শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৬ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

যুক্তরাজ্যে বিক্ষোভ রূপ নিয়েছে দাঙ্গায়

গ্রেপ্তার ৯০

গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের সাউথপোর্টে শিশুদের নাচের ক্লাসে ছুরি হামলায় তিন শিশু নিহত হওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার সন্দেহভাজন ব্যক্তি একজন ‘উগ্র ইসলামপন্থি অভিবাসী’-অনলাইনে দ্রুত এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন শহরে অভিবাসনবিরোধী শত শত বিক্ষোভকারী দাঙ্গা শুরু করেন।

শনিবার থেকে যুক্তরাজ্যের কট্টর ডানপন্থি গোষ্ঠী আয়োজিত বিক্ষোভের সময় দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ায় ৯০ জনের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ দাঙ্গা আরও গুরুতর আকার ধারণ করেছে। সে ঘটনার একাধিক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যে এসেছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যায় যে অনুমান করা হচ্ছে, ২০১১ সালের পর এটাই সবচেয়ে বড় দাঙ্গা ব্রিটেনে। যদিও পুলিশ বলছে, ছুরি হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার সন্দেহভাজন ১৭ বছর বয়সি কিশোর অ্যাক্সেল রুডাকুবানার জন্ম ব্রিটেনে। হামলাকারী কোনো বিদেশি নয়। কিন্তু পুলিশের দাবিতেও বিশেষ কাজ হয়নি। হাল, লিভারপুল, ব্রিস্টল, ম্যানচেস্টার, স্টোক-অন-ট্রেন্ট, ব্ল্যাকপুল, বেলফাস্টসহ বেশ কয়েকটি শহরে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। দাঙ্গাকারীরা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, দোকান লুট করেছে এবং কিছু এলাকায় পুলিশকে আক্রমণ করেছে। আবার কিছু কিছু স্থানে বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ ছিল।

অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভকারীরা ও বর্ণবাদবিরোধী গোষ্ঠী পরস্পরের মুখোমুখি হওয়ায় বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। উভয় পক্ষকে সংঘর্ষ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে গিয়ে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।

গত পরশুও দাঙ্গা অব্যাহত থাকে এবং বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে আতশবাজি ছোড়েন। লিভারপুলের ওয়ালটনে একটি লাইব্রেরিতে আগুন লাগানো হয়েছে এবং দাঙ্গাকারীরা দমকল কর্মীদের এটি নেভানো থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেন। এ সময় দোকানপাট লুটপাট করা হয়। এ ঘটনায় ওয়ালটন থেকে ২৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। সহকারী প্রধান কনস্টেবল জেনি সিমস সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, সাউথপোর্টে সাম্প্রতিক ট্র্যাজেডির পর এটি অগ্রহণযোগ্য। তবে বিক্ষোভ চরম মাত্রায় পৌঁছালেও যুক্তরাজ্যে এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। ব্রিস্টল ও বেলফাস্টের মতো শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের বারবার সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় বেলফাস্টে কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং অন্তত একটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানোর ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়।

সাউথপোর্টসহ যুক্তরাজ্যজুড়ে কমপক্ষে ৩০টি কট্টর ডানপন্থি বিক্ষোভের পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ৭০ জন অতিরিক্ত প্রসিকিউটরকে গ্রেপ্তারকৃতদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শ্যাডো হোম সেক্রেটারি জেমস ক্লেভারলি প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং স্বরাষ্ট্র সচিবকে সহিংসতার মোকাবিলায় আরও জোরদারভাবে কাজ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। এ সপ্তাহের শুরুতে কিয়ার স্টারমার পুলিশকে তথ্য আদানপ্রদান এবং সহিংস গোষ্ঠী মোকাবিলায় সহায়তা করার জন্য একটি নতুন কর্মসূচিও ঘোষণা করেছেন।

কড়া বার্তা প্রধানমন্ত্রীর : গুরুতর এ পরিস্থিতিতে হামলাকারীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়েছেন ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। তিনি বলেন, ‘যারা এ হামলায় অংশ নিচ্ছে তারা পরে পস্তাবে। যারা সংঘাত ছড়াচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় উসকানি দিচ্ছে তাদের কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না। যে কারণে হিংসা ছড়ানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ডানপন্থিদের গুন্ডামি ছাড়া আর কিছু নয়। গায়ের রং দেখে বেছে বেছে সাধারণ মানুষকে টার্গেট করা হচ্ছে।’ পাশাপাশি পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসনের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে খ্রিস্টান, মুসলিম ও ইহুদি ধর্ম প্রচাকরকরা যৌথভাবে জায়গায় জায়গায় গিয়ে শান্তির বার্তা দিচ্ছেন।

 

সর্বশেষ খবর