সোমবার, ১০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
গাজা ইসরায়েল যুদ্ধ

২৭৪ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে চার জিম্মি উদ্ধার

এ নৃশংস হত্যাকান্ডকে ‘রক্তাক্ত গণহত্যা’ বলে অভিযোগ করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস

ইসরায়েলি বাহিনী মধ্য গাজায় বিমান, স্থল ও জলপথে ব্যাপক হামলা চালিয়ে অন্তত ২৭৪ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। বিশেষ করে মধ্য গাজায় দেইর আল-বালাহ ও নুসেইরাত, দক্ষিণের রাফা শহর এবং উত্তরের গাজা সিটির বেশ কয়েকটি স্থানে হামলা ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে চার জিম্মিকে উদ্ধার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ নৃশংস হত্যাকান্ডকে ‘রক্তাক্ত গণহত্যা’ বলে অভিযোগ করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তিনি জরুরি ভিত্তিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনের আহ্বান জানিয়েছেন। এসব পরিস্থিতি উল্লেখ করে ইসরায়েলি বাহিনীর এ জিম্মি উদ্ধারের বিস্তারিত জানিয়েছে অনলাইন বিবিসি।  বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলিদের জন্য এ অভিযান স্বস্তি নিয়ে এলেও ফিলিস্তিনিদের জন্য তা আরও দুর্ভোগ তৈরি করেছে। ‘সিডস অব সামার’ নামে অভিহিত এ অভিযান অস্বাভাবিকভাবে দিনের বেলায় পরিচালনা করা হয়েছিল। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী এর মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে আরও বেশি চমকে দিয়েছে। সকালের মাঝামাঝি সময়ে সাধারণত রাস্তাগুলো ব্যস্ত থাকে। লোকজন নিকটবর্তী দোকানে কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকে। স্পেশাল ফোর্সের একজন কর্মকর্তা আহত হয়ে হাসপাতালে মারা গেছেন বলে ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে। ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার এডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, ‘এটা এনটেবিতে যে রকম অভিযান ছিল সেরকমই একটা’। তিনি বলেছেন, স্পেশাল কমান্ডোরা একই সঙ্গে নুসিরাত ক্যাম্পের দুটি আবাসিক অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালিয়েছিল যেখানে জিম্মিদের রাখা হয়েছে। একটা অ্যাপার্টমেন্টে ২৬ বছর বয়সী একজন জিম্মি নোয়া আরগামানি ছিল। অন্যটিতে ৪১ বছর বয়সী স্লোমি জিভ, ২৭ বছর বয়সি আন্দ্রে কজলভ এবং ২২ বছর বয়সি আলমগিমর জেন ছিল। হাগারি বলেন তারা খাঁচায় আটকা ছিল না কিন্তু রুমে তালাবদ্ধ ছিল যেখানে তাদের রক্ষীরা পাহারা দিচ্ছিল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বহু লোকের প্রাণ গেছে। আহতদের আল-আকসা মার্টিয়ার্স হাসপাতালে আনা হচ্ছিল, যাদের বেশির ভাগই শিশু ও মহিলা। মন্ত্রণালয় জানায়, বহু লোক হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে আছেন। চিকিৎসকরা তাদের কাছে থাকা মৌলিক চিকিৎসা সামগ্রী ব্যবহার করে তাদের বাঁচানোর চেষ্টা             চালিয়ে যাচ্ছেন।

ওষুধ ও খাবারের সংকট রয়েছে। জ্বালানির অভাবে হাসপাতালের প্রধান জেনারেটর কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। যে চার পণবন্দিকে আজ উদ্ধার করা হয়েছে তাদের গত ৭ অক্টোবর একটি গানের অনুষ্ঠান থেকে ধরে গাজায় নিয়ে গিয়েছিল ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস যোদ্ধারা।

এদিকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করেছেন হামাসের পলিটব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়া। তিনি বলেছেন, ইজরায়েল তাদের ইচ্ছা হামাসের ওপর চাপিয়ে দিতে পারবে না এবং ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না এমন কোনো চুক্তিও মানা হবে না। এক বিবৃতিতে হামাস প্রধান বলেছেন, ‘আমাদের সাধারণ মানুষ আত্মসমর্পণ করবে না এবং এ অপরাধী শত্রুদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি ইসরায়েলি দখলদাররা মনে করে তারা তাদের ইচ্ছা আমাদের ওপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দিতে পারবে, তাহলে তারা বিভ্রান্তিতে আছে।’ ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া মোবাইল ফোনের ভিডিওতে দেখা যায় ক্ষেপণাস্ত্রের বাঁশি এবং গোলাগুলির শব্দ শুনলে লোকজন আত্মরক্ষার জন্য নিচু হয়ে পড়ছে। আশ্রয়শিবির নুসিরাতে আশ্রয় নেওয়া নোরা আবু খামিস কান্নায় ভেঙে পড়ে বিবিসিকে বলেন, ‘আমি আমার সন্তানের শরীরের অপ্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করেছি, আমার প্রিয় সন্তান’। ‘আমার আরেক সন্তান জীবন মৃত্যুরসন্ধিক্ষণে। এমনকি আমার স্বামী-শাশুড়ি ও পুরো পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। এটা একটা গণহত্যা’।

সর্বশেষ খবর