পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ৯ থেকে ১২ জুলাই ওয়াশিংটনে শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। তবে এবার জোটটির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন ওঠা শুরু করেছে। ইউরোপের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক পালাবদলের সম্ভাবনা সামরিক জোট ন্যাটোর গতিপথ প্রশ্নের মুখে ফেলছে। এর মাঝে এ জোট বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন নিয়ে যথেষ্ট সোচ্চার এবং ইউক্রেনকে চোখ বন্ধ করে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে সহায়তা অটুট রাখতে শীর্ষ সম্মেলনের আগেই নেওয়া হচ্ছে উদ্যোগ। এবারের শীর্ষ সম্মেলনে বিষয়টি বাড়তি গুরুত্ব পাবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।

রাশিয়ার হামলার মুখে ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর লাগাতার সমর্থন এতকাল সম্ভব হলেও ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে কিছু রাজনৈতিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা সে নিশ্চয়তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে।

ন্যাটোর বিদায়ী মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ গুরুত্বপূর্ণ এ শীর্ষ সম্মেলনে বিঘ্ন এড়াতে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিচ্ছেন। তিনি একাধিক সদস্য দেশ সফর করে ঐকমত্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। গত বছরের সম্মেলনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান সুইডেনের প্রার্থিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ঐক্যে চিড় ধরিয়েছিলেন। এবারের সম্মেলনে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে আপত্তি জানাতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশেষ করে ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তার ক্ষেত্রে ন্যাটোর কেন্দ্রীয় ভূমিকার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন তিনি। তবে স্টলটেনবার্গের বুদাপেস্ট সফরের পর তিনি সে উদ্যোগে বাধা সৃষ্টি না করার আশ্বাস দিয়েছেন। স্টলটেনবার্গের উত্তরসূরি হিসেবে নেদারল্যান্ডসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের প্রতিও শেষ পর্যন্ত সমর্থন দেখিয়েছেন ওরবান। ওরবানের মতো নেতার সম্মতি আদায় করা ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠলেও পশ্চিমা জোটের মূল দুশ্চিন্তা যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক পালাবদল নিয়ে। ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার হোয়াইট হাউসে পা রাখলে ন্যাটোর ঐক্যে চিড় ধরতে পারে, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ‘রামস্টাইন প্রক্রিয়া’ নামের কাঠামোর আওতায় প্রায় ৫০টি দেশের সঙ্গে ইউক্রেনের জন্য সামরিক সাহায্যের সমন্বয় করে চলেছে। ন্যাটো এখনো সরাসরি ইউক্রেনের     জন্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা না দিলেও ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে।

ন্যাটো এখনো সরাসরি ইউক্রেনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা না দিলেও ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। তিনি ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তায় কাটছাঁট করলে ন্যাটোকেই হয়তো সে ঘাটতি মেটাতে হতে পারে।

ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা অটুট রাখতে নানা ধরনের আইনি নিশ্চয়তার উদ্যোগ চলছে। ইতালিতে জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন ১০ বছরের নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর আওতায় ভবিষ্যতে ইউক্রেনে আবার হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। তবে বাইডেনের আমলেও যুক্তরাষ্ট্র এবং সহযোগী দেশ জার্মানি ইউক্রেনের জন্য সহায়তার ক্ষেত্রে ‘অতি সতর্ক’ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে ন্যাটোর অনেক সদস্য মনে করে।

ন্যাটো : ১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত একটি সামরিক সহযোগিতা জোট। ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো পারস্পরিক সামরিক সহযোগিতা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ। ডয়চে ভেলে

আটলান্টিক মহাসাগরের দুই পারে অবস্থিত উত্তর আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা এবং ইউরোপের অধিকাংশ দেশ এ জোটের সদস্য। এ ছাড়া তুরস্কও এ জোটের সদস্য। প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ১২টি। ন্যাটোর বর্তমান সদস্য দেশের সংখ্যা ৩২।

সংস্থাটির বর্তমান সদর দফতর যদিও বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে, আগে এর সদর দফতর ছিল ফ্রান্সের প্যারিসে। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে তুরস্ক ও আলবেনিয়াই কেবল মুসলিম দেশ।