্যে বোঝা যায়, ইরানের পাশে আছে রাশিয়া। শুধু তাই নয়, অর্থনৈতিক জোট ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চীন, সাউথ আফ্রিকা) এর সদস্য হিসেবে গত বছর ইরান যুক্ত হয়েছে। এ জোটের সদস্য হিসেবেও ইরানকে সমর্থন দিচ্ছে রাশিয়া। ওয়াশিংটনের গবেষণা প্রতিষ্ঠান হাডসন ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ ফেলো কান কাসাপগলু বলেন, রাশিয়ার বিমান-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এবং অন্যান্য প্রযুক্তি যদি ইরান কাজে লাগায়, তবে ইসরায়েল হামলা করলে তার দাঁতভাঙা জবাব দিতে পারবে ইরান।

আপাতত সংঘর্ষ বিরতি থাকলেও একে অন্যের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছে ইরান ও ইসরায়েল। সোমবার ইসরায়েলের সেনাপ্রধান সাফ জানিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি পেলেই ইরানের হামলার কড়া জবাব দেওয়া হবে। অন্যদিকে ইরানের হুঁশিয়ারি, ইসরায়েল হামলা চালালে এমন অস্ত্র কাজে লাগানো হবে যা আগে কোনো দিন ব্যবহার করা হয়নি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর