সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

যুদ্ধের দোরগোড়ায় ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ

তেলআবিবের দিকে বৈরুতের ৩২০টি রকেট

যুদ্ধের দোরগোড়ায় ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ

সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থার পরও ইসরায়েলি বাসাবাড়িতে আঘাত করেছে হিজবুল্লাহর রকেট -এএফপি

ক্রমশই পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। গতকাল ইসরায়েলে বড়সড় হামলা চালিয়েছে লেবাননের হিজবুল্লাহ সংগঠন। এ অবস্থায় গাজার যুদ্ধ বিরতি নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। গতকাল পর পর প্রায় ৩২০টি বা তারও বেশি কাতিউশা রকেট উৎক্ষেপ করে হিজবুল্লাহ। টার্গেট ছিল ইসরায়েলের প্রধান সামরিক কেন্দ্রগুলো।

ইসরায়েল অবশ্য বলেছে, তারা এই অঞ্চলে সর্বাত্মক যুদ্ধ চায় না। তবে গতকালের এ হামলা তারাই আগে শুরু করেছে। আর এর পেছনে অ™ভূত অজুহাতও দিয়েছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ হামলার প্রস্তূতি নিচ্ছে- এমন তথ্য পেয়ে তারা আগেভাগেই হামলা চালিয়েছে। এখন কী হতে যাচ্ছে? ইসরায়েল কি হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে? কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। রবিবার ভোরে দক্ষিণ লেবাননে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর পরই ইসরায়েলের ১১টি সামরিক ঘাঁটি ও ব্যারাক লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা এসব রকেটের বেশির ভাগই ধ্বংস ও লক্ষ্যভ্রষ্ট করেছে। তবে ইসরায়েলের এমন দাবি নাকচ করে দিয়ে হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ বলেছেন, তাদের আক্রমণাত্মক ড্রোনগুলো নির্দিষ্ট সময়ে চালু করা হয়েছিল এবং সেগুলো সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরায়েলে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। হিজবুল্লাহর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা ইসরাইলের রামোত নাফতালি ব্যারাক, নেভেহ জিভ এবং জৌরা আর্টিলারি অবস্থানের পাশাপাশি মেরন, জাতুন, সাহেল এবং এইন জেইতিম ঘাঁটিতে ড্রোন এবং ৩২০টি কাতিউশা রকেট দিয়ে হামলা চালিয়েছে।

ইসরায়েলি স্থানীয় মিডিয়াগুলো জানিয়েছে, গতকাল সকালে অধিকৃত অঞ্চলে ‘ডাফোরা’ নামক একটি ইসরায়েলি যুদ্ধজাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করেছে হিজবুল্লাহ। টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর হামলায় জাহাজটিতে থাকা একজন ইসরায়েলি সৈন্য নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়েছে। এদিকে হিজবুল্লাহ বলেছে, ‘আজকের জন্য আমাদের সামরিক অভিযান সম্পূর্ণ এবং সম্পন্ন হয়েছে’। এদিকে ইসরায়েল বলছে, হিজবুল্লাহকে ঠেকাতে তাদের বিমান বাহিনীর ফাইটার জেটগুলো ইতোমধ্যেই মোতায়েন করা হয়েছে। হিজবুল্লাহর অবস্থান ও গতিবিধির ওপর নজর রাখছে ইসরায়েল। এ জন্য ১০০টির বেশি ফাইটার জেট দক্ষিণ লেবাননে অবস্থিত হাজার হাজার হিজবুল্লাহ রকেট লঞ্চার ব্যারেল ধ্বংস করেছে। এগুলো উত্তর ইসরায়েলের দিকে মুখ করে রাখা হয়েছিল। কিছু রাখা হয়েছিল মধ্য ইসরায়েলের দিকে। হিজবুল্লাহ ও তাদের মিত্র গোষ্ঠী ইরান গত মাসেই সামরিক কমান্ডার ফুয়াদ শুকরের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তার পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে উত্তেজনা বাড়ছিল। পাল্টাপাল্টি হামলার পর বৈরুতে জর্ডানের সব ফ্লাইট বাতিল করেছে। ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে তা খুলে দেওয়া হয়। হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে লেভান্ট ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সামি নাদেরের মতে, ‘পুরো অঞ্চলকে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে টেনে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ কিন্তু হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েল তা ‘এড়াতে চেষ্টা করছে।’ এর পর কী হবে? জানতে চাইলে আল জাজিরাকে সামি নাদের বলেন, ‘এটা এখনো স্পষ্ট নয়।’ গাজায় যুদ্ধের প্রায় এক বছর হতে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ইসরায়েল কি আরেকটি যুদ্ধের জন্য উদগ্রীব?

ইসরায়েলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা : ইসরায়েলে গতকাল রকেট হামলার পর ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার জন্য ইসরায়েলে জরুরি অবস্থার ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম।

রয়টার্স জানায়, ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায় সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে ওঠে ও এর পর অনেকগুলো বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

 

 

সর্বশেষ খবর