শিরোনাম
বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বদলে গেছে ডিজাইন ক্রেতার চাহিদা

গুলজার আহমেদ, সহসভাপতি, বাজুস, কর্ণধার : আপন জুয়েলার্স

বদলে গেছে ডিজাইন ক্রেতার চাহিদা

বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশের জুয়েলারি শিল্পে অনেক পরিবর্তন এসেছে। অতীতে সোনা ও রুপার কালারের বাইরে গহনার অন্য কোনো কালার চিন্তা করা যেত না। কয়েক বছর ধরে আমরা দেখছি কাস্টমারের চাহিদা বদলে গেছে। সোনা ও রুপার বিভিন্ন কালারের গহনার চাহিদা বেড়েছে। একই গহনার মধ্যে কপার, সিলভার, অ্যাশসহ বিভিন্ন কালার কাস্টমার বেশি পছন্দ করছে। এর ধারাবাহিকতায় নতুন প্রজন্মের ক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের মা-চাচিরা যেসব ডিজাইনের গহনা পছন্দ করতেন এ প্রজন্মের মধ্যে সেসবের চাহিদা কম। এদের মধ্যে আধুনিক গহনার চাহিদা বেশি। মডার্ন গহনার মধ্যে একটু কপার থাকবে, একটু হোয়াইট থাকবে। বর্তমানে আরও পরিবর্তন এসেছে। সোনার কাছাকাছি দামের পাথরের গহনার চাহিদাও বেড়েছে। অনেক কাস্টমার পাথরের গহনা কিনছেন। কিন্তু দেখে মনে হবে এসব বিলাসীদের গহনা। আমরা সব সময় কাস্টমারের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে গহনার ডিজাইন করার চেষ্টা করি। কারণ কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী গহনা দিতে না পারলে কাস্টমার ধরে রাখতে পারব না। এ প্রজন্মের কাস্টমাররা অনেক কিছু ভেবেচিন্তে সোনার গয়না কেনেন। যে গহনা কিনছেন সেটার ভবিষ্যৎ আছে কি না তা জেনেবুঝেই কিনছেন।

আরেকটি বিষয় খেয়াল করলে দেখা যাবে, ১০ বছর ধরে সোনার দাম নিম্নমুখী হয়নি। দাম কিন্তু ঊর্ধ্বমুখীই রয়েছে। আগে যারা গহনা কিনেছেন তারা বেনিফিটেড। কম দামে সোনা কিনেছেন। এখন বিনিময় করলে ডাবল অথবা তিনগুণ দাম পাবেন। বছরে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার গোল্ড কিনলে পরের বছর ১০ থেকে ২০ শতাংশ লাভ হয়। এ কারণে কাস্টমারও কমেনি। কাস্টমারও জানেন সোনার গয়না এমন একটা জিনিস কোনো কারণেই লোকসান হবে না। কাপড় বা ঘরের অন্য কোনো জিনিস কিনে পরে বিক্রি করতে গেলে পুরনো হিসেবে দাম দেওয়া হয়। গাড়ি যত দিন যাবে তত দাম কমবে। এ জন্য কাস্টমার সব সময় জুয়েলারি দোকান থেকে লাভে সোনা কেনার চেষ্টা করেন। এক বছর ব্যবহার করার পরও ১০ থেকে ২০ শতাংশ লাভ অটোমেটিক চলে আসে। ১০ বছর আগে যারা সোনার গয়না কিনেছেন, এখন যদি বিক্রি করেন তাহলে ১০ গুণ বেশি দাম পাচ্ছেন। এটা কিন্তু বিরাট ব্যাপার। অনেকেই সোনার গয়না কিনছেন মুনাফার জন্য। একই সঙ্গে বিপদাপদে সঙ্গে সঙ্গে দেশের যে কোনো জায়গায় বিক্রি করে দেওয়ার সুবিধাও রয়েছে।

১০ বছর আগে আমাদের জুয়েলারি শিল্পের কোনো নীতিমালা ছিল না। ফলে জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা নানা রকম সমস্যায় পড়তেন। স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও এটা করা সম্ভব হয়নি। এতে বিভিন্ন সময় আমাদের নানা রকম প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয়েছে। ২০১৮ সালে নীতিমালা হওয়ার ফলে ব্যবসায়ীরা সোনা আমদানির নিশ্চয়তা পেয়েছেন। বিগত দিনে আমাদের কাছে থাকা সব সোনা ও ডায়মন্ডের গহনা ভরিপ্রতি ১ হাজার টাকা ট্যাক্স দিয়ে ২০১৯ সালের জুনে আমরা বৈধ করার সুযোগ পেয়েছি। আমাদের ব্যবসায় স্বচ্ছতা এসেছে। পরবর্তীতে আমাদের অনেক ব্যবসায়ী গহনা আমদানিও করেছেন। এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি বসুন্ধরা গ্রুপের গোল্ড রিফাইনারি হচ্ছে। দেশে গোল্ড পাওয়া গেলে আমাদের বিদেশি সোনার ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না। দেশের জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবেন। সরকার ভ্যাট পাবে। আমাদের মর্যাদা আরও বেড়েছে, দেশের জুয়েলারি শিল্পকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন আমাদের মাননীয় প্রেসিডেন্ট ও বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর। গত ৪৮ বছরেও দেশের মানুষের জুয়েলারি শিল্প নিয়ে কোনো ইতিবাচক ধারণা ছিল না। সায়েম সোবহান আনভীর সাহেব দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বেশ আলোচনার মধ্যে রয়েছে দেশের জুয়েলারি শিল্প। দেশের বাইরেও পরিচিত করে তুলেছেন বাজুস ও জুয়েলারি শিল্পকে। এ জন্য প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ। অনেক বিদেশি ব্যবসায়ী বাংলাদেশে যৌথভাবে জুয়েলারি শিল্পে বিনিয়োগ করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সরকারের পাশাপাশি দেশের বেসরকারি খাতের বড় ব্যবসায়ীরাও জানেন দেশে গোল্ড ইন্ডাস্ট্রি হতে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর