কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে মেডিকেল ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় কেটে গেছে প্রায় দেড় মাসের বেশি সময়। ন্যায়বিচারের দাবিতে এখনো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ, জুনিয়র ডাক্তাররা। এরই মধ্যে ফের ঘটল এক ধর্ষণের ঘটনা। যা নিয়ে উত্তাল গোটা রাজ্য।
টিউশন পড়ে বাড়ি ফেরার পথে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে রাজ্যটির দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার জয়নগর এলাকা। শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে পাওয়া যায় ছাত্রীর লাশ। কুলতলী থানার কিপাখালীর বাসিন্দা চতুর্থ শ্রেণির ওই ছাত্রী জয়নগর থানার মহিষমারিতে শুক্রবার দুপুরে টিউশন পড়তে যায়। আড়াইটার সময় টিউশন পড়তে গিয়ে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও না-ফেরায় চিন্তায় পড়ে যান বাড়ির লোক।
এর পর পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় মহিষমারি থানায় ছুটে যান। অভিযোগ জানাতে গেলেও পুলিশ তা শুনতে চায়নি। এমনকি এফআইআর করতে চাইলেও পুলিশ নিতে চায়নি বলে অভিযোগ। এর পর বিভিন্ন জায়গায় মেয়ের খোঁজে শুরু হয় তল্লাশি। শেষে রাতে জলাজমি থেকে ওই ছাত্রীর লাশ উদ্ধার হয়। দেখা যায়, ছাত্রীর দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন। পরিবার ও স্থানীয় মানুষের আশঙ্কা, ধর্ষণ করেই হত্যা করা হয়েছে ছোট্ট মেয়েটিকে। নিগৃহীতার পরিবার জানিয়েছে, প্রতি দিনের মতো শুক্রবারও সে মহিষমারি হাট এলাকায় টিউশন পড়তে গিয়েছিল। কাছেই বাজারে ছিল তার বাবার দোকান। টিউশন শেষে দোকানে বাবার সঙ্গে দেখাও করেছিল শিশুটি। তার পর একাই বাড়ি ফিরছিল। কিন্তু পথে তাকে অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ। পরিবারের দাবি, তাদের নয় বছরের শিশুটিকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। তার পর ফেলে দেওয়া হয়েছে পুকুরে। পরবর্তীতে মৃতের পরিবারের তরফে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় জয়নগর থানায়। প্রথমে মহিষমারিতে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিল পরিবার। পরিবারের দাবি, পুলিশ প্রথমেই যদি মহিষমারি থানা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিত, তবে দেখলে শিশুটিকে হয়তো বাঁচানো যেত। রাতে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে এক যুবককে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফুটেজে দেখা গেছে, যুবক সাইকেলে করে শিশুটিকে নিয়ে যাচ্ছেন। ওই যুবককে রাতেই আটক করে পুলিশ। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। শিশুর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। এই ঘটনায় শুক্রবার রাত থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জয়নগর থানা এলাকা। দোষীর কঠোর শাস্তির দাবিতে পুলিশকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখায় উত্তেজিত জনতা। রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। লাঠি, ঝাঁটা নিয়ে থানায় চড়াও হয় তারা। থানা ভাঙচুর করা হয়। রাতের পর গতকাল সকাল থেকে দফায় দফায় বিক্ষোভ শুরু হয়। জয়নগরের মহিষমারি হাট পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন গ্রামবাসী। হামলার মুখে পড়ে জখম হন পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা। খবর পেয়ে এসডিপিওর নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী পৌঁছেছে এলাকায়।