বুধবার, ৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশকারীদের অ্যাসাইলাম নিষিদ্ধ

বাইডেনের নির্বাহী আদেশ

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশকারীদের অ্যাসাইলাম নিষিদ্ধ

মেক্সিকো সীমান্ত বেআইনিভাবে পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পদার্পণের পরই রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার বিদ্যমান রীতি রহিত করা হলো। মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশেষ এক নির্বাহী আদেশ জারি করলেন, যেখানে ঢালাওভাবে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার সুযোগ রহিত করা হলো। এমন বিদেশিদের গ্রেফতারের পরই নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে বেআইনিভাবে দক্ষিণের সীমান্ত অতিক্রমকারীর সংখ্যা দৈনিক গড়ে ১ হাজার ৫০০ জনের কম হলে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন গ্রহণ করা হবে এবং প্রচলিত রীতি অনুযায়ী অ্যাসাইলাম অফিসার সংশ্লিষ্ট বিদেশির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন। হোয়াইট হাউসের আহ্বানে এ বছরের শুরুতে, এমনকি গত সপ্তাহেও কংগ্রেসে উত্থাপিত একটি বিল রিপাবলিকানদের বিরোধিতায় নাকচ হয়ে যাওয়ায় প্রেসিডেন্ট এমন নির্দেশ জারি করলেন। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের ২১২(এফ) সেকশনে প্রশাসনকে এ এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। কারণ সেন্ট্রাল আমেরিকার দেশগুলো থেকে প্রতিদিন যে হারে মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়ছে, তা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। দৈনিক এ সংখ্যা ১০ হাজারেরও অধিক বলে সীমান্ত রক্ষীরা কংগ্রেসকে জানিয়েছেন। এর ফলে অ্যাসাইলামের আবেদন প্রসেসিং করা যেমন বিলম্বিত হচ্ছে, তেমনিভাবে ডিটেনশন সেন্টারে জায়গা হচ্ছে না। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অ্যাসাইলামের আবেদন অপেক্ষয়মাণ রেখে সংশ্লিষ্টদের প্যারোলে মুক্তি দিতে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। গত দুই বছরে এ ধরনের ২০ লক্ষাধিক বিদেশিকে মুক্তি দিয়েছে অভিবাসন দফতর, যার খেসারত দিতে হচ্ছে টেক্সাসের মতো সীমান্তবর্তী স্টেটগুলোকে। দক্ষিণের সীমান্ত সুরক্ষায় রিপাবলিকানরা বাইডেনের কঠোর সমালোচনা করছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, বাইডেন সীমান্ত খুলে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের স্বাগত জানাতে। নভেম্বরের নির্বাচনে তিনি জয়ী হলে সীমান্তকে একেবারে বন্ধ করার হুমকি দিয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতির জের পড়তে পারে নভেম্বরের নির্বাচনে- সে আশঙ্কা থেকেই প্রেসিডেন্ট বাইডেন বিশেষ এ নির্দেশ জারি করলেন বলে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নীতি-নির্ধারকরা মনে করছেন। এ নির্দেশ অনুযায়ী জোরপূর্বক অথবা চোরাই পথে সীমান্ত অতিক্রম ঠেকাতে বিশেষ পদক্ষেপের পাশাপাশি গ্রেফতারের পরই সংশ্লিষ্টদের বহিষ্কার করা হবে। রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন গ্রহণ করা হবে না। উল্লেখ্য, বেআইনিভাবে সীমান্ত অতিক্রমকারীর সংখ্যা সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা কমলেও সর্বশেষ রবিবার ৫ হাজারের অধিক বিদেশি ঢুকেছে এবং তাদের সীমান্ত রক্ষীরা আটকের পরই তারা রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছে। এর ফলে তাদের পরবর্তীতে নিকটস্থ ইমিগ্রেশন কোর্টে/অফিসে হাজিরার নোটিস ধরিয়ে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় দৈনিক ১ হাজার ৪৫০ জনের বেশি আবেদনের শুনানি করা যাচ্ছে না। এভাবে লাখ লাখ আবেদন পেন্ডিং রাখতে হচ্ছে- যেগুলোর অপেক্ষার সময় কয়েক বছর পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে। আর পেন্ডিং থাকা ব্যক্তিরা ওয়ার্ক পারমিট না পেয়ে নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ নিরাপদ জীবন-যাপনের অভিপ্রায়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশিও দালালের মাধ্যমে বহুদেশ ঘুরে মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছেন। অনেকের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদনের নিষ্পত্তি হয়নি এখনো।

বাইডেনের সর্বশেষ এ নির্দেশ অনুযায়ী ঢালাওভাবে প্রবেশকারীদের জন্য রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা একেবারেই অযোগ্য ঘোষিত হওয়ায় ঝুলে থাকা আবেদনের নিষ্পত্তির পথ সুগম হবে বলে আইনজীবীরা মনে করছেন। ৫ জুন থেকেই নয়া এ বিধি কার্যকর হবে।

 উল্লেখ্য, সীমান্ত সুরক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের অভিপ্রায়ে এ নির্দেশ জারি উপলক্ষে সীমান্তবর্তী সিটিগুলোর মেয়রকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং তাদের পাশে নিয়েই নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তবে এ আদেশ চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন মানবাধিকার নিয়ে কর্মরতরা। তারা বলছেন, এ নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে নিজ দেশে নিরাপত্তাহীনতায় নিপতিতদের নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হবে, যা কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান পছন্দ করে না, আন্তর্জাতিক আইনেরও পরিপন্থি। সুপ্রিম কোর্ট যদি এ বিধিকে কার্যকরে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার সুফলও বাইডেনের পক্ষেই আসবে বলে মনে করছেন ডেমোক্র্যাটরা। তখনো তারা ভোটারদের অবহিত করতে পারবেন যে, আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। এখন কংগ্রেসের দায়িত্ব সংবিধান অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার।

সর্বশেষ খবর