বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

এবার আইসিসিকেই নিষিদ্ধ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

► আইসিসির চিফ প্রসিকিউটর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এবং তিন হামাস নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির অনুরোধ করেছেন। এতে বেজায় চটেছে যুক্তরাষ্ট্র
► ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা সিদ্ধান্তের সময় আইসিসির কৌঁসুলিদের সমর্থন করেছে দেশটি

 

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত-আইসিসির চিফ প্রসিকিউটর করিম খান ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এবং তিন হামাস নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির অনুরোধ করেছেন। এতে বেজায় চটেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বলছে, যদি আইসিসি সত্যিই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে তাহলে পাল্টা আইসিসিকেই নিষিদ্ধ করে দেবে যুক্তরাষ্ট্র।

সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্ট এবং তিন হামাস নেতা হানিয়েহ, সিনওয়ার ও দাইফের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির অনুরোধ করেছেন করিম খান। এর পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘আইসিসির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির ক্ষেত্রে রিপাবলিকানদের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে আমি রাজি।’ রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আইসিসির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করার জন্য মার্কিন কংগ্রেসের দুই দল যদি একসঙ্গে উদ্যোগ নেয়, তাহলে আপনি কি তা সমর্থন করবেন?’ বাইডেন জবাব দেন, ‘আমি আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে রাজি।’ বাইডেন জানিয়েছেন, ‘করিম খানের সিদ্ধান্ত ভুল। ইসরায়েল ও হামাসের তুলনা চলে না।’ তার মতে, ‘এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলে, যুদ্ধবিরতি ও পণবন্দিদের মুক্তি দেওয়া নিয়ে ইসরায়েল ও হামাস নেতাদের মধ্যে চুক্তিতে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়বে।’ পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ঘোষণা দিয়েছেন, ইসরায়েলের নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চাওয়া ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের প্রসিকিউটরদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়ে যে আলোচনা শুরু হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে একত্রে কাজ করবেন।

কংগ্রেসের এক শুনানিতে ব্লিঙ্কেনও বলেছেন, ‘সম্পূর্ণ ভুল এই সিদ্ধান্তের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিনি ‘প্রতিজ্ঞাবদ্ধ’। তার এই ঘোষণা এলো এমন সময় যখন আইসিসি কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য রিপাবলিকানদের চাপ বাড়ছে। খুব তাড়াতাড়ি, হয়তো এই সপ্তাহে এ বিষয়ে ভোট হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য দেশ নয়। কিন্তু ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানার সিদ্ধান্তের সময় আইসিসির কৌঁসুলিদের সমর্থন করেছে দেশটি। ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধ পরিচালনার বিষয়ে এই আদালতের তদন্তের পরিধি বাড়ায় কংগ্রেসে আইসিসির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের অন্তত দুটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এই মাসের শুরুতে টেক্সাসের রিপাবলিকান চিপ রায়ের উত্থাপন করা একটি বিলের সমর্থনে ক্যাপিটাল হিলে এর সমর্থন বাড়তে শুরু করে। সেই বিলে বলা হয়েছে, আইসিসির যেসব কর্মকর্তা এই মামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে তাদের যে কোনো ভিসা প্রত্যাহার এবং দেশের ভিতরে তাদের যেকোনো সম্পত্তি লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে।

এটা অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সুরক্ষিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার না করে। রিপাবলিকান হাউজের অন্তত ৩৭ জন আইনপ্রণেতা এই প্রস্তাব সমর্থন করেছেন। এদের মধ্যে রিপাবলিকান চেম্বারের তৃতীয় সর্বোচ্চ র‌্যাঙ্কিং এর এলিস স্টেফানিকও রয়েছেন।

 

ইসরায়েলের অবস্থান

ইসরায়েল মুখপাত্র মঙ্গলবার বলেছেন, ‘আইসিসি যাতে আপনাদের মনোভাব বুঝতে পারে, সেটা নিশ্চিত করুন। প্রসিকিউটরের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করুন। যদি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়, আপনারা তা রূপায়ণ করবেন না। কারণ, এটা শুধু আমাদের নেতার বিরুদ্ধাচরণ নয়, এটা আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন।’ উল্লেখ্য, হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইসরায়েল ও অন্য কয়েকটি দেশ।

জার্মানির সমালোচনা

জার্মানির চ্যান্সেলর শলৎসের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইসরায়েল ও হামাসকে তুলনা করার তীব্র নিন্দা করছে জার্মানি। কোনোভাবে এই তুলনা হতে পারে না। করিম খান তিন হামাস নেতার পাশাপাশি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে বলেছেন।

ফ্রান্সের বক্তব্য

এদিকে ফ্রান্স জানিয়েছে, তারা আইসিসির স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ৭ অক্টোবর হামাস যেভাবে ইসরায়েলে ঢুকে মানুষকে মেরেছে, ফ্রান্স তার তীব্র বিরোধিতা করেছে। আবার তারা ইসরায়েলকেও সাবধান করে দিয়ে বলেছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলাটা খুবই জরুরি।

সর্বশেষ খবর