শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

হামলা বন্ধ করতে ইসরায়েলকে বার্তা

‘অনেক হয়েছে আর না’ - নিরাপত্তা পরিষদ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন

ইসরায়েল রাফাতে সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখলে, তা অনিবার্যভাবে তাদের সঙ্গে ইইউর সম্পর্কের ওপর একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে

 

সাত মাসের বেশি সময় ধরে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করে চলছে ইসরায়েল। এ ইসরায়েলকে গাজা ও রাফায় সামরিক অভিযান ‘অবিলম্বে’ বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

বুধবার ইইউর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, ‘ইসরায়েল রাফাতে সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখলে, তা অনিবার্যভাবে তাদের সঙ্গে ইইউর সম্পর্কের ওপর একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’ একই দিন নিরাপত্তা পরিষদ কড়া বার্তা দিয়েছে ইসরায়েলকে। মঙ্গলবার অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলার শিকার হয়েছিলেন জাতিসংঘের দুই কর্মকর্তা। তার পরেই এ বার্তা এসেছে নিরাপত্তা পরিষদ ও ইইউয়ের পক্ষ থেকে। ইইউ ইসরায়েলকে রাফাতে তাদের সামরিক অভিযান অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে এবং তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ‘এটি গাজায় মানবিক সহায়তা বিতরণকে আরও ব্যাহত করছে এবং সেখানের লোকজনকে দুর্ভিক্ষের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।’ ইসরায়েলের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, ইসরায়েল রাফাহ ও এর আশপাশের ১০ লাখেরও বেশি লোকজনকে অন্য অঞ্চলে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, যা নিরাপদ বলে বিবেচিত হতে পারে না বলে জাতিসংঘ উল্লেখ করেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরও বলেছে, অবিলম্বে মানবিক কারণে ফিলিস্তিনি ত্রাণ শিবির ঘেরা রাফায় হামলা বন্ধ করা উচিত ইসরায়েলের। তা না হলে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে ২৭টি ইউরোপীয় রাষ্ট্রের গোষ্ঠী। যদিও ইসরায়েলেকে স্বস্তি দিয়ে অস্ত্র এবং গোলাবারুদ সরবরাহ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের বার্তা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

ইসরায়েলকে থামাতে হবে, আইসিজিতে দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদন : অনেক হয়েছে আর না। ফিলিস্তিনিদের বাঁচাতে হবে। আর এ জন্য রাফা অভিযানে ইসরায়েলকে অবশ্যই থামাতে হবে। গত সপ্তাহে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজি)-তে এ আবেদন করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বৃহস্পতিবার তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিআরটি এ খবর জানিয়েছে। গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে। এ অপরাধে অভিযুক্ত করে হেগে মামলা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই মামলার অংশ হিসেবে রাফাহ অঞ্চলে আক্রমণ বন্ধের আদেশ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, ফিলিস্তিনি জনগণের বেঁচে থাকা নিশ্চিত করার জন্য ইসরায়েলকে অবশ্যই থামাতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার এ আহ্বানের পরই বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে দুই দিনের শুনানি শুরু হয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা এর আগে বলেছে, ইসরায়েলকে জাতিসংঘের কর্মকর্তা, মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা এবং সাংবাদিক ও তদন্তকারীদের জন্য গাজায় নিরবচ্ছিন্নভাবে    সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

দেশটি আরও বলেছে, ইসরায়েল এখন পর্যন্ত আদালতের আগের আদেশ উপেক্ষা ও লঙ্ঘন করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যাটর্নি তেম্বেকা এনগকুকাইতোবি বলেছেন, ইসরায়েলের সামরিক হামলা কয়েক হাজার শিশু ও নারীকে হত্যা করেছে। শুধু তাই না, বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস ও ফিলিস্তিনিদের অনাহারে রেখেছে। তিনি আরও বলেন, শুরু থেকেই ইসরায়েলের উদ্দেশ্য ছিল ফিলিস্তিনিদের জীবন ধ্বংস করা এবং তাদের পৃথিবী থেকে মুছে ফেলা। দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক আইনজীবী আদিলা হাসিম বলেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই থামাতে হবে। আদালত তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে এমন একটি আদেশ দিক, যা ইসরায়েলকে থামিয়ে দেবে।

এদিকে জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান বুধবার আর্মি রেডিওকে বলেছেন, আদালত শুনানির জন্য যে নোটিস দিয়েছে তাতে পর্যাপ্ত আইনি প্রস্তুতির অনুমতি দেওয়া হয়নি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে প্রায় ৩৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

সর্বশেষ খবর