বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

জুয়েলারি শিল্পের সংস্কার দরকার

মো. জসিম উদ্দিন, সভাপতি, সার্ক চেম্বার

জুয়েলারি শিল্পের সংস্কার দরকার

জুয়েলারি শিল্প অনেক পুরনো। বাংলাদেশের জুয়েলারি শিল্পীদের একটা ব্র্যান্ড এবং কদর আছে বিশ্বব্যাপী। হাতে বানানো জুয়েলারির ৮০ শতাংশই বাংলাদেশ ও ভারতে প্রস্তুত। সুতরাং সম্ভাবনার জায়গা যদি বলি অনেক বিশাল। আমরা নতুন বাংলাদেশের কথা বলছি। ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ছিল মাত্র ৯০ বিলিয়ন ডলার। ১২ বছরে অর্থনীতির আকার হয়েছে ৪৭০ বিলিয়ন ডলার। বলা হচ্ছে, ২০৪১ সালের মধ্যে অর্থনীতির আকার ট্রিলিয়ন ডলার হবে। তবে আমি বিশ্বাস করি এটা অনেক আগেই হবে। এইচএসবিসির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালে বাংলাদেশ হবে পৃথিবীর নবমতম কনজুমার মার্কেট। মানুষের মাথাপিছু আয় যেভাবে বাড়ছে। কভিড অতিক্রম করলাম। আল্লাহর রহমতে বিশ্বের তুলনায় আমরা      ভালো ছিলাম। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্ব বিপদগ্রস্ত। বাংলাদেশও সেই বিপদের মধ্যে আছে। তার পরও তুলনামূলকভাবে আমাদের অর্থনীতি অতটা খারাপ না। দেশের বৃহৎ অবকাঠামো যেগুলো দরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান সরকার সেগুলো করছে।

এ বছরকে বলা হয়েছে অবকাঠামোর বছর। যেগুলো আমাদের বেশি দরকার বড় বড় অবকাঠামো সেগুলো হচ্ছে। একসময় আমরা বলতাম আমাদের শিল্পায়নের জন্য যেসব অবকাঠামো দরকার সেগুলো কিন্তু হচ্ছে। ১০০ ইকোনমিক জোন হচ্ছে। হাইটেক পার্ক হচ্ছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে অনেক পার্ক হচ্ছে। এ জায়গায় আমরা ভালো অবস্থানে আছি। যেখানে আমরা এখন বিদেশি বিনিয়োগের কথা বলতে পারি। আমাদের যে জুয়েলারি শিল্পটা। প্রায় ৪০ হাজার প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বাজুসের সঙ্গে আছে। প্রায় অর্ধ কোটি মানুষ এ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

এত দিন আমার কাছে মনে হয়েছে এ ব্যবসাটা ইনস্টিটিউশনালাইজড না। এবং এটাকে মেইনস্ট্রিমের ব্যবসাও মনে হতো না। বড় ভলিউম ছিল, কারিগররা কাজ করছেন সবই ছিল। কিন্তু কেমন জানি মানুষ বিশ্বাসও কম করত। যারা এর আগে বাজুসের নেতৃত্বে এসেছেন। হলমার্ক যুক্ত হওয়ার পর মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা অনেক বেড়েছে। এটা দরকার ছিল। আমি জিনিস কিনব, মনে করব ২২ ক্যারেট মানে ২২ ক্যারেটই। আগে কিন্তু বলত এটা সনাতনী। ওনাদের কাছ থেকে কেনার পরও বলত ভাই এটাতে ৪০ পারসেন্ট নেই। তো সনাতনী মানে কী? বিক্রি তো করেছেন ২২ ক্যারেট। এই যে একটা যুগের পরিবর্তন হলো। শিল্পায়ন হলো। এখন কিন্তু জুয়েলারি শিল্প।

২০৪১ সালে আমাদের ৩০০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করতে হবে। ৮৩ শতাংশ তৈরি পোশাক রপ্তানি করি। বাকি সব পণ্য মিলিয়ে ১৭ ভাগ। আমাদের টার্গেট ৩০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি এবং ২০৪১ সালে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি। শুধু গার্মেন্ট-টেক্সটাইল দিয়ে সম্ভব হবে না। সুতরাং আমাদের অনেক পণ্য রপ্তানির তালিকায় নিয়ে আসতে হবে। আমি মনে করি জুয়েলারি শিল্প একটা বিশাল সম্ভাবনাময় জায়গা। যারা আমরা কাজ করতে পারি। তাদের যে কাঁচামাল দরকার। গোল্ড রিফাইনারি প্রজেক্ট হাতে নেওয়ায় আমি বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ জানাই। এটা চালু হলে কাঁচামাল অনেক পাওয়া যাবে। শিল্প হিসেবে তারা তখন নিয়ে আসবে। এখন বিভিন্নভাবে স্বর্ণ আসছে। পকেটে আসছে। স্মাগলিংয়ের মাধ্যমে আসছে। রিফাইনারি চালু হলে সেটা বন্ধ হয়ে যাবে। সো শিল্পের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার গোল্ড রিফাইনারি। এটা চালু হলে শিল্পের জন্য অনেক ভালো হবে।

আপনি যদি ভারতের জয়পুর যান পুরো এলাকাটাই ১০ তলা ১২ তলা ভবনে ফ্যাক্টরি। এক এক প্রদেশে একেক ধরনের জিনিস। জয়পুর স্টোনের জন্য বিখ্যাত। আবার কলকাতা হাতের কাজের জন্য বিখ্যাত। হাতের কাজের কারিগর সবাই বাংলাদেশি। ওখানে অভিবাসন নিয়েছেন। আমাদের স্কিল আছে। যেটা সবচেয়ে বড় জিনিস। বাংলাদেশে শিল্পের জন্য বড় সমস্যা স্কিল। স্কিলের অভাব। কিন্তু জুয়েলারির ক্ষেত্রে আমাদের স্কিল আছে। এটা কিন্তু পারিবারিক ব্যবসা। আমি মনে করি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সবাই যেভাবে কাজ করছেন। রূপরেখা দিয়েছেন। বাংলাদেশের মার্কেট অনেক বড়। ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত অনেক পিছিয়ে। তার মানে ব্ল্যাক জিনিস পকেটে পকেটে। মার্কেটটা অফিসিয়ালের চেয়ে অনেক বড়। এটা আমরা বুঝতে পারছি। যারা এ ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাই ভালো করছেন।

জুয়েলারি সেক্টরের উন্নয়নে যত ধরনের সহায়তা দরকার আমি আহ্বান জানাব মন্ত্রীকে নীতিসহায়তা দেওয়ার জন্য। কারণ এ সেক্টরে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। বিপুল মূল্য সংযোজনের সুযোগ আছে। আমরা যে তৈরি পোশাক রপ্তানি করি সেখানে ভ্যালু অ্যাডিশন খুব বেশি নেই। জোর করে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাডিশন করতে হয়।

সর্বশেষ খবর