শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

বাইডেনের সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে ‘নড়বড়ে’ মার্কিন কূটনীতি

রয়টার্সের বিশ্লেষণ - ►  এক বছর ধরে চলা এ সংঘাত বন্ধে মার্কিন প্রশাসন কিছুই করতে পারেনি

► মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিয়ে বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আছেন মেয়াদের শেষ পর্যায়ে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। জানুয়ারিতে তিনি পদত্যাগের আগে এই সংকটের সমাধান হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না

 

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টা সত্ত্বেও প্রায় এক বছর ধরে চলা এ সংঘাত বন্ধে মার্কিন প্রশাসন কিছুই করতে পারেনি। ইরান সমর্থিত হুতি গোষ্ঠী লোহিত সাগরে পণ্যবাহী জাহাজে হামলা অব্যাহত রেখেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘর্ষ পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে।

মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিয়ে বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আছেন মেয়াদের শেষ পর্যায়ে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। জানুয়ারিতে তিনি পদত্যাগের আগে এই সংকটের সমাধান হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ফলে বাইডেনের পররাষ্ট্র নীতির সব সাফল্য মলিন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ছত্রছায়ায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তার রক্তচক্ষুতে কার্যত তছনছ লেবানন। গাজার পর এবার লেবাননে একের পর এক রকেট হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। গত কয়েকদিন ধরে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সের বোমা বর্ষণে মৃত্যু মিছিল বৈরুতে। এর মাঝে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে নেতানিয়াহু বলেছেন, তারা হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযান জারি রাখবেন। যতদিন না হিজবুল্লাহ রকেট ছোড়া বন্ধ করছে ততদিন পর্যন্ত হামলা থামবে না।

এক বছর ধরে ইসরায়েলের সব কার্যকলাপের অন্যতম সমর্থক ছিলেন বাইডেন। ফিলিস্তিনের হামাস ও লেবাননের হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার্থে ইসরায়েলের কর্মকান্ডের সাফাই গাইলেও মধ্যপ্রাচ্যে বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ও সম্ভাব্য আঞ্চলিক যুদ্ধ প্রতিরোধেও বেশ উচ্চকণ্ঠ ছিলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। আগামী জানুয়ারিতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে একাধিক সংকটের মুখে পড়েছেন তিনি। বাইডেনের বিদায়ের আগে এসব সংকটের কোনো সমাধান আসবে না বলেই ধারণা বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের। তারা বলছেন, এসব সংকট সমাধানে ব্যর্থতা নতুন প্রেসিডেন্টকেও বইতে হবে। এদিকে বাইডেন এর মধ্যে যতবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করছেন প্রতিবারই তা বাস্তবায়নে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। এর সর্বশেষ উদাহরণ হলো লেবানন সীমান্তে ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির মার্কিন প্রস্তাব নাকচ করে উল্টো হামলা জোরদার করা।

মধ্যপ্রাচ্যে দায়িত্ব পালন করে আসা সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জোনাথন প্যানিকফ বলেছেন, ‘এ অঞ্চলে মার্কিন ক্ষমতা ও প্রভাবের সীমাবদ্ধতা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

এর একটা প্রমাণ হতে পারে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ওয়াশিংটনের মর্জিতে টলানোর জন্য বাইডেনের ব্যর্থতা। বরং এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সহায়তা ও জাতিসংঘের ঢাল হিসেবে সবচেয়ে বিশ্বস্ত মিত্র হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

সাবেক কূটনীতিক ও বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রভাব কমে আসার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে ওয়াশিংটনের কথা ইসরায়েল শুনতে চাইছে না। তারা বলছেন, ইসরায়েলকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র দেয় যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক ফোরামে ইসরায়েলের বড় রক্ষাকবচও যুক্তরাষ্ট্র। এরপরও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওয়াশিংটনের চাওয়াকে গুরুত্বই দিচ্ছেন না।

সর্বশেষ খবর