গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় দুই হাত হারানো এক ফিলিস্তিনি শিশুর ছবি ২০২৫ সালের ‘প্রেস ফটো অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হয়েছে। নয় বছর বয়সি শিশু মাহমুদ আজজুরের এ হৃদয়বিদারক ছবিটি তোলেন গাজার খ্যাতনামা ফটো সাংবাদিক সামার আবু এলুফ। গত বছরের মার্চে ইসরায়েলি বিমান হামলায় দুই হাত হারানোর তিন মাস পর কাতারের দোহায় এ ছবিটি তোলা হয়। ইসরায়েলি ওই হামলার পর চিকিৎসার জন্য আজজুর ও তার পরিবারের সদস্যরা দোহায় চলে যান; আবু এলুফও এখন দোহায় থাকছেন, জানিয়েছে সিএনএন। এই ছবির বর্ণনায় মাহমুদের মায়ের কথা তুলে ধরেন এলুফ। মাহমুদের মা বলছিলেন, যখন মাহমুদ প্রথম বুঝতে পারে যে সে তার দুটো হাতই হারিয়েছে, তখন সে তার মা-কে জিজ্ঞেস করে, ‘এখন আমি তোমাকে কীভাবে জড়িয়ে ধরব?’ নিউইয়র্ক টাইমসের জন্য তোলা ছবিটি যেন গাজার যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদি মানবিক বিপর্যয়ের এক শক্তিশালী প্রতিচ্ছবি, যে যুদ্ধে প্রাণ হারানোদের মধ্যে অর্ধেকই নারী ও শিশু।-সিএনএন
ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোর নির্বাহী পরিচালক জুমানা এল জেইন খুরি বলেন, ‘শান্ত একটি ছবি, যা চিৎকার করছে। এটি একটি ছেলের গল্প, কিন্তু একই সঙ্গে এটি একটি বৃহত্তর যুদ্ধের গল্পও, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রভাব ফেলবে।’ এ বছর প্রতিযোগিতায় আসা ছবিগুলোর মধ্যে জুরিরা যুদ্ধ, অভিবাসন ও জলবায়ু পরিবর্তন, এই তিনটি প্রধান থিম লক্ষ্য করেছেন বলে জানিয়েছেন বিচারকদের একজন লুসি কন্টিসেলো। ‘প্রেস ফটো অব দ্য ইয়ার’ বিজয়ী ছবিতে আলো-আঁধারি, যন্ত্রণা ও সৌন্দর্যের বিপরীত সুর ধরা পড়েছে, যা বিচারকদের মন কেড়ে নিয়েছে, জানান তিনি। সিএনএন জানিয়েছে, এবারের প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ১৪০টির বেশি দেশের ৩ হাজার ৭০০-এর বেশি আলোকচিত্রী প্রায় ৬০ হাজার ছবি পাঠিয়েছিলেন। সেখান থেকেই যুদ্ধাহত ফিলিস্তিনি শিশুর ছবিটি বর্ষসেরা নির্বাচিত হয়। রানারআপ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে দুটি ছবি; যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত পার হয়ে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশী চীনাদের আগুন পোহানোর ছবি এবং আমাজনে এক তরুণের নিজের গ্রামের দিকে হেঁটে যাওয়ার ছবি, মরুভূমিসদৃশ যে পথ দিয়ে সে হেঁটে যাচ্ছে, আগে সেখানে ছিল থইথই পানি, যাওয়া লাগত নৌকায়। প্রতিযোগিতার আঞ্চলিক বিভাগেও অনেক ছবি বিজয়ী হয়েছে। বিজয়ী ছবিগুলোর ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে শুক্রবার আমস্টারডামের দ্য নিইউভে কেরখে। এরপর এই প্রদর্শনী ঘুরবে লন্ডন, জাকার্তা, সিডনি ও মেক্সিকো সিটিসহ নানা শহরে।