পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে রোমে দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে বসেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান। গতকাল স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টায় ওমানের মধ্যস্থতায় এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুরু হয়। উভয় পক্ষই আলোচনাকে গুরুত্ব দিচ্ছে, যদিও সন্দেহ-অবিশ্বাসের আবহ এখনো কাটেনি। ইরানি পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ইতালির রাজধানী রোমে পৌঁছান। আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফও অংশ নেন। এর আগে মাস্কটে দুই দেশের মধ্যে প্রথম পর্বের পরোক্ষ আলোচনা হয়, যেটিকে ‘গঠনমূলক’ বলেই উল্লেখ করা হয়।
২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঐতিহাসিক ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসার পর এটিই ছিল দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের প্রথম মুখোমুখি সংলাপ। ইরান বরাবরই দাবি করে আসছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত। যদিও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো আশঙ্কা করছে, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে এগোচ্ছে। আলোচনার আগের দিন মস্কোতে এক সংবাদ সম্মেলনে আরাগচি বলেন, ‘আমরা প্রথম বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কিছুটা আন্তরিকতার ইঙ্গিত পেয়েছি, তবে তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে এখনো সন্দেহ রয়েছে।’
তবে ইরান এই আলোচনা থেকে পুরোপুরি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে না। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকায়ি বলেন, ‘এই পথ সহজ নয়, তবে অতীত অভিজ্ঞতার ওপর ভর করেই আমরা সচেতনভাবে প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছি। জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইরান বর্তমানে পরমাণু অস্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে ইরান ৬০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা ২০১৫ সালের চুক্তির শর্ত ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশের চেয়ে বহু গুণ বেশি। যদিও এখনো এটি অস্ত্র তৈরি করার পর্যায়ে (৯০ শতাংশ) পৌঁছায়নি।’
ইরানের দাবি, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার তাদের রয়েছে, যা কোনোভাবেই আলোচনার বিষয় নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র এ কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে।
ইরান জানিয়ে দিয়েছে, আলোচনা কেবল পরমাণু কর্মসূচি ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকবে। ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব নিয়ে আলোচনা গ্রহণযোগ্য নয়। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরায়েল জানিয়েছে, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে না দেওয়ার বিষয়ে তারা ‘সুস্পষ্ট কৌশল’ নিয়ে এগোচ্ছে। -রয়টার্স