শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা
৪০২ শিশু উদ্ধার

মালয়েশিয়ায় চ্যারিটি হোমে সুরক্ষার নামে যৌন নির্যাতন

দেশটির দুটি রাজ্যের ২০টি শিশু সুরক্ষা কেন্দ্রে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ

মালয়েশিয়ায় শিশু সুরক্ষা কেন্দ্রগুলোর বিরুদ্ধে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির দুটি রাজ্যের ২০টি শিশু সুরক্ষা কেন্দ্রে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। সেসব অভিযানে এসব সুরক্ষা কেন্দ্র থেকে ৪০২ শিশুকে উদ্ধার করেছেন মালয়েশিয়ার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ ঘটনায় দেশটিতে যেমন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি শিশুদের অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন দেশটির নীতিনির্ধারকরা।

পুলিশের মহাপরিদর্শক রাজারুদিন হোসেন জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ার দুটি রাজ্যে ২০টি চত্বরে সমন্বিত অভিযানের সময় পুলিশ ধর্মীয় শিক্ষকসহ ১১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ২০১ জন ছেলে এবং ২০১ জন মেয়ে রয়েছে, যাদের বয়স এক থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। রাজারুদিন এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, অবহেলা, দুর্ব্যবহার, যৌন হয়রানি ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে প্রতিবেদন দাখিল হওয়ার পর এই অভিযান চালানো হয়েছে। প্রতিবেদনগুলো কে লিখেছেন সে বিষয়ে কিছু বলেননি মালয়েশিয়ার পুলিশপ্রধান। এই সেন্টারগুলোর সবই গ্লোবাল ইখওয়ান সার্ভিসেস অ্যান্ড বিজনেস (জিআইএসবি) দ্বারা পরিচালিত হয় বলে জানিয়েছেন তিনি। গতকাল দেওয়া এক বিবৃতিতে জিআইএসবি যৌন নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সংগঠনটির দাবি, এই চ্যারিটি হোমগুলো তারা পরিচালনা করে না। সংগঠনটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ইসলাম এবং রাষ্ট্রীয় আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো পরিকল্পনা করা এবং কর্মকা  পরিচালনা করা আমাদের নীতির মধ্যে নেই।’ পুলিশের কাছে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে ঘটনার তদন্তের দাবি জানানোর কথাও জানিয়েছে জিআইএসবি।

সুপারমার্কেট থেকে লন্ড্রোম্যাট পর্যন্ত নানা ব্যবসায় জড়িত জিআইএসবি। সংগঠনটির ওয়েবসাইট অনুসারে ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মিসর, সৌদি আরব, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া এবং থাইল্যান্ডসহ আরও নানা দেশে কাজ করে। রাজারুদিন জানিয়েছেন, প্রাথমিক পুলিশ তদন্তে জানা গেছে, উদ্ধারকৃত শিশুরা মালয়েশিয়ার জিআইএসবি কর্মচারীদের সন্তান।

জন্মের পরপরই তাদের এসব চ্যারিটি হোমে পাঠানো হয়েছিল। ভুক্তভোগী এই শিশুদের প্রাপ্তবয়স্ক অভিভাবকরা যৌন নির্যাতন করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে এ শিশুদের অন্য শিশুদের যৌন নির্যাতন করতে শেখানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

উদ্ধার শিশুদের রাজধানী কুয়ালালামপুরের একটি পুলিশ কেন্দ্রে অস্থায়ীভাবে রাখা হয়েছে। সেখানে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এক প্রতিবেদনে মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানায়, দেশটিতে ধর্মীয় অনুশাসন শেখানোর উদ্দেশ্যে এসব সুরক্ষা কেন্দ্রে শিশুদের রেখে যেতেন তাদের অভিভাবকরা। এদিকে এ ঘটনায় গ্লোবাল ইখওয়ান গ্রুপের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দেশটির পুলিশ। সংস্থাটি এসব শিশু সুরক্ষা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিদেশি অর্থসহায়তা সংগ্রহ করত বলে জানিয়েছে দেশটির সহকারী পুলিশ ইন্সপেক্টর আইয়ুব খান মাইদিন। এ ঘটনায় মালয়েশিয়ার কল্যাণমূলক সংস্থাগুলোর ওপর পর্যবেক্ষণ বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে দেশটির মানবাধিকার রক্ষা বিষয়ক কমিশন। তবে নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছে গ্লোবাল ইখওয়ান গ্রুপ।

সর্বশেষ খবর