নরেন্দ্র মোদি যেভাবে বিশ্ব মঞ্চে ভারতকে তুলে ধরেছেন তা সবচেয়ে জনবহুল দেশটির সাম্প্রতিক আর কোনো নেতা করতে পারেননি। ভারতের লোকসভা নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো বিজেপি জয়ী হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদি আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। মোদি ভারতকে ও এর দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিকে জলবায়ু পরিবর্তন ও উন্নয়নের মতো বৈশ্বিক ইস্যুগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা একটি পক্ষ করে তুলেছেন। পাশাপাশি নয়াদিল্লিকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান নিরাপত্তা অংশীদার এবং গ্লোবাল সাউথের একটি উচ্চাকাক্সক্ষী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ভারতকে আরও সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ফের পাঁচ বছরের জন্য সুযোগ পেলেন ৭৩ বছর বয়সী মোদি। একই সময়ে প্রতিবেশী পারমাণবিক ক্ষমতাধর চীন ও পাকিস্তানকেও মোকাবিলা করতে হবে মোদি সরকারকে। তবে এক দশকের মধ্যে এখন ভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি মোদি ও তার দল। কারণ আগের দুই মেয়াদের মতো এককভাবে সরকার গঠন করতে পারছে না। সে জন্য জোটের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে তাদের। এমন পরিস্থিতি মোদি ও তার দলের জন্য চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করা হচ্ছে। ইসলামোফোবিয়া ও ধর্মীয় সংঘাত ছড়ানোর ক্ষেত্রে মোদি ও তার দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে রয়েছে ব্যর্থতা। এর মধ্যে অন্যতম হলো বেকারত্ব। দ্য আনফিনিসড কোয়েস্ট : ইন্ডিয়া সার্স ফল মেজর পাওয়ার স্ট্যাটাস ফরম নেহেরু টু মোদি গ্রন্থের লেখক টি ভি পল বলেন, বিভিন্ন এজেন্ডায় সরকার টিকিয়ে রাখতে মোদিকে এখন অনেক সময় দিতে হবে। অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে তাকে। মোদির নতুন মেয়াদে দিল্লির সঙ্গে ওয়াশিংটনের যে সম্পর্ক রয়েছে তাতে কোনো ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। কারণ ভারত যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কোয়াড (চতুর্ভজ) নিরাপত্তা জোটের একটি পিলার ভারত। ক্রমবর্ধমানভাবে শক্তিশালী ও দৃঢ় হয়ে ওঠা চীনের বিষয়ে একই ধরনের উদ্বেগের মুখে প্রতিরক্ষা ও উচ্চপ্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা বিস্তৃত করে তুলছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। লোকসভা নির্বাচনে জয়ের পর মোদিকে অভিনন্দন জানিয়ে পাঠানো এক বার্তায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বন্ধুত্বের জয়গান গেয়ে বলেছেন, ‘আমরা সীমাহীন সম্ভাবনার একটি যৌথ ভবিষ্যতের দ্বার উন্মোচনের পর থেকে (এ সম্পর্ক) কেবল বাড়ছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচনে মোদির নড়বড়ে জয়ের পর বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে, নতুন সরকার দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলে নাকি নমনীয় অবস্থান নেয়। গত এক দশকে হিন্দু জাতীয়তাবাদ কেবল দেশের অভ্যন্তরে বিভাজন ও সহিংসতা উসকে দেওয়াই নয়, বরং তারা দেখিয়েছে কীভাবে এ অঞ্চলে বিশেষত পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত উসকে দিতে হয়। প্রায়শই বিজেপির উত্তপ্ত বাগাড়ম্বরের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে পাকিস্তান।