বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

সিক্রেট সার্ভিস প্রধানের পদত্যাগ দাবিতে উত্তপ্ত মার্কিন কংগ্রেস

সিক্রেট সার্ভিস প্রধানের পদত্যাগ দাবিতে উত্তপ্ত মার্কিন কংগ্রেস

ডোনাল্ড ট্রাম্প

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলার ঘটনায় সোমবার দেশটির কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান সদস্যরা সিক্রেট সার্ভিস প্রধান কিম্বার্লি সিটলের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের অনেকে সরাসরি তাঁকে পদত্যাগ করতে বলেছেন। হামলার ঘটনায় নিরাপত্তাজনিত ব্যর্থতার দায় সম্পূর্ণ নিজের কাঁধে নিলেও দায়িত্ব থেকে সরে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন সিক্রেট সার্ভিস প্রধান।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহে ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার জন্য পরিচালিত হামলার ঘটনায় অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনো মেলেনি। এখনো তদন্ত করছে এফবিআই। এর মধ্যেই মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের মুখোমুখি হয়েছেন কিম্বার্লি সিটল। সেখানে তাঁকে একের পর এক ঝাঁজালো প্রশ্নে বিদ্ধ করেন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান সদস্যরা। ওই ঘটনার কোনো প্রমাণ নিয়ে তিনি কেন উপস্থিত হলেন না, তা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন কিম্বার্লি।

ডেমোক্র্যাট সদস্য মেলানি স্ট্যান্সবারি কিম্বার্লি সিটলের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি-আজকে যে উত্তরগুলো এখানে পাওয়া গেছে সেগুলো একদমই অগ্রহণযোগ্য।’

রিপাবলিকান সদস্য জেমস কোমার বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আপনার পদত্যাগ করা উচিত।’

যুক্তরাষ্ট্রের সব দলের হিসাব একপাশে রেখে ডেমোক্র্যাট সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিয়ো-কোর্তেজ বলেন, ‘একজন সাবেক প্রেসিডেন্টের ওপর হামলা হয়েছে আজকে ১০ দিন হলো। এ ঘটনার উত্তর অবশ্যই দিতে হবে।’

তবে নিরাপত্তাজনিত ব্যর্থতার অভিযোগ থেকে নিজেকে এড়িয়ে নেননি সিক্রেট সার্ভিস প্রধান। সব দায় নিজের কাঁধে নিয়ে বলেছেন, ‘সিক্রেট সার্ভিসের প্রধান হিসেবে এ ঘটনায় নিরাপত্তাজনিত যত ব্যর্থতা রয়েছে তার সব দায় আমি গ্রহণ করছি। আমরা এ ব্যর্থতার জন্য একটি অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান করছি। ৬০ দিনের মধ্যে এর রিপোর্ট পাওয়া যাবে।’ রিপাবলিকান সদস্য অ্যান্ডি বিগস তাঁর প্রশ্নে বলেন, ‘আপনাদের কাছে কি কোনো গোয়েন্দা তথ্য ছিল না? সেদিন আপনারা কেন ট্রাম্পকে স্টেজে উঠতে বাধা দেননি?’ এর জবাবে কিম্বার্লি বলেন, ‘গুলির ঘটনার আগে আমাদের কাছে বেশ কয়েকবার সন্দেহভাজন লোকের তথ্য এসেছে। আমাদের কাছে সব সময় এ রকম তথ্য এসে থাকে। তার মানে এ নয় যে সব ঘটনাতেই হুমকি থাকে।’

আরেক রিপাবলিকান সদস্য ভার্জিনিয়া ফক্স সরাসরি সিক্রেট সার্ভিস প্রধানের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘এ দেশে সিক্রেট সার্ভিস প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য আপনি নিজেকে সঠিক মনে করেন?’

জবাবে কিম্বার্লি বলেন, ‘বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সিক্রেট সার্ভিস প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য আমিই সেরা।’

প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে ডেমোক্র্যাট সদস্য জেমি রাসকিন বলেন, ‘সিক্রেট সার্ভিস প্রধানের ওপর আস্থা হারিয়েছে কংগ্রেস। দেশের ইতিহাসে এটি খুবই জরুরি একটি মুহূর্ত। আমাদের এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে এফবিআইয়ের সাবেক স্পেশাল এজেন্ট ববি চাকন সিএনএনকে বলেন, ‘সব রাজনৈতিক পক্ষ আজ কংগ্রেসে একমতে পৌঁছেছে। আমার মনে পড়ে না শেষ কবে মার্কিন কংগ্রেসে এমনটা হয়েছে। সিক্রেট সার্ভিস প্রধানের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন সবাই। বলতে গেলে কিম্বার্লি একাই সবকিছু সামলেছেন। তাঁর পক্ষে কাউকে অবস্থান করতে দেখা যায়নি।’

কিম্বার্লির পদত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না তাঁর এখন পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত। কারণ একটি তদন্ত চলমান রয়েছে। যখন ট্রাম্পের ওপর হামলা হয় তখন কিম্বার্লি সিক্রেট সার্ভিস প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। তাই নিরাপত্তাজনিত যেসব ঘাটতি হয়েছে সেসবের জন্য কিম্বার্লি দায়ী। শঙ্কার বিষয় হলো, যদি এ পদ থেকে তিনি সরে যান তাহলে তদন্তে বিঘ্ন হবে। রিপোর্ট সময়মতো না-ও পাওয়া যেতে পারে। তা ছাড়া দায়িত্ব ছেড়ে দিলে কিম্বার্লি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আইনের আশ্রয়ও নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে পুরো প্রক্রিয়া আরও বেশি ধীরগতিতে এগোবে।’

এফবিআইয়ের সাবেক এই স্পেশাল এজেন্ট বলেন, ‘এখন প্রধানের দায়িত্বে আছেন কিম্বার্লি, তাই তাঁকে যখন খুশি তখন তলব করা যাবে। জেরা করা সম্ভব হবে সহজে। তাই কিম্বার্লিকে যদি সরাতেই হয় তাহলে সেটা তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর করলে মঙ্গলজনক হবে বলে আমার বিশ্বাস।’

সর্বশেষ খবর