শিরোনাম
বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

গহনা নারীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দেয়

ফরিদা ইয়াসমিন, সভাপতি, জাতীয় প্রেস ক্লাব

গহনা নারীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দেয়

সভ্যতার শুরু থেকেই গহনার প্রচলন। হিন্দু ও বৌদ্ধ সভ্যতার শুরুতে সোনার ব্যবহার শুরু হয়। আমরা যখন প্রাচীন মূর্তিগুলো দেখি, তখন কিন্তু দেখি তাদের গায়ে কত ধরনের গহনা! মুসলিমদের মধ্যে গহনার প্রচলন শুরু হয় মুঘল সাম্রাজ্যে। গহনা আমরা পছন্দ করি বা না করি গহনা কিন্তু একটি বিনিয়োগ। বিশেষ করে নারীদের বিনিয়োগ। নারীরা কিন্তু তেমনভাবে সম্পদের অধিকারী নয়। পৈতৃক সম্পত্তিতে নারীর অধিকার নেই বললেই চলে। স্বামীর সম্পত্তি তেমনভাবেও পায় না। কিন্তু গহনা একান্তই তার। বিয়েতে যে গহনা দেওয়ার প্রচলন, এটা কিন্তু নারীকে একটা অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। সোনার গয়না তার একটা অর্থনৈতিক নিরাপত্তা। যত গহনা থাকবে তাকে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে ভাবে নারী। যখনই তার কোনো বিপদাপদ হয়, টাকার প্রয়োজন হয় নারী সেই গহনাটা বিক্রি করে প্রয়োজন মেটায়। শুধু সোনার গয়না নয়, রুপার গয়নাও মূল্যবান। সেই গহনায় ডায়মন্ডসহ নানাবিধ পাথর ব্যবহার করে কখনো কখনো আরও আকর্ষণীয় ও মূল্যবান করে তোলা হয়। নারী যখনই সুযোগ পায়, যখনই কিছু অর্থ জমা করে তখনই চেষ্টা করে কিছু গহনা কিনে রাখার।

আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি মা-চাচিদের সোনার গয়না কিনতে। কারণ গহনা একমাত্র নারীর নিজস্ব সম্পদ। এখানে কিন্তু পুরুষের কোনো অধিকার নেই। স্বামীরাও মানেন গহনা শুধুই তার স্ত্রীর বা নারীর মালিকানাধীন।

গহনা যদি পুরুষ কোনো প্রয়োজনে চায়, যদি তার স্ত্রী বলেন, আমি এটা দেব না তাহলে এটায় স্বামীর কোনো অধিকার থাকে না। গহনা নারীর সম্পদ এটা বৈবাহিক দলিলেও বলা আছে। নারী যে এত সোনার গয়না পছন্দ করেন, আমি মনে করি এটাও একটা দিক। তবে শুধু নারী নয়, পুরুষরাও এখন গহনা পরেন। গহনা সৌন্দর্যের আনুষঙ্গিক বস্তু।

আমরা যদি শিল্পের কথা চিন্তা করি, এটা কিন্তু একটা বিশাল শিল্প। এ শিল্পে ৫০ থেকে ৬০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। আমি যতটুকু জেনেছি বাজুসের সদস্য ৪০ হাজার। যদি চিন্তা করি এই শ্রমিকদের উপার্জনের সঙ্গে তার পরিবারের কতজন সদস্য জড়িত; বিশাল একটা অঙ্ক। প্রতি বছর ২ লাখ কোটি টাকার ব্যবসা হয় স্বর্ণশিল্পে। আমি যদি এটাকে শিল্প হিসেবে দেখি তাহলে এ শিল্পের উন্নয়ন আমার চিন্তা করতে হবে। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের কথা চিন্তা করতে হবে। শ্রমিকদের পরিবারের কথা চিন্তা করতে হবে। বাজুস একা শুধু শ্রমিকদের উন্নয়নে কাজ করবে সেটা কতটুকু সম্ভব হবে? এর সঙ্গে সরকারেরও সহায়তা প্রয়োজন। সরকারকে দেশি শিল্পে সহায়তা করতে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ এ শিল্পটার সঙ্গে রপ্তানিও জড়িত।

আমাদের দেশে ঠিক কতজন সোনা পরেন আমরা অনুমান করতে পারি। যদিও পরিসংখ্যান ওভাবে বলতে পারব না। একেবারে ধনী বা উচ্চবিত্ত শ্রেণি বেশি পরে, নিম্নবিত্তরাও অর্থ সঞ্চয় করতে পারলে একটু সোনা কেনার চেষ্টা করে। এটা সম্পদ হিসেবে রাখে। বিপদে আপদে সেটি আবার বিক্রি করে দেয়। আমি বলব রপ্তানিনির্ভর শিল্পে অনেকের আগ্রহ আছে। বিদেশিদের আগ্রহ আছে বাংলাদেশের গহনার প্রতি। বিদেশে খনিতে সোনা উৎপাদন হয়। সেখান থেকে অপরিশোধিত সোনা এনে গয়না তৈরি করা হয়। এ শিল্পে যে শ্রমিকদের কথা বলছি, সেখানে নারীদের নিয়োগ বা অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানাব। আমরা যতটুকু জানি, সোনার গয়নার শ্রমিক হিসেবে পুরুষরাই কাজ করেন। সেখানে নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া, নারীদের নিয়োগ এবং শ্রমিকদের কল্যাণে কী চিন্তা করা যায় এগুলো নিশ্চয় বাজুস করবে।

গণমাধ্যমের মানুষ হিসেবে বলব, এ শিল্পের সঙ্গে এতগুলো পরিবার জড়িত, এতগুলো মানুষ জড়িত, অর্থনৈতিক উন্নয়ন জড়িত; এ শিল্পকে কীভাবে আরও এগিয়ে নেওয়া যায় সে বিষয়ে গণমাধ্যম তাদের জায়গা থেকে কথা বলবে, কাজ করবে। গহনা শিল্পের পেছনে অনেক মানুষের শ্রম, ঘাম আছে এবং তা বাংলাদেশের অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত। অর্থনীতির চাকার সঙ্গে জড়িত। অর্থনীতির চাকা সচল হচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শ্রমিকরা কাজ করছেন। আমি গণমাধ্যমকে এ শিল্পের দিকে নজর দিতে বলব যাতে এটি প্রসার লাভ করতে পারে; যাতে তারা নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারে। গণমাধ্যম সব ক্ষেত্রে কাজ করে। তারা অসহায় মানুষ, ব্যবসা ও দেশের উন্নয়নের কথা বলে। আবার দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনাও গণমাধ্যম তুলে ধরে, তো গণমাধ্যম এ শিল্পের উন্নয়নের বিষয়টিতে নজর দেবে বলে আমি আশা করি।

সর্বশেষ খবর