মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

গরম থেকে প্যারিস রক্ষার উদ্যোগ

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস এখন কাঁপছে বিশ্ব ক্রীড়ার সবচেয়ে বড় আসর অলিম্পিককে ঘিরে। আগামী শুক্রবার থেকে শুরু হবে ক্রীড়ার এই আসর। তবে প্রতিযোগিতার প্রস্তুতিকে ঘিরে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা ছিল শহরটির উত্তাপ। আপাতত অবশ্য সেই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত। তবে ভবিষ্যতে প্রবল উত্তাপ থেকে তিলোত্তমা এই শহরকে রক্ষার উদ্যোগ এখন থেকে নেওয়া হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা ও অন্যান্য কারণে বিশেষ করে দেশটির শহরাঞ্চলের তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। প্যারিসের পৌর কর্তৃপক্ষ গ্রীষ্মকালে প্রবল উত্তাপ থেকে মানুষ ও ভবনগুলোকে রক্ষা করতে একাধিক পদক্ষেপ নিচ্ছে।

সাম্প্রতিক এক গবেষণার ফল অনুযায়ী, ১৮৮৫ সাল থেকে প্যারিসের গড় তাপমাত্রা দুই দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। সে তুলনায় ফ্রান্সের বাকি অংশে সেই বৃদ্ধির হার ছিল এক দশমিক সাত ডিগ্রি। তাই পৌরসভা এখন শহরটিকে শীতল করার লক্ষ্যে কোটি কোটি ইউরো বিনিয়োগ করেছে। প্যারিসের ডেপুটি মেয়র ডান লেয়ার বলেন, ‘‘এই ঐতিহাসিক শহর নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল। এটি বিশ্বের সবচেয়ে ঘনভাবে নির্মিত শহরগুলোর একটি। সে কারণে শহরটি আসলে চুলার মতো। আরও বড় এলাকা জুড়ে ছড়ানো বসতির তুলনায় অনেক বেশি গরম। সেন্ট মার্টিন খাল ইতোমধ্যেই সাঁতারের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা সেন নদীর তীরে তিনটি জায়গা স্নানের জন্য খোলার পরিকল্পনা করছি। কংক্রিটের বদলে মাটি ব্যবহারের একটা পরিকল্পনা রয়েছে। সেই মাটি বৃষ্টির পানি টেনে নিয়ে বাতাস শীতল করতে পারবে। আমরা সংস্কারের মাধ্যমে পাবলিক ভবনগুলোও ইনসুলেট করছে।’

শহরের অনেক চত্বর ইতোমধ্যেই সবুজ গাছপালায় ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেমন প্লাস দ্য লা নাসিঁও। প্যারিসের দক্ষিণের এই রাউন্ডঅ্যাবাউটটিকে ‘আর্বান ফরেস্ট-এ রূপান্তরিত করা হচ্ছে। কারণ গাছপালাও শহরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে। সেইসঙ্গে সেন নদী শুধু খোলা আকাশের নীচে সুইমিং পুল হয়ে উঠছে না, এখনই সেটি শহরের উত্তাপ কমাতেও অবদান রাখছে। সেই পরিবেশবান্ধব কুলিং সিস্টেমের নাম ‘ফ্রেশ্যোর দ্য পারি।’ মাটির নীচে পানির পাইপের সেই নেটওয়ার্ক শহরজুড়ে ৭০০-রও বেশি ভবনের ওয়াটার টিউব সিস্টেমের সঙ্গে যুক্তর। সেই প্রণালীর অন্যতম প্রধান প্লান্টে গেলে বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। প্রণালীর মহাসচিব রাফায়েল নাইরাল বলেন, ‘‘এই পাম্পগুলি বরফের মতো শীতল পানি সিস্টেমে ঠেলে দেয়। কিন্তু সেই প্রক্রিয়ায় পানি শীতল করার রেফ্রিজারেশন ইউনিটগুলি গরম হয়ে ওঠে। সেই উত্তাপ সেন নদীতে বিলীন হয়ে যায়।

নদীর পানি দ্বিতীয় এক সার্কিটের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। প্রচলিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ইউনিটের তুলনায় এই প্রণালী চালাতে অর্ধেক পরিমাণ বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়।’

প্যারিসের মেয়র জানান ‘ফ্রেশ্যোর দ্য পারি’ ইতোমধ্যেই লুভ্র মিউজিয়াম ও প্যারিস সিটি হলের মতো জায়গাগুলিকে শীতল রাখতে সাহায্য করছে। কিন্তু ফ্রান্সের এক বিশেষজ্ঞের মতে, নদীর পানি ব্যবহার করে চালানো এয়ার কন্ডিশানিং সিস্টেম অন্তহীনভাবে সম্প্রসারণ করা সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে ‘ফ্রেশ্যোর দ্য পারি’ স্কুলগুলির সঙ্গেও সংযুক্ত করা হবে বলে জানানো হয়েছে। কয়েকটি স্কুল ইতোমধ্যেই আরো সবুজ সড়ক ও পথচারীদের জন্য নির্দিষ্ট এলাকার সুবিধা ভোগ করছে। সেইসঙ্গে গোটা শহর জুড়ে রাজপথে গাড়ির অংশ কমিয়ে সাইকেলের ট্র্যাক আরো বাড়ানো হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর