বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে গাজা সর্বশেষ হামলায় নিহত ৭১

ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে গাজা সর্বশেষ হামলায় নিহত ৭১

গাজায় সাড়ে আট মাস ধরে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েল। বিশ্ব সম্প্রদায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সেখানে প্রায় অর্ধ লক্ষ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। খান ইউনিসে ধ্বংসস্তূপে বসে একজন মা সন্তানকে নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পানে তাকিয়ে আছেন -এএফপি

ফিলিস্তিনের গাজায় পুরোপুরি স্থবির জনজীবন। একের পর এক ইসরায়েলের গণবিধ্বংসী হামলায় প্রাণ হারাচ্ছেন ফিলিস্তিনের নারী, শিশু ও বেসামরিক জনগণ। গত ৯ মাস টানা উপত্যকাটিকে এক ভয়াবহ মৃত্যুপুরী বানিয়েছে ইসরায়েলের সেনারা। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে যুদ্ধের দাবানলে গাজাকে পুরোপুরি ধ্বংস না করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিস্তার হবেন না। তার নির্দেশে গাজায় নৃশংস হত্যাকান্ড চালাচ্ছে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)। আন্তর্জাতিক চাপ থাকলেও প্রতিনিয়ত গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে বিমান হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা দেইর আল-বালায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে ওই এলাকার শরণার্থী শিবিরগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের ওই হামলায় কমপক্ষে ৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন কয়েক ডজন মানুষ। বহু বাস্তুচ্যুত মানুষের তাঁবুতে আগুন ধরে গেছে। তারা তাদের বাসস্থান হারিয়েছেন। গণমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, গাজার গুরুত্বপূর্ণ শহর খান ইউনিস থেকে আল মাওয়াসির দিকে পালিয়ে যাওয়া বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর ওপরও ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সেখানেও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে গাজার বেসামরিক লোকজনের অবস্থা ভয়াবহ। এ ছাড়া পশ্চিম তীরেও ফিলিস্তিনিদের ওপর অমানবিক আচরণ করছে তেল আবিব। সেখান থেকে জোরপূর্বক স্থানীয় বাসিন্দাদের উৎখাত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। দখলকৃত পশ্চিম তীরে এ পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনিকে নির্দিষ্ট স্থানে আটক করেছে ইসরায়েল। গাজায় এখন নিরাপত্তাহীনতা চরম আকার ধারণ করেছে। সেখানকার মানুষের ন্যূনতম নিরাপত্তাও মিলছে না। ইসরায়েল এমনভাবে তাদের নৃশংসতা জাহির করছে, যা থেকে নিস্তার পাচ্ছে না মায়ের কোলের শিশুরাও। সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর ওপরেও ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংসতার কথা জানা যাচ্ছে। হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উপত্যকাটিতে ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৬ হাজার ১৭২ ফিলিস্তিনি শিশুকে হত্যা করেছে তেল আবিবের বাহিনী। এ ছাড়া পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিখোঁজ রয়েছে প্রায় ২১ হাজার শিশু। উপত্যকাটিতে হামাস নির্মূলের নামে এভাবে নির্বিচারে শিশুদের হত্যা করছে ইসরায়েল। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার’ অভিযোগ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এ ছাড়া ওই আদালতের প্রধান প্রসিকিউটর করিম খান ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং হামাস প্রধানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানিয়েছেন। তবে এসব আন্তর্জাতিক নিন্দা বা উদ্বেগ কোনোটাই গায়ে মাখছে না ইসরায়েল। তারা গাজায় ‘গণহত্যা’ চালিয়ে যাচ্ছে। উপরন্তু সেখানে তারা দিন দিন হামলা জোরদার করছে। গত ৯ মাসে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় নিহত হয়েছেন ৩৯ হাজার ৬ ফিলিস্তিনি। এ ছাড়া তেল আবিবের হামলায় আহতের সংখ্যা প্রায় ৯০ হাজার ছুঁই ছুঁই। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে আলজাজিরা জানিয়েছে, গাজায় বেসামরিক বাসিন্দা হতাহতের পাশাপাশি সেখানে বিভিন্ন সংস্থার কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরও হত্যা করেছে ইসরায়েল। এ পর্যন্ত গাজায় সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশন করতে গিয়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৬৩ জন গণমাধ্যমকর্মী। আর শুধু যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিভিন্ন সংস্থার কর্মীদের প্রাণহানির সংখ্যা ১৯৭। ইসরায়েলের কারাগারে হত্যা করা হয়েছে ৫৪ ফিলিস্তিনিকে। সীমান্তে ৯ মাস ধরে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় গত বছরের ৭ অক্টোবরের পর থেকে কমপক্ষে ৪৬৬ জন নিহত হয়েছেন।

ওপরে খোলা আকাশ আর নিচে মাটি, এর মাঝে ফিলিস্তিনিদের সম্বল পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা খাদ্যসামগ্রী। তবে গাজায় যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যসামগ্রী ঢুকতে না পারে সে জন্য রাফা ক্রসিংসহ বেশ কয়েকটি ক্রসিং অবরোধ করে রেখেছে ইসরায়েল। জাতিসংঘ বলছে, যে পরিমাণ খাদ্য গাজায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। অর্থাৎ সে খাদ্য দিয়ে অভুক্ত গাজাবাসীর বেশির ভাগেরই চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গাজায় একটি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের বিষয়ে সতর্ক করেছেন। এ পর্যন্ত বসতবাড়ি হারানোর সংখ্যা প্রায় ১৯ লাখে পৌঁছেছে। উপত্যকাটিতে বাস্তুচ্যুত হয়ে রাস্তায় কোনো রকম তাঁবু খাটিয়ে জীবন নিয়ে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছেন গাজাবাসী।

এমন পরিস্থিতিতে গাজায় যুদ্ধবিরতির জোরালো আলোচনার কথা শোনা গেলেও তা বাস্তবায়নের কোনো নমুনা এখনো দৃশ্যমান হয়নি। মধ্যস্থতাকারী দেশ মিসর, কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হলেও এখনো গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা কাটেনি। জানা গেছে, গাজা ইস্যুসহ মার্কিন নির্বাচন ও সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে পৌঁছেছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনিও ব্লিঙ্কেন কয়েকবার মধ্যপ্রাচ্য সফর করেছেন এবং  গাজায় একটি মানবিক যুদ্ধবিরতির কথা জানিয়েছেন। তবে সে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি। হামাস জানিয়েছে, তারা খন্ডকালীন যুদ্ধবিরতিতে রাজি নয়। তারা স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছে। এ ছাড়া গাজা ইস্যুতে বেইজিংয়ে ফিলিস্তিনের অন্তত ১৪টি গোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠক করছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখানে গাজার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার কথা রয়েছে।

উপত্যকাটিতে ইসরায়েল যে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে এতে যুক্তরাষ্ট্রের নিঃশর্ত সমর্থন পরিলক্ষিত হয়েছে। সে ক্ষেত্রে নেতানিয়াহু যখন মার্কিন সফরে রয়েছেন তখন ফিলিস্তিনের ওই গোষ্ঠীগুলো চীন সফরে রয়েছেন। এতে মধ্যপ্রাচ্যে চীনের হস্তক্ষেপ প্রসারিত হবে কি না সেদিকেই নজর রাখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

সর্বশেষ খবর