বুধবার, ২২ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

গ্রেফতারি পরোয়ানার উদ্যোগে মিত্রদের সমর্থনে ভয়ে ইসরায়েল

গ্রেফতারি পরোয়ানার উদ্যোগে মিত্রদের সমর্থনে ভয়ে ইসরায়েল

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি)। সংস্থাটির প্রসিকিউটর করিম খান ওই আবেদন করেছেন। যদিও ওই গ্রেফতারের আবেদনে হামাসের তিনজন নেতাও আছেন। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় এবং ইসরায়েলে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিতর অভিযোগ এনে এ আবেদন করেছেন তিনি। তার এ পদক্ষেপকে সমর্থন করেছে ইসরায়েলি মিত্র ইউরোপীয় তিনটি দেশ ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও স্লোভানিয়া। যা ইসরায়েলের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেও দুঃচিন্তায় পড়েছেন নেতানিয়াহু। এ নিয়ে আলোচনা করতে গতকাল ফ্রান্সে গেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। তবে শুধু নেতানিয়াহু নন। এ গ্রেফতারি পরোয়ানায় বিচলিত হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি আইসিসি কৌঁসুলিদের আবেদনের কঠোর নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এ ধরনের আবেদনের সিদ্ধান্ত ‘ভয়ংকর’। বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলছি, এ কৌঁসুলি যা-ই বোঝান না কেন, ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে কোনো তুলনা হতে পারে না। নিরাপত্তার হুমকি মোকাবিলায় আমরা সব সময় ইসরায়েলের পাশে আছি।’ হোয়াইট হাউসে জুইশ আমেরিকান হেরিটেজ মান্থ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাইডেন গাজা যুদ্ধ নিয়ে কথা বলেন। তার দাবি, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনী জাতিগত হত্যা (জেনোসাইড) চালাচ্ছে না।

তবে এ মামলা দায়ের ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলে ইসরায়েল বৈশ্বিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। গাজায় যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ঘনিষ্ঠ মিত্রদের কাছ থেকেও ক্রমবর্ধমান সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে দেশটি। এমনকি গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তিনটি দেশের সমর্থন ইসরায়েলের প্রতি পশ্চিমাদের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিই প্রকাশ করছে। এ নিয়ে অনেকটা চাপের মধ্যে রয়েছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলি নেতারা ছাড়াও হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার, মোহাম্মদ দেইফ এবং ইসমাইল হানিয়াহের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন করেছেন প্রসিকিউটর করিম খান। হামাসকে ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে পশ্চিমারা। ধারণা করা হচ্ছে, সিনওয়ার এবং দেইফ দুজনেই গাজায় গা ঢাকা দিয়ে আছেন। তবে হামাসের সর্বোচ্চ নেতা হানিয়াহ বর্তমানে কাতারে অবস্থান করছেন। তিনি প্রায়ই এ অঞ্চলে ভ্রমণ করে থাকেন। ইসরায়েলের মতো কাতারও আইসিসির সদস্য নয়।

গ্রেফতারি পরোয়ানা-সংক্রান্ত অনুরোধের বিষয়ে সোমবার রাতে এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে ইসরায়েলের মিত্র দেশ ফ্রান্স। ওই বিবৃতিতে দেশটি বলেছে, তারা ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, এর স্বাধীনতা এবং সব পরিস্থিতিতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইকে সমর্থন করে।’ ওই বিবৃতিতে ইসরায়েলকে ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইন কঠোরভাবে মেনে চলার বাধ্যবাধকতা এবং বিশেষ করে গাজা উপত্যকায় বেসামরিকদের অগ্রহণযোগ্য ক্ষয়ক্ষতির ও অপর্যাপ্ত মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার বিষয়ে ফ্রান্স কয়েক মাস ধরেই সতর্ক করে আসছে’ বলে উল্লেখ করা হয়। ফ্রান্সে একটি বিশাল ইহুদি সম্প্রদায় রয়েছে। ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্কও রয়েছে দেশটির।

অন্যদিকে সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে করা একটি পোস্টে বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাদজা লাহবিব বলেছেন, ‘অপরাধী নির্বিশেষে গাজায় সংঘটিত অপরাধের অবশ্যই সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিচার করা উচিত।’

সর্বশেষ খবর