রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

বৈরুতকে রক্তে ভাসাল ইসরায়েল

হিজবুল্লাহর কমান্ডারসহ নিহত ৩৭

বৈরুতকে রক্তে ভাসাল ইসরায়েল

বৈরুতে ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত ভবন - এএফপি

পেজার, ওয়াকিটকিসহ (যোগাযোগের তারহীন যন্ত্র) যে অন্যান্য যন্ত্র ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে হিজবুল্লাহ সদস্যরা ‘তাৎপর্যপূর্ণভাবে’ সেগুলোকেই পরিণত করা হয়েছে বিস্ফোরক ডিভাইসে। ইসরায়েলের অত্যাধুনিক নজরদারি এড়িয়ে যোগাযোগের জন্য এই যন্ত্রই ব্যবহার করেন হিজবুল্লাহর সদস্যরা। সেই যন্ত্রই ব্যবহারকারীদের হাতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে লেবাননে হত্যা করা হয়েছে বহু মানুষকে। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। লেবাননের সরকার ইসরায়েলকে এই আক্রমণের জন্য দায়ী করেছে। তা নিয়ে চলছে দেশ দুটির মধ্যে চরম উত্তেজনা। তার মধ্যেই গত পরশু লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা চালায়। তাতে হিজবুল্লাহর এক শীর্ষ কমান্ডার ও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সদস্যসহ অন্তত ৩৭ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে তিন শিশু ও সাত নারী রয়েছেন। গত প্রায় এক বছর ধরে ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহর সংঘাতে এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা।  লেবাননের পরিবহনমন্ত্রী আলি হামিহ ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবারের এ হামলার পর থেকে অন্তত ২৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ও লেবাননের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ ড্রোন হামলায় হিজবুল্লাহর অভিজাত এক ইউনিটের কমান্ডার ইব্রাহিম আকিল অন্য কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সদস্যসহ নিহত হয়েছেন। শনিবার এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ আকিলের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করে তাকে তাদের ‘অন্যতম শীর্ষ নেতা’ বলে অভিহিত করেছে; তবে তার মৃত্যু কীভাবে হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু জানায়নি। তারা জানায়, এ হামলায় আকিলসহ তাদের ১৬ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। পরে দ্বিতীয় আরেক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ জানায়, আকিল বৈরুতের দাহিই এলাকায় ‘ইসরায়েলিদের প্রতারণাপূর্ণ হত্যার’ শিকার হয়েছেন। তারা আরও জানায়, গাজা যুদ্ধ চলাকালে ২০২৪ সালের প্রথমদিক পর্যন্ত রাদোয়ান স্পেশাল ফোর্সেসের সামরিক অভিযান তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা আরেক শীর্ষ কমান্ডার আহমেদ ওয়াহবিও এ হামলায় নিহত হয়েছেন। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ হামলায় অন্তত ৩৭ জন নিহত হয়েছেন আর মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এর আগে মন্ত্রণালয়টি জানিয়েছিল, এ হামলায় অন্তত ৬৬ জন নিহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে নয়জনের অবস্থা সংকটজনক।

লেবাননের দ্বিতীয় আরেক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, একটি ভবনের গ্যারজ খোলার সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে ড্রোন থেকে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হলে হিজবুল্লাহর অন্তত ছয় কমান্ডার নিহত হন। বিস্ফোরণে ভবনটির নিচের অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়, সেখানে আকিল অন্য কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন। ঘটনার সময় তীব্র একটি শীসের মতো শব্দ ও পরপর বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওভ গ্যালান্ট সামাজিক মাধ্যম এক্স এ এক পোস্টে বলেছেন, ‘উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদে তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের নতুন পর্বের পদক্ষেপের ক্রম অব্যাহত থাকবে।” গত সপ্তাহে গ্যালান্ট জানিয়েছিলেন, ইসরায়েল উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে যুদ্ধের এক নতুন পর্ব শুরু করেছে। গত বছরের অক্টোবরে গাজায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে রকেট হামলা শুরু করে হিজবুল্লাহ। তারপর থেকে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে পাল্টাপাল্টি হামলা চলার মধ্যে ওই অঞ্চল থেকে দুই দেশের হাজার হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর